প্রতিনিধি ১৯ নভেম্বর ২০২০ , ৯:২৬:১৯ অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ– সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে মজলিশপুর নতুন মসজিদ নির্মাণ কাজের হিসাব নিয়ে নির্মান কমিটির মতোয়াল্লি আরজু মিয়ার সঙ্গে নির্মান কমিটির সদস্যদ্বয় সাবেক কাউন্সিলর ইয়াহিয়া চৌধুরী ও সাবেক মতোয়াল্লি আছদ্দর মিয়ার হিসাব সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে সৃষ্ট মতানৈক্য দেখা দিলে প্রায় দীর্ঘ আট মাস পর গত মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর ২০২০) দুপুর ১২ ঘটিকায় মসজিদ প্রাঙ্গণে শায়খুল হাদিস আল্লামা নূরুল ইসলাম খাঁনের উপস্থিতিতে সুষ্টভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে।
মজলিশপুর জামে মসজিদের মতোয়াল্লি কর্তৃক সালিশবোর্ডের মাধ্যমে হিসাব প্রদান এবং নতুন পরিচালনা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অনুষ্টিত সভায় দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী (সালিশ বোর্ডের সভাপতি) ও দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়া রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততার কারণে সভায় উপস্থিত থাকতে না পারায় সালিশ বোর্ডের পক্ষে তাদের মনোনীত প্রতিনিধি উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সালিশ বোর্ড ও গ্রামবাসীর সর্বজন শ্রদ্বেয়, হক ও সত্যের প্রতীক, ন্যায়পরায়ণ, সর্বগুনে গুনাম্বিত ব্যাক্তিত্বের অধিকারী উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলীম ইসলামের পথপ্রদর্শক আল্লামা নূরুল ইসলাম খাঁন , উপস্থিত ছিলেন সালিশ বোর্ডের অন্যতম সদস্য জননন্দিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষানুরাগী হাফিজুর রহমান তালুকদার। এলাকার গণ্যমান্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অত্র মসজিদের হিসাব কমিটির সাবেক সভাপতি কবিরুল হক চৌধুরী সহ বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ত্ব আরিফুজ্জামান চৌধুরী এহিয়া এবং গ্রামের মুসল্লী, মুরুব্বীয়ান ও যুবকরা।
সভার কাজ আরম্ভ হলে সাবেক মতোয়াল্লি আরজু মিয়া আল্লামা নূরুল ইসলাম খাঁন সাহেবের অনুমতি নিয়ে তিনি তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করে নির্মাণ কাজের হিসাব সহ সালিশ বোর্ডের মাধ্যমে সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে সবার সম্মুখে প্রধান অতিথি বরাবরে পেশ করেন। একপর্যায়ে হিসাব নিয়ে সৃষ্ট জটিলিতা ও কারন উল্লেখ্য করে সালিশ বোর্ডের সালিশ ব্যক্তিত্ব হাফিজুর রহমান আলুকদার মজলিশপুর গ্রামবাসীর উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন,গ্রামবাসীর পক্ষে নির্মান কমিটির সদস্যদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা সাধ্যমতো হিসাব নিরিক্ষন করেছি, মসজিদ নির্মান কাজের হিসাব নিয়ে মতোয়াল্লি ও নির্মান কমিটির সদস্যদের ভুল বুঝাবুঝি থেকে সন্দেহের উদ্ভব হয়েছে। আমরা সালিশ বোর্ড হিসাব পর্যবেক্ষন ও নিরীক্ষা করে ঠিক পেয়েছি, তবে হিসাবের খাতায় হিসাবের প্রক্রিয়ায় অনেক ত্রুটি আছে, যার কারনে হিসাব নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়, এবং ক্রমান্বয়ে সন্দেহ থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে ভুল বুঝবুঝির কারনে আজকের এই পরিস্থিতি এবং এলাকার গন্যমান্য সালিশ ব্যাক্তিত্ব জনাব আরিফুজ্জামান এহিয়া সাহেব নির্মাণ কমিটির সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরী ও আছদ্দর মিয়ার বিরুদ্ধে (সালিশ বোর্ডে দাখিলীয়) শাহজাহান সর্দার কর্তৃক ৩৮ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অভিযোগ দায়ের সম্পুর্ন রুপে ভিত্তিহীন হওয়ায় এবং সালিশ বোর্ড কোন সাক্ষ্য প্রমান না পাওয়ায় শাজাহান সর্দারের অভিযোগ আমলে নেন নাই।
