প্রতিনিধি ১৯ অক্টোবর ২০২০ , ১:১৪:৩২ অনলাইন সংস্করণ
শাল্লা প্রতিনিধি:: শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন থেকেই এই কমপ্লেক্সে স্থানীয় প্রভাব লেগেই আছে। অফিস প্রধান থেকে শুরু করে সবাই এক ব্যক্তিকেই কদর দিয়ে আসছেন। তিনি হচ্ছেন প্রধান অফিস সহায়ক নিশি কান্ত তালুকদার। হাসপাতাল থেকে শুরু উপজেলার সর্বত্রই উনার স্থানীয় একটি প্রভাব রয়েছে। আর এই প্রভাবের কাছে বন্দী হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও আউট সোর্সিং কাজ করা লোকগুলো। উনার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ আসলেও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উনার টাকা এবং প্রভাবের কাছে অভিযোগগুলো নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। ফলে শাল্লা হাসপাতালে তিনি একক রাজত্ব কায়েম করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শাল্লা হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা উত্তোলন থেকে শুরু করে সকল কিছুতেই উনাকে ভাটোয়ারা দিতে হয়। না হয় অন্যথায় শাস্তিভোগ করতে হয় এসব স্বাস্থ্য কর্মীদের। শুধু তাই নয়, সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জনের সাথে উনার ভাল লিয়াজু রয়েছে বলে এমন প্রভাব কাটাচ্ছে বলে হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়। জানা যায়, নিশিকান্ত তালুকদার ১৯৯৪ সালের ২৭ জানুয়ারী এমএলএসএস পদে যোগদান করেন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায়।
ছাতকে সাত বছর চাকুরির পর ২০০১ সালের অক্টোবরে শাল্লায় যোগদান করে তিনি। এর পর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। একটানা ১০ বছর কাটান শাল্লা উপজেলা হাসপাতালে।এরই মধ্যে হাসপাতালকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে এসেছেন তিনি।চেহারা পাল্টাতে তাকে তার নিজের,পরিবারের এবং আত্মীয় স্বজনের।
১০ বছর পর আবার বদলী হন তাহিরপুর উপজেলায়। তবে এরইমধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করে গত ১৬ অক্টোবর ২০১২ তারিখে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রধান সহকারি কাম হিসাব সহকারি পদে যোগদান করেন। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই ১৩ সালের জুলাই মাসে চলে আসেন নিজ উপজেলা শাল্লায়। দু’দফায় তিনি প্রায় ১৭ বছর একই কর্মস্থলে চাকুরী করেন নিজের মতো করে অত্যন্ত দাপটের সাথে।
নিশিকান্ত তালুকদারের বিরুদ্ধে ২০১৯ শাল্লা হাসপাতারের ১২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।উক্ত অভিযোগে উল্লেখ করা হয় হাসপাতালের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণ, তাদের মাসিক বেতন থেকে অর্থ কেটে নেয়া, টাকার বিনিময়ে ছুটি প্রদান, ভূয়া বিল-ভাউচারে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়া, বদলী জনিত উৎকোচ গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু নিশিকান্তের লম্বা হাত থাকার কারনে তার কোন তদন্ত ও হয়নি।
অনুন্ধানে আরো জানা যায়, টাকা না দিলে হাসপাতালের অন্য কর্মচারীদের শান্তি বিনোদন ভাতার ফাইলসহ অন্যান্য আর্থিক প্রাপ্যতার ফাইল নাড়েন না তিনি। তাছাড়া নিয়োগ বাণিজ্যেও পিছিয়ে নেই তিনি।২০১৮ সালে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে লোক নিয়োগে তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ অনেকের।
তাছাড়া তিনি ৩য় শ্রেণির একজন কর্মচারী হয়ে প্রায় ১৭ বছর ধরে একটি ১ম শ্রেণির সরকারি বাস ভবন দখল করে আসছেন নির্বিঘ্নে। যেখানে অনেক মেডিকেল অফিসাদের থাকতে হচ্ছে হাসপাতালের বাইরে অথবা বাসা ভাড়ায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের অনেক কর্মচারী জানান, এবছরও নিশিকান্ত তালুকদার কর্মচারীদের প্রাপ্য শ্রান্তি বিনোদন ভাতার টাকা হতে ১৫শ’ থেকে ২৫শ’ করে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।
শাল্লা থেকে সদ্য বদলীকৃত সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শেখ মোঃ নাসির উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ভাই আমি বদলী হয়ে চলে এসেছি। কি আর বলবো ; নিশিদার যন্ত্রনায় আমরা মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করেছিলাম। মূলত টাকা না দেয়ায় শহিদুল ইসলাম ও শামীমের যোগদানপত্র সে উপরে পাঠায়নি বলেই এ অভিযোগ করেছিলাম। এখন আমি ও শহিদুল বদলী হয়ে চলে এসেছি। তাই কি হয়েছে জানি না।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফেরদৌস আক্তারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি, সবকিছু আমি এখনো অবহিত নই। যদি কারো কাছ থেকে নিশিকান্ত শ্রান্তি বিনোদন ভাতা হতে উৎকোচ নিয়ে থাকে লিখিত অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা নেবো। নিশিকান্ত তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে সরকারী বাসাতে ভাড়া দিয়েই অবস্থান করছেন।
এবিষয়ে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ সামসুদ্দীন এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমার কাছে এরকম কোন অভিযোগ আসেনি। এরকম অভিযোগ ফেলে শুধু ব্যবস্থা নয় চুড়ান্ত ব্যবস্থা নিব।