প্রতিনিধি ১৫ নভেম্বর ২০২০ , ৭:২০:৫০ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের কাইয়ারগাওঁ গ্রামের চলতি নদীতে প্রশাসনের কঠোর নিষেধাষ্ণা অমান্য করে নদীর পাড় কেটে একটি চক্র প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বড় বড় বলগেট নৌকা বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার বালু ও পাথর । এ যেন দেখার কেউ নেই ফলে এমন বেপরোয়া নদীর পাড় কেটে গুটি কয়েকজন আঙ্গুল ফুলে গলাগাছ বনে যাওয়ায় তাদের অত্যাচার আর নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন কাইয়ারগাওঁ গ্রামের নিরীহ লোকজন। প্রতিনিয়ত এই গ্রামের নদীর পাড় কেটে বালু ও পাথর উত্তোলন করার সময় পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলে ও এই চক্রটি হামলা চালাচ্ছে নিরীহ পরিবারদের উপর।
সরেজমিনে কাইয়ারগাঁও গ্রামের নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায় প্রশাসনের চোখ ফাকিঁ দিয়ে দিনদুপুরে অবৈধভাবে বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বড় বড় বলগেট নৌকায় কাইয়ারগাওঁ গ্রামের চলতি নদীতে নদীর পাড় কেটে প্রকাশ্যে দিবালোকে লাখ লাখ টাকার বালু ও পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে কাইয়ারগাওঁ গ্রামের ভূমিখেকো প্রভাবশালী মকবুল হোসেন মুগল,শুক্কুর আলী নজরুল ইসলাম মানিকের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজনের একটি প্রভাবশালী চক্র। এই ঘটনাটি নিজ চোখে না দেখলে বিশ^াস করা যাবে না তারা কেমন প্রভাবশালী তাদের কাছে গ্রামের লোকজন কত যে অহসহায়ত্ববোধ করেন। তাদের অত্যচারে গ্রামের লোকজন কারো প্রতিবাদ করার সাহস না থাকায় তারা বালু ও পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখায় একদিকে যেমন নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো হয়ে পড়েছে হুমকির মুখে,দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। আর মকবুল ও শুক্কুর গংরা অল্পদিনে বনে যাচ্ছেন লাখপতি।
গতকাল শনিবার দিনব্যাপী কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীরা এই নদীর পাড় কাটার দৃশ্য ভিডিও ধারন করার পরে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এই আই মো. জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার ও এস আই হুমায়ূন কবীরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে এই দুই পুলিশ নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে দিয়ে তিনটি বড় বড় পাথর ও বালু বোঝাই বলগেট নৌকা ও দুটি ড্রেজার মেশিন আটক করেন। এ সময় চোরাকারবারী মকবুল হোসেন মুগল,শুক্কুর আলী ও নজরুল ইসলাম মানিক গংরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এ সময় এই আই হুমায়ূন কবীর একটি পাথর বোঝাই নৌকা ও দুটি ড্রেজার মেশিন থানায় নিয়ে আসেন এবং গভীর রাতের কারণে এই আই মো. জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার ঘটনাস্থলে গিয়ে জেলা ধোপাজান চলতি নদী বারকি শ্রমিকের সভাপতি মো. মণির হোসেনের তত্বাবধানে আটককৃত আরো তিনটি অবৈধভাবে বালু ও পাথর বোঝাই বলগেট নৌকা রেখে আসেন। আজ রবিবার দুপুরে আটককৃুত তিনটি বলগেট নৌকা থানায় নিয়ে আসার কথা রয়েছে। পুলিশ কর্তৃক শনিবার রাতে মোট ৫টি বলগেট নৌকা আটকের খবরে চোরাকারবারী শুক্কুর আলী ও তার স্বজনেরা জানতে পেরে রবিবার সকালে দাড়াঁলো অস্ত্র রামদা ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে গ্রামের নিরীহ মো. ফরিদ মিয়াও তার ভাই শহীদ মিয়া,ছাদেক মিয়ার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসেন এবং বলেন তারা নাকি সাংবাদিক ও পুলিশ এনে তাদের বালু ও পাথর বোঝাই নৌকাগুলো আটক করতে সহায়তা করেছেন। অথচ পুলিশ কর্তৃক