• অনিয়ম / দুর্নীতি

    দিরাইয়ে অফিসের বারান্দায় শিশুর জন্ম! হতবাক দিরাইবাসী, দায় নিবে কে?

      প্রতিনিধি ২৭ জুলাই ২০২১ , ১২:০৫:৩৪ অনলাইন সংস্করণ

    মোঃ বদরুজ্জামান বদরুল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালের মাত্র ৫০ গজ দূরে নির্বাচনী অফিসের বারান্দায় একজন মা নবজাতকের জন্ম দেওয়ার ঘটনা ইতিমধ্যে সোশ্যাল  মিডিয়ায় কল্যাণে ভাইরাল হয়েছে।
    বিস্ময়ে হতবাক দিরাই উপজেলাবাসী সহ প্রত্যেক বিবেকবান মানুষ। নেটিজেনেরা নানান মন্তব্যে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের এই অমার্জনীয় অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। শতশত ফেসবুক ব্যবহারকারী তুলে ধরছেন দিরাই উপজেলা সদর হাসপাতালের ডাক্তারদের অন ডিউটি টাইমে প্রাইভেট রোগী দেখা, বাজে ব্যবহার ও চিকিৎসা না দিয়ে সিলেটে রেফার করে দেওয়া এবং হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থাকা, আবার কেউ কেউ নিম্নমানের খাবার সরবারাহের অভিযোগও যোগ করছেন।
    ২২ জুলাই ১১-১০ মিনিটের সময় প্রসব ব্যাথা-বেদনায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে  হাসপাতালে আসেন দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ধল কুতুব গ্রামের বাসিন্দা রুবেল মিয়া (৩০)। তিনি হাসপাতালে ডেলিভারির জন্যে স্ত্রীকে ভর্তি করতে ব্যার্থ হয়ে সিলেটের যাওয়ার প্রস্তুতিকালে হাসপাতালের গেইটের পাশের বিল্ডিংয়েই উনার স্ত্রী নবজাতকের জন্ম দেন।
    দৈনিক ভাটি বাংলা ডটকম এর পাঠকদের জন্য সেদিনের ঘটনা রুবেল মিয়ার বর্ণনায় হুবহু তুলে ধরা হলো।
    বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টা ১০ মিনিটের সময় আমার স্ত্রী রেসমিনা বেগম (আসমা) কে নিয়ে আমি রুবেল মিয়া(৩০) দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। সেখানে কোনো ডাক্তার না পেয়ে বাধ্য হয়ে ডাক্তার মনি রানী তালুকদারের বাসায় যাই। আমার স্ত্রীকে দেখে তিনি পেস্ক্রিপশনে অনেক ঔষধ লিখে আমাকে জানান মা এবং বাচ্চার অবস্থা ভাল নেই আপনারা তাড়াতাড়ি সিলেট যান। আপনার সন্তান ও স্ত্রীকে বাচানোই যাবে কিনা বলা যাচ্ছেনা! সেখান থেকে বের হয়ে আমার স্ত্রীর অবস্থা খুব শোচনীয় হলে দিরাই হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের ২য় তলায় ডেলিভারি রুমে যাই সেখানে অন্য একটি ডেলিভারি তখন চলছিলো। দায়িত্বে থাকা নার্স ও মহিলা ডাক্তার আমাদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে জোরপূর্বক চলে আসতে বাধ্য করেন। আমি দরিদ্র হোটেল শ্রমিক সিলেট যাওয়ার সামর্থ্য নেই বললেও এবং মনি রানী তালুকদারের পেস্ক্রিপশন দেখালে উনারা বলেন রোগীর অবস্থা বেশ খারাপ সিলেট নিয়ে যান! রোগীর এতো দুরবস্থার মাঝে কিভাবে নিয়ে যাব প্রশ্ন করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা বলেন অনেক সময় আছে সিলেট যেতে পারবেন! তাদের স্ববিরোধী কথাবার্তা ও আমাদের ১ম সন্তান এবং স্ত্রীর অবস্থা বিবেচনায় অনেকটা নিরুপায় হয়ে হাসপাতাল থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে এ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে উঠতে যাব এমন সময় হাসপাতালের গেইটের পাশের বিল্ডিংয়ে (সাবরেজিস্টার ও নির্বাচনী অফিসের) বারান্দায়  নিয়ে যাই এবং আমার মা ও অন্য একজন মহিলা রোগীর সাথের বয়স্ক মহিলাকে কাকুতি মিনতি করে নিয়ে এসে ডেলিভারি করাই খোলা বারান্দায়, আমার প্রথম সন্তানের জন্ম এভাবে হবে ভাবতেই ঘা শিউরে ওঠে। সরকারি হাসপাতাল থাকার পরেও ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলায় সরকারি অফিসের বারান্দায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে আমার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছে, আমি চাইনা আর কোন অসহায় বাবা যেনো এইভাবে স্ত্রী সন্তান নিয়ে অবহেলা, লাঞ্চনা ও অর্থলোভী কসাই ডাক্তারদের খারাপ ব্যবহার শিকার হতে না হয়।
    রুবেল মিয়া জানান বর্তমানে মা এবং নবজাতক শিশু সুস্থ আছেন। চিকিৎসকদের এমন অমানবিক আচরণ সত্যই দুঃখজনক। আমি এসব ডাক্তারের বিচার চাই।
    ডাক্তারদের দায় ছাড়া গোছের বক্তব্য!
    এ ব্যাপারে জানতে ডা. মনি রানীর ফোনে বারবার কল দিলে তিনি রিসিভ না করে সংযোগ বিচ্চিন্ন করে দেন।
    দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. স্বাধীন কুমার দাস জানান, আমি  ইমারজেন্সির রেজিস্টারে আসমা নামে কোন রোগীর নাম পাইনি, রেফার ফরমও পাইনি। তারা হয়ত কোন ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েছিলেন।
    সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইলেও নির্লিপ্ত জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন!
    দিরাই উপজেলাবাসী সরকারি হাসপাতালের অবহেলা ও অপচিকিৎসা থেকে কবে মুক্তি পাবে এ প্রশ্ন সাধারণত মানুষের।

    আরও খবর

    Sponsered content