• অনিয়ম / দুর্নীতি

    বর্ধিত সময়েও হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় সুনামগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন

      প্রতিনিধি ১৮ মার্চ ২০২১ , ১০:২৫:০৭ অনলাইন সংস্করণ

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: বর্ধিত সময়েও সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে সকল রাজনৈতিক দলের সংহঠন সর্বদলীয় সম্প্রীতি উদ্যোগ সুনামগঞ্জ জেলা শাখা।
    আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়নে প্রধান উপদেষ্টা জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল হক আফিন্দির সভাপতিত্বে ও সমন্বয়কারী সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক জামালগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি মিসবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহসভাপতি নাদির আহমেদ, বিশেষ অতিথি হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক বিজন সেন রায়।
    লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ, দিরাই, তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর, জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন নাগরিক ও সাংবাদিক সংগঠন মিলে রাজনৈতিক সহিংসতা কমিয়ে আনতে কাজ করা হচ্ছে। ৬ উপজেলার নেতারা মিলে সুনামগঞ্জে গড়ে তুলেছি “সর্বদলীয় সম্প্রীতি উদ্যোগ” নামে একটি সংগঠন। সুনামগঞ্জে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আমরা কাজ করছে এই সংগঠনটি। তারই ধারাবাহিতকায় হাওর রক্ষা বাঁধ নিয়ে ও আমরা কাজ করা হচ্ছে।
    সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর ডুবন্ত বাঁধের ভাঙন বন্ধকরণ/মেরামতকল্পে গৃহীত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রæয়ারীর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্ধিত সময় ৭ মার্চের মধ্যে একটি বাঁধেরও শতভাগ কাজ শেষ হয়নি। গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। যে কোন সময় হাওরে বিপর্যয় হতে পারে। পাউবো সঠিক সময়ে কোন পিআইসিকে কার্যাদেশ দেয়নি বলেও কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, এবার অপ্রয়োজনীয় বাঁধের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে।
    ৬টি উপজেলার অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা যায় এবার হাওর রক্ষা বাঁধে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুরে।
    তারা জামালগঞ্জ উপজেলা পিএফজি হাওর পরিদর্শন করে দেখেছেন, গত বছরের বাঁধ অক্ষত থাকলেও এবার সেসব বাঁধে গত বছরের চেয়ে বেশী বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেমন, মিনিপাকনার হাওরের ১ নং পিআইসিতে গত বছর বরাদ্দ ছিল ১২ লক্ষ ৮৬ হাজার এ বছর ২০ লক্ষ ৮ হাজার; ২নং পিআইসিতে গত বছর ৫ লক্ষ ২৭ হাজার, এ বছর ১৭ লক্ষ ৫৮ হাজার; ৩নং পিআইসিতে গত বছর ৮ লক্ষ ৪২ হাজার, এ বছর ১৮ লক্ষ ২৮ হাজার; ১৪ নং পিআইসিতে গত বছর ১২ লক্ষ ১৫ হাজার, এ বছর ২৩ লক্ষ ৭০ হাজার; হালির হাওরে ৩৭নং পিআইসিতে গত বছর ১০ লক্ষ, এ বছর ১৬ লক্ষ ২৭ হাজার। এছাড়াও বাধগুলোতে নিয়ম মেতাবেক কাজ হয়নি। কোন বাঁধেই ঠিকমতো দুরমুজ হয়নি। পাকনার হাওরের ১৪ পিইসিতে গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত মাটির কাজ শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তা বলাও যাচ্ছে না। ২৮ নং পিআইসির কাজ সন্তোষ জনক। ২৭ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত মাটির কাজ শেষ হয়েছে। অনুরুপ ৩০ নং পিআইসিটিও মাটির কাজ শেষ করেছে।
    তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওরের অধিকাংশ বাঁধে শেষ হয়নি মাটি ভরাটের কাজ। শনির হাওরে ৪, ৫, ৭, ৮, ৯ ও ২০নং পিআইসি ও মাটিয়ান হাওরের ৭২, ৭৪, ৭৫ নং পিআইসির কাজ পরিদর্শন করলে এ চিত্র উঠে আসে।
