প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২১ , ১:২৮:০৪ অনলাইন সংস্করণ
বিপ্লব রায় শাল্লা::হাওর অধ্যুষিত উপজেলা শাল্লা। আর এই উপজেলার মানুষ একমাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল। উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি। জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে শাল্লা উপজেলাটি হচ্ছে ভিন্ন। উপজেলাজুড়ে শুধু বিস্তীর্ণ হাওর। পৌষের শুরু থেকেই চারা রোপন করে হতাশায় থাকেন কৃষকরা। আবার চৈত্র মাস থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত কৃষকদের মধ্যে ভয় কাজ করে। কারন যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকদের স্বপ্নই কেবল নষ্ট করে না, অর্থনীতির মেরুদণ্ডও ভেঙে দেয়। আর গত সোমবার ভোরে এমনই ঘটনা ঘটেছে শাল্লা উপজেলায়।
ধমকা ঝড়ো হাওয়া ও প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টিতে হাওরের বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির ফলে ফসলের মূখ দেখার আগেই মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ও অনেক অর্থ ব্যয়ের ফলায়িত ফসল কাচা অবস্থায় শিলাবৃষ্ঠিতে নষ্ট হওয়ায় সামনে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায় উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর এলাকায় ফসলী জমিতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফসলী জমি ছাড়াও আনন্দপুর গ্রামের কয়েকটি ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। এর মধ্যে দক্ষিন হাটির বকুল দাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শিলাবৃষ্টিতে উনার কয়েকশ পোল্ট্রি মোরগ মারা গেছে বলে তিনি জানান।
এদিকে বাহাড়া ইউনিয়নের ভেড়াডহর গ্রামে প্রায় শতাধিক ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। আর অসহায় হয়ে পড়েছে এসব পরিবার।এছাড়াও উপজেলার সবকটি ইউনিয়নেই শিলাবৃষ্টির আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। উপজেলার ছায়ার হাওর, ভান্ডাবিল, ভেড়াডহর, উদগলবিল, খলারবন হাওরে দেখা যায় গর্ভায়িত বোরো ফসলের প্রায় ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে গত রাতের শিলাবৃষ্টিতে।
এবিষয়ে মুুুুুুসাপুর গ্রামের কৃষক সবুজ বৈষ্ণব জানান, ফাল্গুন মাসে এধরনের ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি আমি দেখিনি। গতরাতে শিলাবৃষ্টির ভয়ানক তান্ডবে ফসলের মুখ দেখার আগেই এলাকার কৃষকের চেহারা মলিন হয়ে গেছে। কাচা ফসলের যে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সাধারন কৃষক।
হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বলেন, গতরাতের শিলাবৃষ্ঠিতে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপুরণীয়। তবে গর্ভ ফসলে শিলাবৃষ্টির অঘাত হওয়ায় চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমান এখন বুঝা যাচ্ছেনা। এরমধ্যে ৪, ৬, ৯ নং ওয়ার্ডসহ আনন্দপুরের দিকে ক্ষতির পরিমানটা বেশি হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান বাহাড়া ইউনিয়নের কিছু অংশে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শাল্লা ইউনিয়নেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ খবর নিয়েছি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ১৫ শ হেক্টর জমির উপর গতরাতের শিলাবৃষ্টি আঘাত করেছ। এরমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষি অফিসের প্রাপ্ত তথ্য নাকচ করেছ এলাকার কৃষকরা।
শাল্লা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মাসুদ পারভেজ জানান, ১৫শ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ শ হেক্টর ধানের ফসলী জমি নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ১৩৯ হেক্টর সবজি নষ্ট হয়েছে।