• অনিয়ম / দুর্নীতি

    সিলেট শামসুদ্দীন হাসপাতালে বেপরোয়া নেহারি রাণী দাস সিন্ডিকেট

      প্রতিনিধি ৮ জুলাই ২০২১ , ৯:২৫:২২ অনলাইন সংস্করণ

    খলিলুর রহমান, সিলেট পোস্টঃ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার রূদ্ধশ্বাস বেড়াজালে বন্দী সিলেট সদর শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতাল। স্বাস্থ্যসেবার বদলে এ হাসপাতালকে ট্রেড সেন্টার বানিয়ে ফেলেছে অসাধু নেহারি রাণী সিন্ডিকেট। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে এ সিন্ডিকেট কামাই করে চলেছে লাখ লাখ টাকা। হাসপাতালের কর্তাব্যক্তি, নার্স’, কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্য থেকে কতিপয় সদস্য মিলেই গড়ে ওঠেছে এ সিন্ডিকেট। অর্থপিপাসু এ সিন্ডিকেটের প্রধান হচ্ছেন ওই হাসপাতালের উপ-সেবা তত্বাবধায়ক নেহারি রাণী দাস। অজ্ঞাত কারণে কোন প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তার বিরুদ্ধে। উল্টো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে প্রতিবাদী স্টাফদের বিরুদ্ধে। ফলে হাসপাতালটি মগের মোল্লাকে পরিনতি হয়ে গেছে।