    দিরাই উপজেলা কমিটি হাওর পরিদর্শণ করে দেখেছেন, বাঁধগুলো অক্ষত থাকায় পিআইসি দেড়ী করে কাজ শুরু করেছে। সঠিক সময়ে যেহেতু কাজ শুরু হয়নি তাই সঠিক সময়ে শেষ ও হয়নি। এনিয়ে উপজেলার ধলবাজারে কৃষক সমাবেশ করা হয়েছে। সেখানে কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে চিন্তার কথা বারবার বলেছেন। অনেক পিআইসি সদস্য জানিয়েছেন তারা নিজেও জানেন না তারা পিআইসি সদস্য তবে সাইনবোর্ড এ তাদের নাম রয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দিরাইয়ে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী এখানে বাঁধের কাজ হয়নি, কালনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে নদীর পাড়ের বাঁধটি গুলোর সমস্যা হতে পারে।
    দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জামখলার হাওর সাংগাই হাওরে বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। সামান্য বৃষ্টি হলেই মহাসিংনদী দিয়ে সহজেই হাওরে পানি ডুকে যাবে। উপজেলার ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ নং পিআইসি নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন কিছু প্রকল্পের কারণে সাংহাই হাওরকে পুকুর বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে আগামীতে হাওরের পানি নিষ্কাশনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
    জগন্নাথপুর উপজেলায় বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। এমনকি ক্লোজারও এখন পর্যšন্ত শেষ হয়নি। প্রকল্প নং ৫, ৮, ১২ মাটি ভরাট বাকী আছে।
    উল্লেখ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থ বছরে হাওরের ফসলরক্ষায় জেলায় ৬১৯ কিলোমিটার বাঁধের কাজ হচ্ছে। যার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮১১টি পিআইসি গঠন করে। আমাদের সাংগঠনিক এলাকা বিশ^ম্ভরপুর উপজেলায় ৪১টি, তাহিরপুর উপজেলায় ৮৩টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৪৪টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৬৩টি, দিরাই উপজেলায় ১২০টি, ও জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩৬টি পিআইসি গঠন করা হয়। এ অর্থবছরে সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী সুনামগঞ্জে ডুবন্ত বাঁধের ভাঙন বন্ধকরণ ও মেরামতের জন্য প্রাক্কলিত ব্যায় ধরা হয় ১৩৩ কোটি টাকা।
    তারা আশা কররেন চলতি বছরের গত ১৫ ডিসেম্বর যে ভাবে ৮ টি বাঁধে আনুষ্টানিক ভাবে কাজ শুরু হয়েছিলো তেমনি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের শতভাগ কাজ শেষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার হবে। এখন পর্যন্ত কেন বাঁধের কাজ শেষ হয়নি তা প্রকাশ করার অনুরোধ করছি। এর জন্য কারা দায়ি তা প্রকাশ করা জরুরী। নতুবা আবারও সুনামগঞ্জের কৃষকরা ২০১৭ সালের মতো একটি কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে বলে শংঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা মিডিয়ার মাধ্যমে যেভাবে কৃষকের পাশে দাড়িয়েছেন, সকলে মিলে সুনামগঞ্জের একমাত্র বোরফসল কৃষকের গোলায় উঠার নিশ্চয়তা চাই।
    অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি সিরাজউদৌল্লা, জামালগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান তালুকদার, তাহিরপুর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা বেগম, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোদাচ্ছির আলম, জাতীয় পার্টির সভাপতি নজির উদ্দিন, জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহিম শাহীন, দিরাই প্রেসক্লাব সভাপতি সামছুল ইসলাম সরদার, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের একে কুদরত পাশা, সুনামগঞ্জ জেলা সুজনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাঈদ প্রমূখ। এসময় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। ##
    কুলেন্দু শেখর দাস
    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

    আরও খবর

    Sponsered content