প্রতিনিধি ৩ জানুয়ারি ২০২১ , ৭:২২:৩৯ অনলাইন সংস্করণ
মাহমুদ আহসান হাবিব , ঠাকুরগাঁও।। ‘পাওয়ার হাউজ’, ‘রাজা’, ‘বাদশা’ কিংবা ‘বাংলার বাঘ’। দৌড়ের ঘোড়ার আছে এমন বাহারি সব নাম। ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতায় দর্শক গ্রামের সব বয়সী মানুষ। গ্রামের ধানখেতই এখন যেন খেলার মাঠ। মাঠের মধ্যে বাশঁ পুঁতে গোলাকার একটি জায়গা চিহ্নিত করা। মানুষজনও গোল হয়ে বসা, কেউবা দাঁড়িয়ে। দৃষ্টি সবার একদিকেই। মাঠের মাঝখান দিয়ে চলছে ঘোড়া। চলা নয়, এ তো প্রাণপণ ছোটা। পিঠে সওয়ারি, থামলেই চাবুকের ঘা। ছুটছে ঘোড়া, ঘুরে ঘুরে। তারপর বাড়তে থাকে গতি। এরই নাম ঘোড়দৌড়।
শুষ্ক মৌসুমে গ্রাম এলাকার দারুণ এক বিনোদন। মৌসুমের এই সময় গ্রামের খালি ধানখেতে বসে ঘোড়দৌড়ের জমজমাট আসর। গ্রামের সব বয়সী মানুষেরা দর্শক। প্রতিযোগিতামূলক এ খেলা শুধু ঘোড়াকে নিয়ে। সঙ্গেযেন মেলাও জমে ওঠেছে। গ্রামাঞ্চলে ঘোড়দৌড়ের এমন আয়োজন কমে গেলেও রুহিয়া থানাধীন নবগঠিত ২২নং সেনুয়া ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে ঘোড়া-দৌড় খেলা- ২০২১ প্রতিযোগিতা।
জায়গাটা ২২নং সেনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম পার্শ্বে, বিমল মার্কেট সংলগ্ন ধানমাঠে আয়োজন করা হয় ঘোড়দৌড়ের। আয়োজক বলতে ইউনিয়নবাসীর নামে কমিটি করা হয়, তাদের মিলিত চেষ্টায় সম্পন্ন হয় ঘোড়দৌড়। মাস তিনেক আগেই শুরু হয় প্রচারণা। ঘোড়া, ঘোড়সওয়ার আর ঘোড়া পালকদের অতিথি হিসেবে বরণ করে নেয় ইউনিয়নবাসী। দৌড় চালাকালে গ্রামে অতিথির সমাদরে ছিলেন ঘোড়দৌড়ে অংশ নেওয়া লোকজন।
এক দলে ৫ ঘোড়া
একটি দলে পাঁচটি ঘোড়া থাকে। অংশগ্রহণকারী প্রথম প্রতিযোগি ঘোড়ার জন্য পুরস্কার হিসেবে ছিল টেলিভিশন দ্বিতীয় প্রতিযোগির জন্য রাইস কুকার। পরে সব বিজয়ী ঘোড়া নিয়ে হয় চূড়ান্ত পর্ব। সেখানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান নির্ধারণ হয়। ঘোড়দৌড়ের শেষ পর্বে শেষ প্রতিযোগিতায় জয়ীদের নিয়ে চলে জয়োল্লাস।
দৌড়ে ২৫টি ঘোড়া অংশ নিয়েছে সেনুয়ার ঘোড়দৌড়ে। কে প্রথম হলো সেটা খেয়াল রাখতে দর্শক সারির সামনে কমিটি নিয়োজিত সেচ্ছে সেবক ছিলেন। তাঁরা নির্ধারণ করেন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়।
০২ জানুয়ারী শনিবার দুপুর। সেনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম পার্শ্বে, বিমল মার্কেটের পাশে ধানমাঠে গিয়ে দেখা গেল, সর্বশেষ দৌড় শুরুর প্রস্তুতি চলছে। ঘোড়ার মালিক তাঁর ঘোড়া মাঠে দাঁড় করালেন। মুখে লাগানো হলো লাগাম। এবার লাগাম টেনে ধরে পিঠে বসলেন সওয়ারি। তুমল করতালিতে শুরু হলো দৌড়।
২২ নং সেনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক, মােঃ আশরাফুল ইসলাম, আয়োজনক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানালেন, ইউনিয়নবাসীর সাধ্যমতো অর্থসহায়তা নেওয়া হয়। এ থেকেই প্রতিযোগিতার খরচ মেটানো হয়। খরচ বলতে ঘোড়ার মালিকদের বাসস্থান ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা। মােঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোট থাকতে বাপ-দাদার আমলে যেভাবে ঘোড়দৌড় দেখছি, ঠিক সেইভাবেই করছি। এইটা একটা ঐতিহ্য, আমরা চাই ঐতিহ্যবাহী এই খেলে যুগেযুগে হউক।’
ঘোড়ার নাম আলী রাজ!