অবৈধভাবে নদীর পাড় কেটে বালু বোঝাই নৌকাগুলো আটকের সাথে নিরীহ ফরিদ মিয়া গংদের কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকার পর তাদের বাড়িতে গিয়ে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান নিয়ে জনমনে আতংঙ্ক বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য গত ২৫ অক্টোবর নদীতে রাতের আধাঁরে বালু উত্তোলনের সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী মকবুল হোসেন মুগল গংদের দুটি নৌকা আটক করায় পরের দিন অর্থাৎ গত ২৬ অক্টোবর কাইয়ারগাওঁ গ্রামের ভূমিখেকো প্রভাবশালী মকবুল হোসেন মুগল,শুক্কুর আলী ও নজরুল ইসলাম মানিকের নেতৃত্বে ৩০ জনের একটি দল নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে জিরো থেকে হিরো বনা সন্ত্রাসীরা চাইনিজ কুড়াল ও রামদা নিয়ে একই গ্রামের নিরীহ মোঃ ফরিদ মিয়া ও তাদের স্বজনদের বাড়িতে প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে পরিবারের ৮ জনকে নারীপূরুষকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। আহত ফরিদ মিয়ার বাড়ির লোক বাড়িঘরে না থাকার সুযোগে সন্ত্রাসীরা ঐ নিরীহ পরিবারের বাড়িঘরে ভাংচুর ও লুটপাঠ করে সোনা গহনা টাকা পয়সা আসবাবপত্র নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত মো. ফরিদ মিয়া বাদি হয়ে গত ২৭ অক্টোবর একই গ্রামের মো: মকবুল হোসেন (মগল),মো: নজরুল ইসলাম(মানিক), শুক্কুর আলী,মো: ফয়েজ আলী সহ ২৪ জনকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৪৮ । মামলা দায়েরের পর গত ২রা নভেম্বর সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানসহ উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সকল আসামীদের দ্রæত গ্রেফতারের নির্দেশ প্রদান করেন। ঐ রাতেই পুলিশ কাইয়ারগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে মো. মুক্তার হোসেন নামে এক আসামীকে গ্রেপ্তার করে। এই চোরাকারবারীরা গ্রামের মধ্যে প্রভাবশালী হওয়ার দরুণ দীর্ঘদিন ধরে কাইয়ারগাওঁ গ্রামের পাশে চলতি নদীতে নদীর পাড় কেটে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বলগেট নৌকা দিয়ে প্রতিরাতে লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে নিয়ে যায়। গ্রামের কেহ এর প্রতিবাদ করলে ঐ চক্রটি লোকজনের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় । এ নিয়ে এলাকাবাসী ইতিমধ্যে জেলা শহর সুৃনামগঞ্জের ট্রাফিক পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচী ও পালন করে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধসহ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছেন।
এ সুনামগঞ্জ জেলা ধোপাজান চলতি নদী বারকি শ্রমিকের সভাপতি মো. মণির হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে গতরাতে তার জিম্মায় পুলিশ কর্তৃক আটককৃত তিনটি বালু ও পাথর বোঝাই নৌকা রাখার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান আজ রবিবার পুলিশ এসে নৌকাগুলো থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এস আই মো. জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার গত শনিবার গভীর রাতে কাইয়ারগাওঁ গ্রামের তীরবর্তী নদী থেকে মকবুল ও শুক্কুর আলী গংদের অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের সময় মোট ৫টি বালু ও পাথর বোঝাই বলগেট নৌকা আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহীদুর রহমান আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান নদীর পাড় কেটে বালু ও পাথর উত্তোলনে প্রশাসনের নিষেধাষ্ণা অমান্য করে যারা নদীর পাড় কেটে বালু ও পাথর উত্তোলন তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে বলে ও তিনি জানান।