প্রতিনিধি ৮ জানুয়ারি ২০২১ , ১০:৪৬:২২ অনলাইন সংস্করণ
ভাটি বাংলা ডেস্ক।। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের সব ক্ষেত্রের দিকনির্দেশনা ইসলাম প্রদান করেছে। মানবসমাজ গঠনের মৌলিক উপাদান হলো পরিবার। তাই পরিবার গঠনের প্রতি ইসলাম খুবই গুরুত্ব আরোপ করেছে। পরিবার একটি জাতির মেরুদণ্ড। আগামী দিনের আদর্শ মানুষ গড়ার পাঠশালা। পরিবারের মাধ্যমে সমাজের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে তৈরি হয় ভালোবাসা ও হৃদ্যতা। নিষ্কলুষ জীবনযাপন ও মানবিক চাহিদা পূরণের বৈধ পন্থা হলো পরিবার। পরিবারের মাধ্যমে অব্যাহত থাকে আপন বংশপরিক্রমা। অন্তরজুড়ে বিরাজ করে মানসিক প্রশান্তি।
আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলির অন্যতম হলো এই পরিবার। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাদের কাছে তোমরা প্রশান্তি লাভ করো। তিনি তোমাদের উভয়ের মধ্যে তৈরি করেছেন ভালোবাসা ও মায়া-মমতা, নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন আছে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের স্ত্রীদের থেকে সন্তান-সন্ততি ও নাতি-পুতি দান করেছেন, তোমাদের আরো দিয়েছেন উত্তম রিজিক। এর পরও তারা কি মিথ্যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করবে?’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৭২)
ইসলামে পরিবার একটি উজ্জ্বল দর্পণ। এই দর্পণে ফুটে ওঠে ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ। ফলে বিরাজ করে শান্তি ও ভালোবাসা, যা প্রতিষ্ঠা করতে আধুনিক সভ্যতা-সংস্কৃতি ও পশ্চিমা বিশ্বের বড় সামাজিক সংগঠনগুলোও অক্ষম হয়েছে। কোরআন ও সুন্নাহর দিকনির্দেশনা না থাকলে কিভাবে শান্তি বিরাজ করবে? পৃথিবীর নানা দেশের পারিবারিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সামাজিক অবক্ষয় তা-ই প্রমাণ করে।
পরিবার গঠনে ইসলামের সর্বপ্রথম দিকনির্দেশনা হচ্ছে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে ন্যায় ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে বসবাস করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯) কথাবার্তা ও কাজকর্ম সুন্দরভাবে সম্পাদন করা, সদা হাসিমুখে পরিবারের আনন্দ-বিনোদনে অংশীদার হওয়া এবং তাদের জন্য যথাযথ খরচ সরবরাহ ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করলে পরিবার শান্তির ঠিকানায় পরিণত হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী, যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি সুন্দর। তোমাদের মধ্যে সে সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে সর্বাপেক্ষা উত্তম।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)
ইসলামে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুদৃঢ় বন্ধনের মাধ্যমে। তা সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতিতেই বিনষ্ট হয় না। তাই তুচ্ছ কোনো কারণে পারিবারিক ভিত্তি ভেঙে ফেলা উচিত নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা তাদের (স্ত্রী) অপছন্দ করো তাহলে স্মরণ রাখো, হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য কল্যাণ রেখেছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
কারো কোনো আচরণ অপছন্দ হলে তার পছন্দনীয় কোনো দিকও থাকবে। তাই রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ যেন মুমিন নারীর প্রতি ক্রোধান্বিত না হয়। তার কোনো আচরণ অপছন্দ হলে অন্য আচরণ দেখে সে সন্তুষ্ট হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৭২)
তাই কারো সামান্য আচরণেই অন্য গুণাবলি মাটিচাপা দেওয়া উচিত নয়।
সুদৃঢ় ঈমান ও সৎ আমলের মাধ্যমে পরিবারের ভিত্তি মজবুত হয়। সুন্নাহভিত্তিক আমল সবার মধ্যে তৈরি করে ভালোবাসা ও মায়া-মমতা। আমলের প্রতি গুরুত্বারোপকারী পরিবারের জন্য রাসুল (সা.) অনেক দোয়া করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। তার স্ত্রীকেও ডেকে দেয়। সেও নামাজ পড়ে। যদি স্ত্রী নামাজ পড়তে না চায় তার চেহারায় পানির ছিটা দেয়। আল্লাহ তাআলা ওই নারীর ওপরও রহম করুন, যে রাতে উঠে নামাজ আদায় করে। তার স্বামীকেও ডেকে দেয়। সে উঠে নামাজ আদায় করে। উঠতে না চাইলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। তখন সে উঠে নামাজ পড়ে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩০৮)
পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে আল্লাহ তাআলার বিধি-নিষেধ শিক্ষা দেওয়া জরুরি। তখন পরিবারের সন্তানরা আল্লাহর প্রতি অবিচল ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠবে। প্রত্যেক সদস্য দ্বিনের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে জীবন যাপন করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করা মুসলিম পরিবারের অন্যতম দায়িত্ব।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন, দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা আল্লাহ তাআলার রহমত লাভ করে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এই আয়াত অবতীর্ণ হলে আমরা রাসুল (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা নিজেদের রক্ষা করব। কিন্তু আমাদের পরিবার কিভাবে রক্ষা করব? রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের যে আদেশ দিয়েছেন, তাদেরও তোমরা সে আদেশ দাও। আল্লাহ তাআলা যা থেকে নিষেধ করেছেন, তাদেরও তা থেকে নিষেধ করো। (তাফসিরে কুরতুবি : ১৭১/১৮)
পরিবারের সন্তানদের দ্বিনি জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক। তাদের আদব-কায়দা ও ইসলামী শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে পরিবারের সবাই দ্বিনি বিধি-বিধান পালনে অভ্যস্ত হবে। পরিবারকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া নারী-পুরুষ উভয়ের দায়িত্ব। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল। সে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীল। সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৫৮)
বস্তুত ইসলামের সুমহান আদর্শ ও শিক্ষা পালনের মাধ্যমেই সবাই সুখে-শান্তিতে পরিবারে বসবাস করতে পারবে। পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যবোধে ভরপুর হবে পরিবার। পরিবারের মধ্যে তৈরি হবে সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ তাআলা সব পরিবারকে শান্তি ও সৌভাগ্যে ভরপুর করুন। আমিন।
(সংগৃহীত)