দৌড়ে আসে সাদা, কালো, লাল, চিত্রা হরেক রঙের ঘোড়া। কিন্তু এসব ঘোড়াকে কেউ ‘ঘোড়া’ বলে ডাকে না। স্বভাব আর চরিত্র ভেদে নাম থাকে নানা রকম। ‘পাওয়ার হাউজ’, ‘রাজা’, ‘বাদশা’ কিংবা ‘বাংলার বাঘ’ সহ নানা নামে তাদের পরিচিতি। ঘোড়দৌড়ে মাইকে একটি ঘোড়ার নাম শুনে চমকে উঠলাম। ঘোড়ার নাম নাকি ‘আলী রাজ’! সওয়ারি ও মালিক রনি জানান, দর্শকদের নজর কাড়তেই নায়ক আলী রাজের নামে এই নামকরণ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব ঘোড়ার নামকরণ আগে জনপ্রিয় যাত্রাপালা, বাংলা সিনেমা বা সাহসী কোনো চরিত্রের নামে নামকরণ করা হতো বেশি। সেই ধারাবাহিকতায়
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানাধীন ২২নং সেনুয়া ইউনিয়নবাসীদের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামীন ঐহিত্য ধরে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা পরিচিত করার লক্ষেই শনিবার ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এসময় আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও উৎসুক শিশুরা প্রতিযোগিতাস্থলে উপস্থিত হন। ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগীতায় সদর উপজেলাসহ খেলায় বগুড়া, সাকোয়া, ডোমার নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পাঁচপীর থেকে ২৫ জন খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ ঘোড়া নিয়ে ঘোড়া দৌর প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করেন।
গ্রুপ ভাগ করে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবং তিনটি গ্রুপ এ,বি,সি এর ১ম,২য় ও ৩য় স্থান-কারীদের নিয়ে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবং পরে খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরন করে অতিথি বৃন্দ।
ঘোড় দৌড় দেখতে আসা আনারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে খুবেই ভালো লাগছে। এমন আয়োজনে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে আবেগ আপ্লুত হয়েছি। আয়োজকদের মধ্যে মোঃ রবিউল আলম রবি, (সাধারন সম্পাদক সেনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ) বলেন,আগামীতেও আরো বড় পরিসরে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে’।
উক্ত ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঠাকুরগাঁও সদর আ‘লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৪নং রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মোশারুল ইসলাম সরকার, প্রধান অতিথি ছিলেন, রুহিয়া থানা আ‘লীগের সভাপতি, পার্থ সারথি সেন, রুহিয়া আওয়ামীলীগের সাধারণ আবু সাঈদ বাবু, প্রভাত কুমার সিংহ, রকিউল আলম রবি, খাদেমুল ইসলাম সরকার প্রমুখ।