প্রতিনিধি ১১ আগস্ট ২০২১ , ৫:২৫:২৭ অনলাইন সংস্করণ
শাল্লা প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের বহুল আলোচিত শাল্লা থানার এসআই শাহ আলীকে পেটানোর ঘটনা নিয়ে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)র সাথে উপজেলা যুবলীগ নেতা অরিন্দম চৌধুরী অপুর মোবাইলে কথোপকথনের ফাঁসকৃত অডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। দেশের প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় তা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে যুবলীগ নেতা অপুর মোবাইল থেকে করা কলে শাল্লা থানার ওসি নুর আলমের হুবহু কন্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘অপু দা। প্রতিউত্তরে অরিন্দম চৌধুরী অপুর হুবুহু কন্ঠে বলতে শোনা যায়, জি ভাই, কোন জায়গায় আছেন এখন? ওসি বলেন, আমি এই যে রওয়ানা দিছি। তখন অপু বলেন, ‘কথা কইলাইন (বলেন) তাইলে দাদার সাথে। তখন দাদা সম্বোধনকারী জনৈক ব্যক্তি ওসিকে বলেন, আদাব। ওসি বলেন, আদাব দাদা। জনৈক ব্যক্তি বলেন, আপনি যেটা বলছিলেন, ওই যে শাহিদ আলীর (শাল্লা সদরে অবস্থিত শাহিদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়) পিছে আপনার দারোগারে মন-ইচ্ছামতো দিছি। ওসি বলেন, হুম। জনৈক ব্যক্তি বলেন, দুইজন লোক আসায় বাইচ্ছা গেছে। নাইলে জানে শেষ করে দিতাম। আমরার দিকে একটু খেয়াল করইন যে, আমরার যেন কোন সমস্যা না হয়।’
অডিও ক্লিপের বক্তব্য অনুযায়ী ওসির নির্দেশেই এসআই শাহ আলীর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফাঁস হওয়া রেকর্ডে কে ওই দাদা? এই ব্যাপারটি এখনো রহস্যাবৃত্ত। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে এর সত্যতা বের হবে বলে মনে করেন শাল্লার সচেতন মহল।
এ নিয়ে শাল্লাসহ সুনামগঞ্জ জেলায় শুরু হয়েছে তোলপাড়। ফাঁস হওয়া অডিওতে আহত এসআইকে প্রাণে মারের ইচ্ছা ছিল বলেও হামলাকারীদের বলতে শোনা যায়। ঘটনার সময় হঠাৎ করেই দুজন লোক আসায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ফাঁস হওয়া ২৮ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপে শাল্লা থানার ওসি নূরে আলমের সাথে কথা বলার সময় ঘটনা নিয়ে ওই যুবলীগ নেতা তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন। এছাড়াও আরো ৩টি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। যে গুলোতে ওই যুবলীগ নেতা কর্তৃক ওসিকে টাকা দেয়ার কথাও শোনা যায়।
ফাঁস হওয়া অন্য একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, অপু ওসিকে বলছেন, ভাই কিছু খরচ পাঠাইছলাম পাইছইন নি? ওসি সম্মতিসূচক প্রতিউত্তর দিলে অপু ওসিকে বলেন, ভাই কালকে থানায় আপনার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসবো।
অডিও ক্লিপের বিষয়ে শাল্লা থানার ওসি নূরে আলম বলেন, আমি কিছুই জানিনা। এসব মিথ্যা। আমার কারো সাথেই এমন কথাবার্তা হয়নি।
এসআই শাহ আলী বলেন, অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এমনটি হয়ে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক।
ওসি নুরে আলমের সাথে বিরোধ ছিল কিনা জানতে চাইলে শাহ আলী বলেন, একটা বিষয়ে মতবিরোধ ছিল। সেটা হলো ‘ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কিত গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠাতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আসে। আমি থানা এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি ও গণজরিপ করে ড. জয়া সেনগুপ্তা স্যারকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিন স্যারকে দ্বিতীয় অবস্থান দেখিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করি কিন্তু ওসি সাহেব আমাকে ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন নামে একজনকে সর্বাগ্রে রেখে প্রতিবেদন দিতে বলেন।
আমি এমন মিথ্যা প্রতিবেদন দিতে রাজী হইনি। এ নিয়ে তিনি আমার উপর মনঃক্ষুণ্ন ছিলেন।
এদিকে কেন্দ্রীয় এক যুবলীগ নেতার সাথেও অপু’র মোবাইলে কথোপকথনের দুইটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। অডিও ক্লিপে অপুকে ওই কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা স্থানীয় রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কিত বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে শোনা যায়। এছাড়া ওসি’র সাথে মোবাইলে কথোপকথনের বিষয়টি অপুকে অবহিত করেন তিনি।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লায় গত ১২ জুলাই দিবাগত রাতে নানা অপকর্মের হোতা যুবলীগ নেতা অপু বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের এসআই শাহ আলী গুরুতর আহত হন। রাতের আঁধারে শাল্লা থানা সংলগ্ন রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। এসআই শাহ আলী সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় যুবলীগ নেতা অরিন্দম চৌধুরী অপুর নেতৃত্বে তার বাহিনীর ৭-৮ জন লোক দা, লোহার রড, লোহার পাইপ নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। সন্ত্রাসী হামলায় শাহ আলী গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে চিৎকার করতে থাকেন। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজনসহ থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা এসে আহত এসআইকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ঘটনার পর শাল্লা থানা পুলিশ কথিত যুবলীগ নেতা নাইন্দা গ্রামের অরিন্দম চৌধুরী অপু, ঘুঙ্গিয়ারগাঁও গ্রামের রতন দাসকে গ্রেফতার করে। গত ৮ আগস্ট রোববার সুনামগঞ্জ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান যুবলীগ নেতা অপু।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রদায়িকতাকে পূঁজি করে যুবলীগ নেতা অপু এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দুদের বাড়ীতে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল মানুষের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টায় মেতে ওঠে অপু। বেপরোয়া অপু’র বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে সাম্প্রদায়িকতার ধোয়া তোলে করা হয় হয়রানি। ফলে তার অত্যাচার নিরবে সহ্য করছে শাল্লার মানুষ। যুবলীগ নেতা অপু এর আগেও শাল্লা উপজেলার ইউএনও’র উপর হামলার ঘটনার এজাহারভুক্ত আসামী ছিল। দলীয় প্রভাব ও সাম্প্রদায়িকতাকে পূঁজি করে সে ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।