প্রতিনিধি ৯ জুন ২০২১ , ১০:১৪:০৬ অনলাইন সংস্করণ
সেলিম মাহবুব, ছাতকঃ সারা দেশের অভুতপূর্ণ উন্নয়নের সাথে ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের বিষয়টি বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে অত্র অঞ্চলের আপামর জনসাধারণ মনে করছেন। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে- এমন প্রত্যাশায় এখন প্রহর গুনছেন ছাতক-দোয়ারাসহ অত্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষ । বিজ্ঞজনদের মতে, সিলেট-ছাতক রেল লাইন জেলা সদর সুনামগঞ্জ হয়ে তা মোহনগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত হলে রাজধানী ঢাকার সাথে রেলওয়ের একটি বৃত্তাকার পথ সৃষ্টি হবে এবং ভাঁটি অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে ও পাশাপাশি দেশের আরো একটি জেলা শহর রেল যোগাযোগের উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসবে। এ লক্ষ্যে সিলেট-ছাতক রেললাইনকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত বর্ধিত করে তা মোহনগঞ্জের সাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে একটি অ্যালাইনমেন্টও তৈরী করা হয়েছিল। সরকারের বর্তমান মেয়াদের মধ্যেই ছাতক-দোয়ারা-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইনের কাজ শুরু হয়ে সিংহভাগকাজ শেষ হবে বলে আশায় বুক বেধেঁছে ছাতক-দোয়ারার সর্বস্তরের মানুষ। ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপন নিয়ে রেল মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ২০১২ সালে কয়েকদফা এলাকা সরজমিনে পরিদর্শনসহ সমিক্ষাও চালিয়েছেন। কিন্তু রেললাইন স্থাপনে পূর্বের অ্যালইনমেন্ট পরিবর্তন হচ্ছে-এমন গুঞ্জনে সাধারন মানুষের মধ্যে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তনের আশংকাও করছেন জেলার ৫এমপিসহ জনপ্রতিনিধিরা। এ ব্যাপারে সহজ ও সঠিক অ্যালাইনমেন্টে ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে ৮ জুন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়াসেন গুপ্ত, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা শাহরিয়ার সাক্ষরিত একটি চিঠি রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বরাবরে দিয়েছেন। জানা যায়, দেশের শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত ছাতকে রেলপথ স্থাপিত হয় ১৯৫৪ সালে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ছাতক রেললাইনে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করার যৌক্তিক দাবী উঠে স্বতস্ফুর্তভাবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছরেও কোন সরকারই ছাতক-দোয়ারাবাসীর এ দাবী কর্ণপাত করেননি। ২০১১ সালে ভাটি বাংলার সিংহ পুরুষ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আওয়ামীলীগ সরকারের রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় ছাতক-দোয়ারা-সুনামগঞ্জ রেলপথ স্থাপনের দাবীটি আরারো জোরালো হয়ে উঠে। ২০১২ সালে ছাতকের আকিজ মাঠে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে দেয়া বিশাল এক জমকালো সংবর্ধনা সভায় তিনি ছাতক-দোয়ারাবাসীর দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের ঘোষনা দিয়েছিলেন। মন্ত্রী ঘোষনা অনুযায়ী ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনে রেল মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কয়েকদফা সরজমিনে এলাকা পরিদর্শনসহ সমিক্ষা চালিয়ে এর একটি অ্যালাইনমেন্টও তৈরী করেছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেন বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। রেললাইন স্থাপনে তার আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা ছাতকসহ জেলার বিভিন্ন জনসভায় ঘোষনা দিয়ে অত্র অঞ্চলের মানুষকেও আশ্বস্থ করেছেন। কিন্তু অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করে নতুন অ্যালাইনমেন্টে ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থানের পরিকল্পনা চলছে- এমন আশংকার কথা রেলমন্ত্রীকে দেয়া জেলার ৫এমপি সাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। চিঠিতে আরো উল্লেখ করেছেন, নতুন অ্যালাইনমেন্টে রেললাইন স্থাপন করা হলে এর দূরত্ব এবং অর্থ ব্যয় হবে কয়েকগুন বেশী। পূর্বে করা অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী স্থাপতি হলে ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইনের দূরত্ব হবে মাত্র ২২ কিলোমিটার। এ দূরত্বের মধ্যে দু’একটি খাল ছাড়া আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবেনা এবং সুরমা নদী থেকে রেললাইনের দূরত্ব হবে ৩-৪ কিমি দূরে। যা দেখার হাওরের উত্তরপার পাশ দিয়ে সুনামগঞ্জ প্রবেশ করবে। এ ছাড়া রেললাইন স্থাপনে জীববৈচিত্রের কোন অনিষ্ট ও নদী ভাঙ্গনে রেললাইনের কোন ক্ষতি হবে না এবং অত্র অঞ্চলের সিংহভাগ মানুষ উপকৃত হবে বলে মন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ছাতক রেলষ্টেশন হতে দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত অ্যালইনমেন্টে রেললাইন স্থাপন কাজ হবে সহজ, অধিকতর সাশ্রয়ী, বাস্তবমূখী ও যৌক্তিক। বর্নিত অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের জন্য রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান সুনামগঞ্জ জেলার ৫ এমপি।##