প্রতিনিধি ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৭:২৩:২৫ অনলাইন সংস্করণ
অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে স্কুল কলেজ। দেড় বছর বন্ধ থাকার পর কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামতের আলোকেই গতকাল শুক্রবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে আসা মতামতের ভিত্তিতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্কুল এবং কলেজও খুলছে ১২ সেপ্টেম্বর থেকেই। শিক্ষামন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, স্কুল কলেজ যেখানে খোলার সিদ্ধান্ত এসেছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খুলতে আর বাধা থাকছে না।
এদিকে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত হলেও সব শ্রেণীর সব ক্লাস একই সাথে শুরু হচ্ছে না। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আরো বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে শর্ত দেয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও শুরুতে একসাথে সব শ্রেণীর ক্লাস হবে না। ধাপে ধাপে বিভিন্ন শ্রেণীর ক্লাস হবে। বিশেষ করে চলতি বছরের বোর্ড পরীক্ষা অর্থাৎ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং আগামী বছরের পরীক্ষার্থীদের হয়তো প্রতিদিনই ক্লাস থাকবে। বাকি শ্রেণীর ক্লাস প্রথম দিকে প্রতি সপ্তাহে এক দিন করে হবে। পরে অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। সূত্র জানায়, শ্রেণিকক্ষে ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইন ও টেলিভিশনের ক্লাসও চলমান থাকবে। গতকাল চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নিজেরও নির্দেশনা ছিল।
গত কয়েক দিন আগে সচিবদের সাথে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও জাতীয় সংসদে তিনি শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে টেকনিক্যাল কমিটিও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা এলো। অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী নিজেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে স্কুল-কলেজ খোলার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে মত দেয় করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা গণমাধ্যমকে জানান, করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ পজিটিভ হার থেকে ৭০ শতাংশ কমে যাওয়া এবং ধীরে ধীরে করোনার টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া সাপেক্ষে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি।
গত ২৬ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সভায় পরিকল্পনা করা হয়, টিকা দেয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী ১৭ অক্টোবরের পর থেকে খুলতে পারবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, ১৭ অক্টোবরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটি আলোচনাসাপেক্ষে পরিবর্তিত হতে পারে। মানে এগিয়ে আসতে পারে। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাবিষয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়।
ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যেই স্কুল-কলেজগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও সশরীরে পাঠদানের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সশরীরে পাঠদান করানো যাবে। সূত্র জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শ্রেণিকক্ষে তিনটি নির্দেশনা পালন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ সাজাতে হবে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, ৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী বসা এবং ৫ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যরে বেঞ্চে দু’জন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করা এবং শ্রেণিকক্ষে সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।