প্রতিনিধি ২৭ জানুয়ারি ২০২১ , ১১:০২:৪৯ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবাননগর ইউনিয়নের ব্রাম্মণগাঁও উত্তরপাড়া গ্রামের সুরমা নদী সংলগ্ন আজিজ ব্রিক ফিল্ডের লোকজন নদীর পাড় কেটে মাটি উত্তোলন করে ইট তৈরীর কাজে ব্যবহার করে নি¤œ মানের ইট তৈরী করছে একটি ভূমি খেকো সিন্ডিকেট চক্র। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষজন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন দিয়ে কাজ করানোর সময় বিকট শব্দ আর ব্রিক ফিল্ডের পাইপ দিয়ে কালো দোয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আশপাশের গ্রামের পরিবেশের ভারসাম্য। আজিজ ব্রিক ফিল্ড নদীর তীরবর্তী হওয়ায় মেশিনের কম্পনে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে তিন ফসলি আবাদী জমি। রাতের আধাঁরে এক্রসেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করে ইট তৈরীর কাজ সহ নদী পথে স্টীল বডি নৌকা এবং সড়ক পথে ট্রাক লোড করে অন্যত্র বিক্রী করারও অভিযোগ রয়েছে। এই ব্রিক ফিল্ডে প্রায় ৫শতাধিক শ্রমিক কাজে নিয়োজিত আছেন।
সরেজমিনে বুধবার সকালে ঘুরে এবং আশপাশের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,, পরিবেশ অধিদপ্তর এর ছাড়পত্র নবায়ন না করে সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে ভারতীয় কয়লা দ্বারা অবৈধ ভাবে ইট তৈরীর নির্ধারিত সাইজের চেয়ে দুই ইঞ্চি কম দিয়ে ইটভাটায় তৈরী করা হচ্ছে ইট।
আজিজ ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানা যায়, প্রায় ১৫ একর জমির মধ্যে ব্রিক ফিল্ড স্থাপিত্ব করেছেন ব্রাম্মণগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী মো. আব্দুস সাত্তার। তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর ব্রিক ফিল্ডের ব্যবসা করে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে এক সময় ব্রিক ফিল্ড বন্ধ করে দেন। এদিকে তাহিরপুর উপজেলার টেকের ঘাট এলাকার ভারতীয় কয়লা ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দীন ব্রিক ফিল্ডের মালিক আব্দুস সাত্তার এর নিকট থেকে ভাড়া নিয়ে বিগত প্রায় ৫ বছর যাবৎ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি এই ব্রিক ফিল্ডের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নদীর পাড় কেটেমাটি এনে তৈরী করছেন এসব সাইজে দুই ইঞ্চি কম দিয়ে ইট তৈরীর কাজ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি-সদস্য সফু মিয়া বলেন, রিয়াজ উদ্দীন ভাড়া নেওয়ার পর থেকে ফসলি জমি থেকে মাটি না পেয়ে রাতের আধাঁরে নদীর তীর কেটে মাটি উত্তোলন অব্যাহত রাখার কারণে নদী তীরবর্তী গওামের বসতবাড়ি,ফসলী জমি স্কুল মাদ্রাসাসহ অনেকস্থাপনা রয়েছে হুমকির মুখে। বড় বড় ট্রাক দ্বারা মালামাল নেওয়ার কারণে আমাদের গ্রামের তীরবর্তী রাস্তা ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। ঐ রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া ট্রাক চলাচল করায় আমাদের গ্রামের লোকজন ধুলাবালির আক্রমনে স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় জাতীয় পার্টি নেতা পারভেজ আহমদ বলেন, জন্মের পর থেকেই দেখছি বছরের প্রায় ৬ মাসেই রাস্তায় প্যাক-কাঁদা লেগে থাকত। আমাদের গ্রামের মুরব্বীরা বছরের পর বছর হাঁটতে হাঁটতে সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য, বিরোধীদলীয় হুইপ পীর ফজলুর রহমান মিছবাহ নিকট আবেদ জানানোর পর এমপির অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমাদের গ্রামের রাস্তাটি পাকা হয়েছে। কিন্তুু আজিজ ব্রীক ফিল্ডের মালবাহী ট্রাক চলাচল করায় রাস্তাটি যে কোন সময় ভেঙ্গেঁ যেতে পারে। নদীর তীর কাটা বন্ধসহ ঐ রাস্তা দিয়ে ইটভর্তি বড় বড় ট্রাকগুলো বন্ধ করার জন্য প্রমাসনের উধর্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান ।
এ ব্যাপারে আজিজ ব্রীক ফিল্ড ম্যানেজার মেরাজ আলী তীর কেটে মাটি উত্তোলন স্বীকার করে বলেন, স্টীল বডি নৌকায় মালামাল তোলার জন্য সামান্য মাটি কেটে রাস্তা বানিয়েছি। প্রতিদিন ভোর রাতে আশপাশের গ্রামের কিছু সংখ্যক লোক নৌকা দিয়ে মাটি চুরি করে নিয়ে আমাদের উপর দোষ চাপায়।
এ ব্যাপারে আজিজ ব্রীক ফিল্ডের (চুক্তিপত্রে) মালিক রিয়াজ উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সুরমা নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন বলে অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন ব্রিক ফিল্ড যে কেহ করলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকতে হবে। তবে নীতিমালায় কোন ব্রিক ফিল্ডের মালিক সরকারী কিংবা নদীর পাড় কেটে মাটি নেয়া সম্পূর্ণটা অবৈধ। তিনি প্রশাসনের তরফ থেকে ঘটনাস্থলে লোকজন পাঠানো হচ্ছে এবং মাটি কাটার দৃশ্য প্রমানিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।