• সারাদেশ

    বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ও আজীবন আ’লীগ করেও নৌকার প্রার্থীর মনোনিত তালিকায় নাম নেই আমির হোসেন রেজার

      প্রতিনিধি ২৫ অক্টোবর ২০২১ , ৯:২৪:০৮ অনলাইন সংস্করণ

    আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ থেকে: “১৯৭৩-৭৪ ইং সনে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভিপি গোপাল সাহা-জিএস প্রদীপ রায় সেন্টু প্যানেলের পক্ষে প্রচারের মূল দায়িত্ব পালন করি আমি ও আমার সহকর্মীরা। ছাত্র ইউনিয়নের সাইফুর রহমান সমসু-বেলায়েত প্যানেল ঐ নির্বাচনে জয়লাভ করে। নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলকে বিজয়ী করার লক্ষে ঐ সময়ে শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ছাত্রছাত্রীদের বাসায় গিয়ে ভোট চাইতাম আমি ও আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারন সম্পাদক আকমল আলী মোক্তারের পুত্র সাব্বির আহমদ সোহেল। শহরের নতুন পাড়ায় ছাত্রদের সাথে যোগাযোগের পর রিক্সাযোগে বাসায় ফেরার পথে রিক্সার গতিরোধ করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা আমাদের উপর হামলা করে। আমার নাকে লোহার রডের বারী মেরে আমাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ হামলার ঘটনা জানতে পেরে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ আমাকে প্রথম মহকুমা সদর হাসপাতাল অর্থাৎ তৎকালীন পুরাতন হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করেন। ৩ দিন পর পত্র পত্রিকায় ঘটনার কথা জানতে পেরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ। পরে ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করে মন্ত্রী তার হেলিকপ্টারে তুলে নিয়ে আমাকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। ভর্তির ২ দিনের ব্যবধানে আমাকে দেখতে মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ মহোদয় সহকারে পিজি হাসপাতালে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহোদয়। তিনি পরম মমতায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে সান্তনা দেন। এ সময় আমার সাথে সুনামগঞ্জ শহরের জামতলা নিবাসী ছাত্রলীগ নেতা বশির মিয়া ও আমার ছোট ভাই হাজী জাকির হোসেন শাহীনও ছিল। এই হামলার ঘটনায় মহকুমা ছাত্রলীগ সভাপতি (পরবর্তীতে নিউইয়র্ক আওয়ামীলীগের সভাপতি) নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আমার উপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়নের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবীতে শহরে ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠে। এ আন্দোলন ক্রমশ গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী,সাধারন সম্পাদক শামসুল ইসলাম এখলাছ,পীর মতিউর রহমান,আব্দুল মুকিত চৌধুরী মারুফ ও সাব্বির আহমদসহ আরো অনেকে। পিজি হাসপাতালে ১৫ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর বাড়িতে বেডরেস্টে এসে দেখতে পাই আমার উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। ভাগ্যক্রমে আমার উপর হামলার মামলার আসামীরা আজ আওয়ামীলীগের হর্তাকর্তা সেজে বসে আছে। তাদের প্রেতাত্মারাই ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর তালিকায় আমার নাম পাটায়নি। একথাগুলো নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আমির হোসেন রেজার। ১৫ আগস্টের কর্মসুচি পালন এর ব্যাপারে তিনি বলেন,৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর মুশতাক সরকার আওয়ামীলীগ রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞাসহ জেল জুলুম হুলিয়া চালু করলে আমি আমির হোসেন রেজা,সামাল মিয়া,শাহীন মিয়া,ফারুক আহমদ,আমানুল্লাহ সাকিরুল ও প্রদীপ দাসসহ সকল নেতাকর্মীরা মিলে দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ড,আসবাবপত্র ইত্যাদি নিয়ে আমার বাড়িতে রাখি। অফিসের দারোয়ান ছিল আব্দুল বাছিত। সেনাবাহিনী আব্দুল বাসিতকে ধরে নিয়ে অনেক অত্যাচার করে। অত্যাচার নির্যাতনের পরও সে আমাদের নাম প্রকাশ করেনি। এই সময়েই শফিকুল হক চৌধুরী বাচ্চু,নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী,সাধারন সম্পাদক এখলাছুর রহমান,পীর মতিউর রহমান,আব্দুল মুকিত চৌধুরী মারুফ,মোসাদ্দেক রাজা চৌধুরী,গোপাল সাহাগং আত্মগোপন করেন। কেউ কেউ জার্মান ইটাঁলীসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। আমি দেশের ভেতরে থেকেই আত্মগোপনে চলে যাই। ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে শাহীন বাঙ্গালী,সামাল মিয়া,মুহিত ভট্রাচার্য,শওকত মিয়া,রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু,আমি আমরা কয়েকজন মিলে আমার বাড়িতে থাকা সাইনবোর্ড ও আসবাবপত্রসহ অফিসের সকল জিনিসপত্র এনে নতুন করে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ অফিস পুরাতন কলেজে পূর্বের মতো নতুন করে ঢেলে সাজাই। ঐ সময় জাতির জনকের মৃত্যুবার্ষিকী আসলে জনাব আব্দুল হাই,আব্দুজ জহুর,দিলওয়ার হোসেন,আকমল আলী মোক্তার,আছদ্দর আলী মোক্তার,খলিলুর রহমান এডভোকেট,কাজী বশির উদ্দিন নানু মিয়া,কাদির মিয়া,আবু মিয়া,আয়ুব বখত জগলুল,রশীদ বখত নজরুল,বিজয় তালুকদার বিজু আমরা নিজেরা ১০০ থেকে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় এবং ১ কেজি থেকে ৫ কেজি করে যার যার সামর্থ অনুযায়ী চাল ডাল সংগ্রহ ছাড়াও বাজার কমিটির সভাপতি আফাজ মিয়া বারী মিয়া,মতছিন মিয়াগংদের নিয়ে চাঁদা আদায় ও চাল ডাল পিয়াজ রসুন ইত্যাদি সংগ্রহ করে শহীদ মিনার ও আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে কাঙ্গালী ভোজ করতাম। আমাদের কাঙ্গালী ভোজ চলাকালে পুলিশ ও আর্মীরা এসে আমাদের অনুষ্ঠান বানচাল করে দিত। এসময় জাতির জনকের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করার মতো কোন ইমাম মুয়াযযিন পেতামনা। বিভিন্ন সময় আমরা বাজার মসজিদ,কোর্ট জামে মসজিদ এর ইমাম সাহেবদেরকে জোর করে ধরে এনে মিলাদ পড়াইতাম। তখন আওয়ামীলীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে একদিকে ছিল পুলিশ আর্মি অন্যদিকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল ন্যাপ জাসদ ও ছাত্র ইউনিয়ন। রাজনীতি নিয়ে তাদের সাথে প্রতিদিন আমাদের আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দাঙ্গা হাঙ্গামা লেগেই থাকতো। পুলিশ ও মহকুমা প্রশাসন একতরফাভাবে আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতো। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম এবং বিজয় অর্জনের শেষ ক্যাম্প হিসেবে স্বীকৃত ছিল তাদের বাড়ী ও বাংলো ঘর। তার চাচা এবাদুর রহমান ও মানিক মিয়া ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ৫নং সেক্টরের বালাট সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ মোত্তালিবসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পুরো বাড়িতে তাবু টানিয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ শত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বসবাস করতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হেড কোয়ার্টার ছিল তাদের বাংলো ঘর ও পার্শ্ববর্তী খাদ্য গুদামের অফিস ঘর। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকতো গুদামঘরে। মুক্তিযোদ্ধারা যত আলবদর রাজাকারদের ধরে আনতেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে শাস্তি দেয়া হতো তাদের বাংলো ঘরের দক্ষিণে সুরমা নদীর পাড়ে। পরে পাঠানো হতো মহকুমা কারাগারে। এসময় বর্তমান আওয়ামীলীগের অনেক বড় নেতাদের বাপ চাচাদেরকে পিটিয়ে জেলহাজতে প্রেরণের ঘটনা তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী তাদের বাড়িঘর জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে ছাই ভস্ম করে দিয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর তার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবাদুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ড গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধিত্ব করেন।…

    আরও খবর

    Sponsered content