সালিশ বোর্ডের বক্তব্যের পর বিজ্ঞ প্রধান অথিতি সভার সভাপতি ও সালিশ ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে সবার সম্মতিক্রমে ৮ জন সদস্যের সমন্নয়ে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করেন এবং ওই ৮ জন সদস্য থেকে মজলিশপুরের বয়োজেষ্ট সর্বজন শ্রদ্বেয় আব্দুল হামিদ সর্দারকে সভাপতি ও মাওলানা ফখর উদ্দিনকে মতোয়াল্লি (সেক্রেটারি) মনোনীত করে সাবেক কাউন্সিলর ইয়াহিয়া চৌধুরী, সাবেক মোতওয়াল্লী আছদ্দর মিয়া,সাবেক মোতওয়াল্লী আরজু মিয়া, আব্দুছ ছাদিক মাস্টার,আব্দুস সালাম ও এমরান আখন্দকে সাধারন সদস্য পদে মোট ৮ সদস্য বিশিষ্ট নতুন পরিচালনা কমিটি তিন বছরের মেয়াদ কাল রেখে ঘোষণা দেন। এবং সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন মনের অমিল, ভূল বুঝবুঝি মানুষের মধ্যে থাকবেই মানুষ হিসেবে আমদের উদারতা, ত্যাগ ও মহিমায় এ ত্রুটি বিচ্যুতি আল্লাহর ঘর মসজিদের স্বার্থে নিরসন করতে হবে তাই আপনাদেরকে বলি বিগত দিনের মত সবকিছু মসজিদের উন্নয়নে সবাই সম্পৃক্ত থাকবেন আপনাদের নিকট এই প্রত্যাশা। মসজিদের বিদায়ী মতোয়াল্লি আরজু মিয়া ও নব নির্বাচিত মতোয়াল্লি মাওলানা ফখর উদ্দিনকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে দুজনকে বলেন মসজিদের উন্নয়নে পারষ্পরিক সম্পর্ক রেখে ভবিষ্যতে কিছু করনীয় ও দিক নির্দেশনা দেন এবং মসজিদের সার্বিক কল্যাণে ও সারা জাহানের মুসলিম উম্মাহর শুভকামনা করে মোনাজাত করেন।
সাবেক কাউন্সিলর নির্মান কমিটির সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরী প্রধান অতিথি মহোদয়ের অনুমতি ক্রমে তিনি বলেন, আজ আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়েছ, অনেক ব্যাস্থতার পরও আপনি আমাদের কল্যানে এসেছেন, আপনার উছিলায় বিষয়টি সুষ্ঠ সমধান হয়েছে, আমরা প্রথমে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই এবং গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। মসজিদ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন দ্বিধা বিভক্তি প্রতিহিংসা বা শত্রুতা নেই। বিগত দিনে শুধুমাত্র হিসাব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মসজিদের ভিতরে আমার অনেকের সাথে অনেক রকম কথাবার্তা হয়েছে,আজ আমি মহামান্য প্রধান অতিথির সম্মুখে মহান আল্লাহ তালার কাছে প্রথমে করজোড়ে ক্ষ্মমা চেয়ে বলছি যে, এখানে উপস্থিত আমার শ্রদ্বেয় মুরুব্বীয়ান, ছোট বড় সহ প্রিয় যুবক ভাইয়েরা আছেন আপনারা সহ গ্রামের কাউকে যদি কোন কটুবাক্য দ্বারা কাহারও মনে কোন প্রকার আঘাত দিয়ে থাকি আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে গ্রামের সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।
সভাপতি মোহন চৌধুরী বিদায়ী মতোয়াল্লির ভূয়সি প্রসংশা করে, নতুন মতোয়াল্লিকে স্বাগত জানিয়ে এবং গ্রামবাসীর উদ্দ্যেশ্যে বলেন, সব ভেদাভেদ ভূলে সবাইকে একসাথে মিলেমিশে মসজিদের উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়ে সভার কাজ সমাপ্তি ঘোষনা করেন।