প্রতিনিধি ১৭ জুলাই ২০২১ , ৭:০৯:৪৯ অনলাইন সংস্করণ
মোঃ বদরুজ্জামান বদরুল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জে দিরাইয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে অসহায় পরিবারের জন্য নির্মিত ঘরে নিম্নমানের ইট,বালু ও অন্যান সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে নির্মাণের ৭ মাসের মধ্যেই মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে ধরেছে ফাটল।
নিজ খরচে এসব ঘর মেরামত করছেন উপকারভোগীরা। সরজমিন পরিদর্শন কালে ভুক্তভোগীরা এসব ভাটি বাংলা ডটকম কে জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্পে দিরাইয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে সরকার। এরইমধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি ঘরের ফাটল দেখা দিয়েছে। ৩৯৪ বর্গফুটের এসব ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ পচাত্তর হাজার টাকা করে। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ। সেই সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর এবং বাথরুম।
তবে অপরিকল্পিত ঘর নির্মাণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। দিরাই উপজেলার ৩নং রাজানগর ইউনিয়নের রন্নারচর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন- প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ভয় হয় কখন ভেঙে পড়ে। ঘরে রড দেওয়া হয়নি। বাতাস এলে ঘর নড়ে। আমরা আতঙ্কে আছি।’
এদিকে নতুন ঘরের দেয়াল ফেটে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরও কয়েকজন বাসিন্দা।
গ্রামের মরিয়ম বিবি বলেন, অসহায় হওয়াতে আমরা অনেকেই ঘর পেয়েছিলাম। কিন্তু টয়লেট ভাঙা, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ঘরের দেয়ালের একাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে। বাধ্য হয়ে মিস্ত্রি ডেকে ঘর ও টয়লেট ঠিক করেছি। পাশাপাশি ঘরের দেয়ালের আস্তর, ঘরের নিচ ঢালাই করে মেরামত ও রঙ করেছি। নিজ উদ্যোগে বিদ্যুতের মিটার স্থাপন করেছি। যদি সবই নিজেদের জোড়াতালি দিতে হয় তাহলে তারা কেমন কাজ করলেন?
দিরাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘরগুলো পরিদর্শন করে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে, ঘরগুলোর ত্রুটি নিয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন ভাটি বাংলার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এবিষয়ে দিরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন- ‘প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ঘর তদারকি করে বড় ধরনের কোনও দুর্নীতি পাওয়া যায়নি! জেলা প্রশাসনের টিম বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি পেয়ে ঘরগুলো মেরামত করেছে। বড় ধরনের কোনও ত্রুটি পাইনি আমরা।
তিনি বলেন, ‘নতুন ঘর নির্মাণের পর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এসব ছোটখাটো সমস্যা নিজেদের সুবিধার্থে মেরামত করে নেওয়া প্রয়োজন। বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিলে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সমাধান করে দেওয়া হচ্ছে।
দিরাই এলাকা বন্যাকবলিত, এসব এলাকার মাটি সব সময় নরম থাকে। ফলে এখানে ঘর নির্মাণের পর একটু সমস্যা দেখা দেয়। এখানেও তাই হয়েছে।
‘তদারকির সময় অনেক উপকারভোগী বলেছেন, ঘর দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু দরজা ভালোভাবে লাগানো যায় না। আমরা বলেছি, ঘরে যেহেতু নিজেরাই বসবাস করছেন, সেহেতু ছোট কাজগুলো নিজেদের সমাধান করে নেওয়া ভালো। বড় সমস্যা দেখা দিলে আমাদের নজরে আসার পরপরই সমাধান করে দিচ্ছি। এজন্য প্রতিটি ঘরে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ পচাত্তর হাজার টাকা।