• আন্তর্জাতিক

    পুলিশি চাপে তটস্থ কাশ্মিরের সাংবাদিকরা, বিবিসির অফিসকে গোয়েন্দা সদর দফতরে পরিণত!

      প্রতিনিধি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৪:৫৩:৪৬ অনলাইন সংস্করণ

    বাড়িতে হানা, থানায় ডেকে দীর্ঘ জেরা, পুলিশি চাপে তটস্থ কাশ্মিরের সাংবাদিকরা - ছবি : সংগৃহীত

    পুলিশ-প্রশাসনের চাপে আতঙ্ক বাড়ছে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের সাংবাদিকদের মধ্যে। বাড়িতে যখন-তখন হানা দিয়ে থানায় তুলে নিয়ে হেনস্থা করা বা দীর্ঘ সময় জেরা করা তো রয়েছেই, সাথে বেড়েছে ইউএপিএ-র মতো কড়া আইনে মামলা দেয়ার ঘটনাও। এমনকি সম্প্রতি শ্রীনগরে বিবিসির দফতরটিকে গোয়েন্দা বিভাগের সদর দফতরে পরিণত করার ঘটনাও ঘটেছে।

    এর মধ্যেই গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে হিলাল মির, শাহ আব্বাস, শওকত মোত্তা ও আজহার কাদরি নামে চার সাংবাদিকের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। কয়েক ঘণ্টার তল্লাশিতে তাদের ল্যাপটপ, ক্যামেরা, কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক এবং কাজের সূত্রে সফর-সংক্রান্ত নানা নথি বাজেয়াপ্ত করে তারা। ওই সাংবাদিকেরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাথে যুক্ত। এর পরে ওই চার সাংবাদিককে থানায় তলব করা হয় এবং রাত পর্যন্ত দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাদের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলেও পরের দিন সকালে ফের হাজিরা দেয়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ।

    এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ উপত্যকার সাংবাদিকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরেই কাশ্মিরের মাটিতে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অতীতে সেনা, পুলিশ, রাষ্ট্র, উগ্রবাদী- তাদের ছেড়ে কথা বলেনি কেউই। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকে পুলিশি হেনস্থা ও হুমকি বহু গুণ বেড়েছে বলে অভিযোগ একাংশের। ধরপাকড়, মারধর, হেনস্থা এমনকি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাও করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। কাশ্মির প্রেস ক্লাবের এক প্রবীণ সদস্য বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের জেরা, তল্লাশি, অত্যাচার যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার আমাদের কাজকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।’ ‘গ্রেটার কাশ্মির’ ও ‘কাশ্মির রিডার’- এই দুই ইংরেজি সংবাদপত্রের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের অতীতে এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) শুধু তলবই করেনি, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাও করেছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য জেরার মুখেও পড়তে হয় তাদের।

    পুলিশের দাবি, ‘কাশ্মিরফাইটওয়ার্ডপ্রেস’ নামে একটি ব্লগের সাথে জড়িত থাকায় হিলাল মির, শাহ আব্বাস, শওকত মোত্তা ও আজহার কাদরিদের জেরা করা হয়। ওই ব্লগটি প্রকাশিত হয় পাকিস্তান থেকে। ২০১৮ সালে সাংবাদিক সুজাত বুখারির হত্যার পর থেকে পুলিশের নজরে ছিল ব্লগটি। বুখারির হত্যার আগে তার বিরুদ্ধে এই ব্লগে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। আইনজীবী ও টিভি প্যানেলিস্ট বাবর কাদরি তার নিজের বাড়িতে গুলিতে খুন হওয়ার আগেও এই ব্লগে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। কাশ্মীরে ‘শান্তি ও স্থিতি’ নষ্ট হতে পারে এমন কিছু পোস্ট এই ব্লগে আপলোড করায় গত বছর ইউএপিএ-তে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়।

    পুলিশের বক্তব্য, তদন্তে উঠে এসেছে এই ব্লগের যে অন্যতম মাথা, তার সাথে সংযোগ রয়েছে মির হিলাল, শাহ আব্বাস, আজহার কাদরি ও শওকত মোত্তার। এক বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, ‘সংবাদিকদের হেনস্থা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। যখন কোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে তদন্ত হয়, তখন কিছু আইনি পদ্ধতি মেনে এগোতে হয়। সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুরোধ, ভুল তথ্য ও ব্যাখ্যা প্রচার করবেন না যাতে তদন্তের কাজে বিঘ্ন ঘটে। প্রমাণ জোগাড় হলে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’

    সম্প্রতি শ্রীনগরে বিবিসির একটি অফিসকে গোয়েন্দা বিভাগের সদর দফতরে পরিণত করা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সাংবাদিকেরা। কাশ্মিরে কাজ করতে যাওয়া বহু দেশী, বিদেশী সাংবাদিক এই অফিসটিতে থাকতেন। শ্রীনগর প্রেস এনক্লেভের ভিতরে অবস্থিত এই অফিসটি সরকারের নোটিস পেয়ে খালি করে দেয় বিবিসি। তার এক সপ্তাহের মধ্যে এখানে গোয়েন্দা বিভাগের অফিস খোলে সরকার।
    সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

    আরও খবর

    Sponsered content