প্রতিনিধি ১১ মে ২০২১ , ৯:৪৩:৪০ অনলাইন সংস্করণ
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। চারদিকে মৃত্যু আর মৃত্যুর হাতছানি। স্বজন হারানো শোকাহত মানুষের আর্তনাদে দিন দিন ভারী হচ্ছে বাতাস। হাসপাতালে জায়গা নেই। জায়গার অভাব কবরস্থানেও।
খাবার ও আর্থিক সহায়তার আশায় সড়কের মোড়ে মোড়ে ভিড় করছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে যাদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা, তারা যেন হাত গুটিয়ে বসে আছেন। কোনো দল বা গোষ্ঠীর চোখে পড়ার মতো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। সামাজিক সংগঠন এমনকি বিত্তশালীরাও হাত গুটিয়ে বসে আছেন।
সাধারণ মানুষের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের নিরাপদে রাখতেই ব্যস্ত তারা। অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়ালেও সরকারের বিরোধিতা কিংবা নানা পরামর্শ দেওয়ায় ব্যস্ত অনেকে। শুধু রাজনৈতিক দল ও বিত্তশালীরাই নয়, এনজিওগুলোকেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে অসহায়, খেটে খাওয়া, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, নিরন্ন ও অভাবী মানুষের ভরসার জায়গা এবং শেষ আশ্রয়স্থল প্রধানমন্ত্রী ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী সবটুকু করে যাচ্ছে। তার দল আওয়ামী লীগও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার জানান, পাশের দেশ ভারতে করোনায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানকার সরকার সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাশাপশি দেশটির ব্যবসায়ী ও সামর্থ্যবানরা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। অথচ আমাদের চিত্র ঠিক এর বিপরীত।
আমাদের দেশেও একটি বড় ধনিক শ্রেণি আছে। গত ২০ থেকে ২৫ বছরে এই শ্রেণির অর্থ, বিত্ত-বৈভব বহুগুণ বেড়েছে। অথচ করোনার এই মহামারিতে অসহায় সাধারণ মানুষের পাশে তাদের একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। তাদের নীরবতা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন আছে এমন রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি। এর বাইরে নিবন্ধন নেই এমন রাজনৈতিক দলের সংখ্যা শতাধিক। দলগুলোর বাইরের নানান নামে হাছে হাজারো সংগঠন। কিন্তু মানুষের পাশে কেউ নেই। বরং সাহেদ-সাবরিনা-আরিফের মতো কেউ কেউ এই মহামারিকে পুঁজি করে উল্টো আরও ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। এখনো অনেকে এই চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে বাজার সিন্ডিকেটও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মানুষের দুঃসময়কে পাশে থাকার পরিবর্তে চাল-ডাল-তেল-আটা-লবণ-চিনিসহ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনজীবনকে আরও দুঃসহ করে দেওয়া হয়েছে।’
সরকারি হিসাবে দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এ পর্যন্ত শনাক্ত হয় ৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ১২ হাজার ২৭৭ জন। মারা গেছেন ২১ হাজার ৯৭২ জন। কারোনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭২ ভাগ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৪ ভাগ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। ঈদ উপলক্ষ্যে শহরের মানুষ যেভাবে গ্রামমুখী হয়েছে, তাতে এই ভাইরাস আরও ছড়াবে এবং তৃতীয় ধাপে এসে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। প্রাণহানিও বাড়বে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকেই এই মহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগ এখনো অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি শাসকদল হিসাবে আওয়ামী লীগও সাধ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে আছে। দুই বড় দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিকে প্রথম দিকে ত্রাণসহায়তা নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকতে দেখা গেলেও পরে তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়ে। ওয়ার্কার্স পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদসহ কয়েকটি ছোট দল সাধ্য অনুযায়ী করার চেষ্টা করছে। কমিউনিস্ট পার্টি ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন শ্রমজীবী ক্যান্টিন পরিচালনা করছে।
ওয়ার্কার্স পাটি ও তার শ্রমিক সংগঠন অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ অনেক নেতাই করোনায় আক্রান্ত হন। বাসায় থেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও।
করোনাকালে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘ আমরা এক কোটি ৯০ লাখ পরিবারকে সহায়তা দিয়েছি। ৫০ লাখ অসহায় মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে গত বছর ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। এবারও প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রমাণ করেছি, আওয়ামী লীগ জনগণের দল। করোনা মোকাবিলায় কাজ করে আমাদের সিনিয়র নেতাসহ ৬শ’র বেশি নেতাকর্মী মারা গেছেন। জনগণের পাশে ছিলাম বলে আমরা আক্রান্ত হয়েছি।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সময় আমরা অসহায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। অনেকের বাড়িতে আমরা ঈদ উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। তবে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি দেশের বিত্তশালীদের আরও বড় পরিসরে ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়েই প্রথম থেকে মানুষের পাশে ছিলাম, এখনো আছি। এই ঈদেও আমরা প্রায় ১৫ হাজার পরিবারকে নানাভাবে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। তিনি বলেন, মানুষের পাশে দাঁড়াতে সামর্থ্য থাকাটা খুবই জরুরি। সামর্থ্য অনুযায়ীই আমরা করে যাচ্ছি। শিল্পপতি, ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিত্তবানরা করোনাকালীন সংকটে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নেওয়ার পাশাপাশি নানান সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। কিন্তু মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে তাদের এগিয়ে আসতে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না, যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
সূত্রঃ যুগান্তর