প্রতিনিধি ১২ আগস্ট ২০২১ , ৭:৫৪:৩০ অনলাইন সংস্করণ
রূপসায় প্রশাসনের ভূমিকা কী ছিল?
খুলনায় রুপসা উপজেলার শিয়ালি গ্রামে মন্দির, হিন্দু মালিকানাধীন দোকানপাট এবং বসতভিটায় হামলার ঘটনা ঘটে গত শনিবার ৭ই অগাষ্ট। গ্রামটির বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, সেদিন তাদের বাড়িতে বাড়িতে হামলার ঘটনার সময় কয়েকজন পুলিশ সেখানে এসেছিল, কিন্তু হামলা ঠেকাতে পুলিশের কোন ভূমিকা তারা দেখেননি।
এরআগে দু’দিন ধরে সেখানে উত্তেজনা চললেও প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে আগাম ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি বলে তাদের অভিযোগ।
গ্রামটিতে এখন পুলিশ পাহারা দেয়া হলেও সেখানে হিন্দুদের মধ্যে আতংক রয়েছে। ওই গ্রামের একজন বাসিন্দা সন্ধ্যা মল্লিক বলেছেন, এখন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় বেড়েছে।
‘এই ঘটনায় আমরা মনোবল হারিয়ে ফেলছি। আমরা নিরাপত্তা পাই না। আমরা কিভাবে জীবন যাপন করবো-জীবনের নিরাপত্তা নেইতো’ বলেন সন্ধ্যা মল্লিক।
এই গ্রামের পাশের মুসলিম অধ্যূষিত গ্রাম থেকে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করে সুনির্দিষ্ট বেশ কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। ঘটনার পর সন্দেহভাজন ১১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তাদের বুধবার দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এরপরও সেখানে সংখ্যালঘুদের মধ্যে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেছেন, হামলার ঘটনার আগেই স্থানীয় পুলিশ দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দিয়েছিল। তারপরও ঘটনা ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে তিনি দাবি করেন। ‘পুলিশ সেখানে তাৎক্ষণিক অ্যাকশন নিয়েছে’ বলেন খান।
তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার ব্যাপারে তিনি এখনও আনুষ্ঠানিক কোন রিপোর্ট পাননি। তবে তিনি যা শুনেছেন তার ভিত্তিতে ঘটনা সম্পর্কে তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘এশার নামাজের সময় মসজিদের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছিল, তখন বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। এই নিয়ে ঘটনা ঘটেছিল-এটা তাৎক্ষণিকভাবেই মিমাংসিত হয়ে যায়।’
‘কয়েকটা উগ্র ছেলে মন্দিরের ভেতরে গিয়ে মন্দিরে কিছুটা বিনষ্ট করেছে। ‘কয়েকটা দোকানও ভাঙচুর করেছে। সঙ্গে সঙ্গেই এর মিমাংসা হয়েছে এবং পুলিশ অ্যাকশন নিয়েছে’ বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঐক্য পরিষদ কী অভিযোগ করছে?
খুলনার রুপসার এই ঘটনা ছাড়াও সাম্প্রতি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হিন্দুদের ওপর হামলা এবং পাটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রাখাইনদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদ।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে সংগঠনটি বুধবার খুলনা, ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন করেছে। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত বলেছেন, সরকার বা প্রশাসনের ব্যার্থতার কারণেই সম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে।
‘এই সরকারকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বান্ধব বলে মনে করা হয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, হামলার আগে তা প্রতিরোধে সরকার বা প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দল কারও কোন ভূমিকা নাই’ বলেন দাশগুপ্ত।
অভিযোগ নিয়ে কী বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এসব বক্তব্য বা ব্যর্থতার অভিযোগ মানতে রাজি নন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার কোন ঘটনা ঘটছে না বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেছেন, কোনো এলাকায় স্থানীয়ভাবে হামলার কোন ঘটনা ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। খান বলেন, কোন মুসলমান সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করে না। ‘হিন্দুতো বটেই, খৃস্টান এবং বৌদ্ধ- কারও ওপর কেউ অত্যাচার করে না,’ তিনি বলেন।
কোন ঘটনা পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে এলে সাথে সাথেই তাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি দাবী করেন।
সুনামগঞ্জের যুবক এখনো আটক
তবে হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেছেন, গত মার্চ মাসেই সুনামগঞ্জের একটি গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে এবং মন্দিরে হামলার ঘটনা ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছিল।
কিন্তু সেই ঘটনায় ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযরোগে আটক হিন্দু যুবকের এখনও মুক্তি হয় নি। এটিকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন তারা।
সংগঠনটির বক্তব্য হচ্ছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নির্যতন বন্ধ না হওয়ায় তারা তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবেন।
সূত্র : বিবিসি