প্রতিনিধি ৫ অক্টোবর ২০২০ , ৩:০৪:৫২ অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার।। সিলেট বিভাগের সর্বত্র ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনাকারী অন্যতম বৃহৎ এনজিও ‘এফআইভিডিবি’র বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিধিবহির্ভূত ভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায়, ইচ্ছাকৃত দেয় টাকার চেয়ে স্থিতি কম দেখানো সহ ঋণ গ্রহীতাদের করোনা পরিস্থিতিতেও টাকার জন্য অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ এবং পুলিশের ভয় দেখিয়ে কিস্তি আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে।
সিলেট সদরের জালালাবাদ থানাধীন তেমুখী (মোগলগাঁও) শাখা ব্যবস্থাপক মহি উদ্দিন এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চলছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী গ্রাহকদের।
কেস স্ট্যাডি-১।
লাভলী বেগম স্বামী রিপন মিয়া, উত্তর হার্ট খোলা শিবের বাজার, সদর।
৮/১২/১৬ তারিখে এফআইভিডিবি টুকের বাজার শাখা থেকে সিএনজি বাবৎ ঋণ নেন ৩৬০’০০০/- টাকা।
৩৬০০/- টাকা করে ১৪৪ কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ১’২০’০০০/- ডাউন পেমেন্ট দিয়ে।
৭/০২/২০১৯ ইং তারিখ পর্যন্ত কিস্তিতে আরও পরিশোধ করেছেন অফিসের হিসেবে ২,৩৮,৪০০/- টাকা কিন্তু পাস বইয়ের টাকা যোগ করে দেখা গেছে পরিশোধ করা হয়েছে ২৫৩৭৩০/- টাকা। এখানে গ্রাহকের ১৫,৩৩০/- টাকা যোগফলের ইচ্ছাকৃত ভুলের ছদ্মবেশে মেরে দেওয়া হয়েছে।
ডাউন পেমেন্ট ও কিস্তি সহ ৩’৭৩’৭৩০/- টাকা পরিশোধ করার পরেও লভ্যাংশের টাকা পরিশোধে কিস্তি প্রদানে বিলম্বের কারণে লাভলী বেগমের সিএনজি প্রায় ১৮ মাস থেকে চিজ করে রেখেছে ‘এফআইভিডিবি। কিন্তু গ্রাহকের প্রদেয় -৩’৭৩’৭৩০/- টাকা ও সঞ্চয় স্থিতি ১৬০০৯/— টাকা এখনো ফেরত দেয়নি অথবা গাড়িও চালনার অনুমতিও দিচ্ছে না, এছাড়াও ১৬ মাস পূর্বে গাড়ি ফেরত দেওয়ার শর্তে আরও ২০’০০০/- টাকা গ্রাহক নিজের ঘরের ব্যবহৃত ফার্নিচার বিক্রি করে প্রদান করলেও এখনো কথা রাখেনি এফআইভিডিবি।
একদিকে পৌনে চার লাখ টাকা ধারদেনা করে দিয়েও এনজিওর কিস্তি পরিশোধের চাপে দিশেহারা অপরদিকে আয় রোজগার অবলম্বন গাড়ি হারিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে লাভলী বেগমের পরিবার। এব্যাপারে লাভলী বেগমের স্বামী রিপন মিয়া দৈনিক ভাটি বাংলা ডটকম কে বলেন- ডাউন পেমেন্ট, সঞ্চয় ও কিস্তি সহ ৩’৮৯’৭৩৯/- টাকা পরিশোধ করার পরেও এফআইভিডিবি আমার সিএনজি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করায় আমি দেড় বছর কর্মহীন! আমার গাড়ি না দিলে কিভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো-? অনেক কাকুতি মিনতি করেও এফআইভিডিবি’র রূঢ় আচরণ ও পুলিশ ও জেলের ভয় দেখানো বন্ধ হয়নি। অপারগ হয়ে বলেছিলাম গাড়ি ফেরত যখন দিবেন না আমার জমা দেওয়া পৌনে চার লাখ টাকা ফেরত দিয়ে দেন তারপরও ওরা টাকাও দিচ্ছেনা আবার গাড়িও দিচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমি অসহায় গরিব মানুষ পরিবারের ভরণপোষণও চালিয়ে নিতে পারছিনা। আমি জাতির বিবেক সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কেস স্ট্যাডি–২।
সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানাধীন পাগইল গ্রামের বাসিন্দা নূর বেগম ‘এফআইভিডিবি’র সদস্যভুক্ত হন।
প্রথম ১ বার ঋণ নিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছেন নিয়মিত ভাবে।
এজন্য অফিস থেকে মিষ্টিমুখ করানো হয়েছিল গ্রাহককে।
২য় দফায় বিগত ১৬ জুলাই ২০১৯ সালে ৩৫০,০০০/- টাকা ঋণ তুলেন তিনি।
ঋণের পাস বইয়ে ৩৮০০/ টাকা করে ১৪৪ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ হওয়ার কথা কিন্তু এফআইভিডিবি’ প্রতি কিস্তিতে নিচ্ছে ৪০০০/- টাকা এ হিসেবে প্রতি কিস্তিতে ২০০/-টাকা করে ১৪৪ কিস্তিতে অতিরিক্ত নিচ্ছে মোট ২৮,৮০০/- টাকা।
সর্বশেষ ২৪ মার্চ ২০২০ ইং তারিখ পর্যন্ত ৩২ কিস্তিতে জমা হয়েছে ১২৬,০০০/ টাকা।
১৯নং কিস্তির ৪০০০/- টাকা জমা করে স্থিতি হওয়ার কথা ৭৬০০০/- টাকা অথচ লেখা হয়েছে ৭৪,০০০/- টাকা!