    সিলেট সদর শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতাল বৈশ্বিক মহামারীতে সিলেট বিভাগের একমাত্র করোনা আইসোলেশন সেন্টার। সিলেট বিভাগের করোনা রোগীদের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালই।
    কিন্তু শামসুদ্দীন হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করলে মনে হয় না এটা করোনা নিরাময় হাসপাতাল। মনে হয় এটা একটা রমরমা ট্রেড সেন্টার। ব্যবসায়িক কারণে করোনা নিরাময়ের বদলে এই হাসপাতালে করোনার চাষ করে তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়াই হচ্ছে। হাসপাতালের সেবা বিভাগে গজে ওঠেছে অনিয়ম ও দূর্নীতির রকমফের গাছ ও ডালপালা।
    হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের এটেন্ডেন্টরা একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন। চিকিৎসার বদলে রোগী ও এটেন্ডেন্টদের রক্ত চুষে খায় ওই হাসপাতালে থাকা নেহারী সিন্ডিকেট।
    অভিযোগে প্রকাশ, এই হাসপাতালে করোনা আইসিইউ ওয়ার্ড চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে আইসিইউ’র সিট ভাড়া নামে সম্পূর্ণ বেআইনী পন্থায় ২ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছিল। নেহারি সিন্ডিকেট এই টাকা নিলেও এর বিপরীতে কোন রসিদ দেওয়া হতো না। এ টাকা দিতে প্রত্যেক রোগী ও তার স্বজনদের বাধ্য করা হতো। পরে তা’ ভাগ করে নিতো নেহারি সিন্ডিকেট সদস্য নার্স ব্রাদার ও প্যথোলজিষ্টরা। আইসিইউ’র সিট ভাড়ার নামে আদায়কৃত টাকার মধ্যে দেড় লাখ টাকা জমা ছিলো একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের কাছে। কিন্তু গত ২০২০ সিলের শেষদিকে ওই স্টাফ নার্সের কাছ থেকে এ টাকা নিয়ে যান হাসপাতালের উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক ও সিন্ডিকেট প্রধান নেহারি রাণী দাশ। এর পর থেকে ৬ মাস যাবৎ ওই টাকার আর কোন হদিস মিলছিল না। এ নিয়ে ঝগড়াঝাটিও কম হয়নি। এ বছরের এপ্রিল মাসে সিলেট পোস্ট (sylhet post) সোস্যাল মিডিয়ায়
    একটি রিপোর্ট প্রকাশ করলে তা’ লুফে নেয় কয়েকটি অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়া। ছড়িয়ে পড়ে এ খবর সর্বত্র।
    টনক নড়ে উর্ধতন মহলের। তখন থেকে বেআইনী আইসিইউ ভাড়া বন্ধ করা হলেও অনিয়মের অপরাধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সিন্ডিকেট প্রধান নেহারি রাণী দাশের বিরুদ্ধে। ফলে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন নেহারি। তথ্যপাচার সন্দেহের ক্ষমতা বলে তৎময়ে দুইজন স্টাফ নার্সকে অপসারন করে দেন তিনি।
    রাজনৈতিক হোক আর যে কোন অজ্ঞাত কারণেই হোক সরকারের উপরমহলে লম্বা হাত রয়েছে নেহারি রাণী দাশের। তাই তার অনিয়ম-আত্মসাতের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। ফলে বহাল তবিয়তে চেয়ার জুড়ে রয়েছেন হাসপাতালের ট্রেড সিন্ডিকেট প্রধান নেহারি রাণী দাস।
    আইসিইউতে সিটভাড়া দুই হাজার টাকা নেওয়া হলেও এই ওয়ার্ডে সেবা বলতে তেমন কিছু ছিল না। আইসিইউ ওয়ার্ডে অবস্থা এমন, যেখানে রোগী দুরের কথা কোন মানুষই টিকে থাকা দায় । ওয়ার্ডে এসি আছে ঠিকই কিন্তু নামে এসি। কার্যত কিছুই নয়। এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে স্বাস্থ্য সামগ্রীরও তীব্র সংকট।
    সেবার ক্ষত্রে রোগাীদের অভিযোগ-এতো বড় আইসিইউ ওয়ার্ডে ডিউটি করেন মাত্র একজন জুনিয়র স্টাফ নার্স। ভুলেও সিনিয়রদের পা পড়ে না আইসিইউ ওয়ার্ডে। একজন রোগীর বিছানা চাদর পাল্টানো হয় সপ্তাহ ১০ দিন পর। নার্সদের সাথে ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না রোগীর স্বজনরা।
    অভিযোগে আরো প্রকাশ- হাসপাতালের খাবারের তালিকায় ভূয়া রেজিষ্ট্রিশন দেখিয়ে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগীর নামে খাবারের বিল আত্মসাত করে থাকে ওই নেহারি সিন্ডিকেট।
    সম্প্রতি স্টাফ নার্সদের সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষনা হলে এই প্রণোদনা প্রাপ্তিতে অনৈতিক হস্তক্ষেপ করে নেহারি রাণী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটকে চাঁদা না দিয়ে প্রণোদনা টাকা গ্রহণ করতে পারছেন না স্টাফনার্স ও সেবা সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে হাসপাতালের নার্স ও স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) থেকে এ ক্ষোভ ও উত্তেজনা তীব্র আকার ধারনা করেছে। ফলে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
    নেহারি সিন্ডিকেট কর্তৃক ২ হাজার টাকা করে বেআইনি আইসিইউ সিট ভাড়া গ্রহণ এবং টাকা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের সত্যতা গতএপ্রিলের শেষের দিকে স্বীকার করে আশু সমাধানের কথা বলেছিলেন শহীদ শামসুদ্দীন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র। কিন্তু পরবর্তী কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার কাছ থেকে জানা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি স্টাফ নার্সদের প্রণোদনা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের বিষয়ে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত একাধিকবার তাঁর সেলফোনে ((০১৭১৬৫৫১২১৪) কল করলে তিনি সাংবাদিকের মোবাইল ফোন (০১৩০৪২৮৭৪৬৪) রিসিভ করেন নি।
    অভিযোগের ব্যাপারে শহীদ শামসুদ্দীন আহমদ হাসপাতালের উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক নেহারি রাণী দাশ-এর মুঠোফোনে (০১৭১২২৪৯৪৪২) বুধবার রাতে কল করা হলে তিনি কাজে ব্যস্ত এবং সাংবাদিকের সাথে কথা বলার সময় তার নেই বলে ফোন কেটে দেন।
    এ বিষয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু রঞ্জন দাসের সাথে সেলফোনে দীর্ঘ আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। এসময় তিনি শামসুদ্দীন আহমদ হাসপাতালে বেআইনী ভাবে ২হাজার টাকা করে আইসিইউ সিট ভাড়া গ্রহণ ও টাকা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন- অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ গত মে মাস থেকে শামসুদ্দীন হাসপাতালে আইসিইউ সিট ভাড়া গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রণোদনা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান তিনি।

    আরও খবর

    Sponsered content