প্রতিনিধি ৬ নভেম্বর ২০২০ , ৩:০৭:১৫ অনলাইন সংস্করণ
শাল্লা প্রতিনিধি– সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলাটি একফসলী এলাকা হিসেবে খ্যাত। এখানে শুধুমাত্র বোরো ধান উৎপন্ন হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। প্রতিবছরের নভেম্বর মাসে বিএডিসি’র বীজ ডিলারগণ সরকারের ভূর্তূকি মূল্যের ধানবীজ সংগ্রহ করে কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন। কিন্তু এবছর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়নি বিএডিসি’র বীজ ডিলারদের উফসী জাতীয় ধান বীজ বিক্রয় করতে। উল্লেখ্য, অনেকাংশে নিচু জমিতে কৃষকগণ বিএডিসি’র উফসী জাতীয় ধানের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু উপজেলা সদরসহ তিনটি ইউনিয়ন এলাকায় কোনো বীজ ডিলার উফসী ধানের বীজ না পাওয়ায় বীজ সংকটে পড়েছে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকগণ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সারা উপজেলার আবাদযোগ্য অর্ধেক জমিতে হাইব্রীড জাতীয় ধানের আবাদ হয়ে থাকে। অবশিষ্ট অর্ধেক জমিতে উফসী জাতীয় ধানের আবাদ হয়। সেই হিসেবে প্রায় ২৫০ মেট্রিকটন উফসী জাতীয় ধান বীজের চাহিদা রয়েছে এ উপজেলায়।
উপজেলার ২নং হবিবপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর বাজরের মেসার্স শ্রীপালী ভান্ডার, উপজেলা সদরের মেসার্স স্বপন কুমার পাল, মেসার্স উত্তম ট্রেডার্স ও ১নং আটগাঁও ইউনিয়নের মামুদনগর বাজারের মেসার্স কাজী এন্টারপ্রাইজ নামের এই ৪টি ডিলারকে এবছর বিএডিসি কর্তৃপক্ষ কোনো ধান বীজ না বরাদ্দ দিয়ে অন্যায়ভাবে তাদের লাইসেন্স রিজেক্ট করা হয়েছে বলে ওই ৪টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ দাবী করছেন। অন্যদিকে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ তা বরাবর অস্বীকার করে আসছেন।
মেসার্স কাজী এন্টারপ্রাইজের পরিচালক (বর্তমান) কাজী বদরুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতিবছরের জুলাই মাসে আমাদের বীজ ডিলারশীপ নবায়ন করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে সরকার নির্ধরিত ফি জমা দিয়ে সিলেট বিএডিসি অফিসে গেলে উপ-পরিচালক সুপ্রিয় পাল আমাদের লাইসেন্স নবায়ন করেননি। কেন লাইসেন্স নবায়ন করেননি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমাদের আদৌ জানা ছিল না যে, প্রতিবছর দুই লক্ষ টাকার বীজ উত্তোলন করতে হয়। বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ইতিপূর্বে কোনো নোটিশ বা চিঠিও দেয়নি। তিনি (সুপ্রিয় পাল) এই অজুহাতে আমাদের লাইসেন্স বাতিল করে যোগাযোগী মূলে ঘুষ-দুনীতির মাধ্যমে শুধুমাত্র দু’টি লাইসেন্স নবায়ন করে বীজ দিচ্ছেন। আমরা এমপি মহোদয়কে দিয়ে সুপারিশ করেও সুফল পাইনি। অপর তিন জন বিএডিসি’র বীজ ডিলারদের সাথে কথা হলে তারাও একই কথা জানান।
অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রান্তিক কৃষকগণ প্রতিদিনই উপজেলা সদরের ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারে এসে বিএডিসি’র উফসী জাতীয় ধান বীজের অনুসন্ধান করছে। ওইসব কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের প্রায় অর্ধেক জমি নীচু। ওইসব জমিতে হাইব্রীড ধান চাষ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ছড়াদামে প্রাইভেট কোম্পানির ধানবীজ কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এবছর বীজের অভাবে আমাদের জমি অনাবাদি থেকে যাবে। তারা আরো বলেন, আমাদের জমি অনাবাদি থাকলে আমরা অনাহারে মারা যাবো।
এবিষয়ে উপজেলা বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মবীনুজ্জামান চৌধুরী’র সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিএডিসি’র বীজ ডিলারদের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে আগামি শনিবার উপজেলা বীজ কমিটির মিটিং রয়েছে। ওই মিটিংয়ে আশা করি একটি ব্যবস্থা হবে- যাতে কৃষকগণ বীজ পায়। তাছাড়া আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি প্রত্যেক কৃষককে বীজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে।
এব্যাপারে উপজেলা বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল-মুক্তাদির হোসেনের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আগামি শনিবার ৭ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে একটি মিটিং রয়েছে। উক্ত মিটিংয়ে একটা সমাধন হবে। আশা করি উপজেলার সব কৃষক বিএডিসি’র বীজ পাবে।
সিলেট বিএডিসির উপ-পরিচালক সুপ্রিয় পালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, উক্ত বীজ ডিলারগণ গত বছর তাদের টার্গেট পূরণ করতে না পারায় তাদের লাইসেন্স রিজেক্ট হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি ইতোমধ্যে উপজেলা বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পরামর্শ দিয়েছি যে, শাল্লা থেকে যে-দু’জন ডিলার বীজ বরাদ্দ পেয়েছে, তাদের বীজই সমগ্র উপজেলায় বিতরণ করতে।