অফিসে অভিযোগ জানালেও কোন ব্যবস্থা নেননি শাখা ব্যবস্থাপক মহি উদ্দিন। এছাড়াও অতিরিক্ত ২০০/- টাকা নেওয়ার বিষয়ে কোনো সদুত্তর পাননি গ্রাহকরা।
কেস স্ট্যাডি-৩।
আঙ্গুর বেগম লামারগাঁও, ১১০’০০০/- টাকা ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিগত ১৭/১২/২০২১৭ ইং তারিখে সিএনজি’র জন্য ঋণ তুলেছেন ৩৯০’০০০/- টাকা। পাস বইয়ের লেখা ৩৯০০/- টাকা করে ১২৪ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ হবে! কিন্তু প্রতি কিস্তিতে প্রকৃত পক্ষে নেওয়া হচ্ছে ৪২০০/- এ হিসেবে প্রতি কিস্তিতে ৩০০/ টাকা করে ১৪৪ কিস্তিতে অতিরিক্ত নিচ্ছে ৪২৩০০/- টাকা!
৪/০৯/২০২০ তারিখ পর্যন্ত ৩,৯০,০০০/- টাকা ঋণের বিপরীতে পরিশোধ করা হয়েছে ৪,২৬,৪০০/- এবং আঙ্গুর বেগমের সঞ্চয় স্থিতি রয়েছে ২২,৪৩২/- টাকা। তারপরও করোনা পরিস্থিতিতে সুদের লভ্যাংশ আদায়ে মরিয়া হয়ে গ্রাহকদের জেল ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে কিস্তি আদায় করছে ‘এফআইভিডিবি’।
এফআইভিডিবি’র শাখা ব্যবস্থাপকের বক্তব্যঃ
উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে তেমুখি মোগলগাঁও শাখা ব্যবস্থাপক মহি উদ্দিন দৈনিক ভাটি বাংলা ডটকম কে বলেন আমাদের উপর আনিত অভিযোগ মিথ্যে, ওরা অফিসে আসে না কে? বলেই আর কোনো প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।
এবিষয়ে এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন সিলেট জেলা শাখার সভাপতি আব্দুস ছোবহান সানী দৈনিক ভাটি বাংলা ডটকম কে বলেন এফআইভিডিবি’র মতো বৃহৎ একটি এনজিও’র স্থানীয় কর্মকর্তারা সাধারণ গ্রাহকদের সাথে এমন প্রতারণা করবে তা আমরা ভাবতেও পারিনা।
একাধিক ঋণগ্রহীতা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন এফআইভিডিবি তাদের নির্ধারিত কিস্তির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের, এছাড়াও আমরা অনেকের পাসবই চেক করে দেখেছি জমা দেওয়া টাকার সাথে হিসেবে গড়মিল রয়েছে অর্থাৎ ইচ্ছেকৃত ভুলে শুধুমাত্র গ্রাহকদের টাকাই কম লেখা হয়েছে একাধিক বইয়ে! আমি নুর বেগম সহ অন্যান্য গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের অফিসে সরাসরি গিয়েও সদুত্তর পাইনি উপরন্তু রূঢ় আচরণ করা হয়েছে যা শালীনতা বিবর্জিত, আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি।
এছাড়াও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী আব্দুস ছোবহান সানী বলেন বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস এর প্রাদুর্ভাবে মার্চের শেষে বাংলাদেশে লকডাউনের কারনে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে পড়ে, বিশেষ করে পরিবহন শ্রমিকদের অবস্থা বেশি সূচনীয় হয়ে পড়ে। আর শহরতলীতে এফআইভিডিবি’র অধিকাংশ গ্রাহকই সিএনজি চালক ও ঋণগ্রহীতা। এমতাবস্থায় গ্রাহকদের পাশে না দাড়িয়ে এফআইভিডিবি গ্রাহকদের জেল পুলিশের ভয় দেখিয়ে কিস্তি আদায়ে বাদ্য করছে আবার এই সমস্ত দরিদ্র মানুষের সাথে প্রতারণা করে তাদের হার ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকা ছয়নয় করে আত্মসাৎ করেছে আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই অনিয়মের অভিযোগ যেন খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং করোনা পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের সাথে যেন নমনীয় আচরণ করা হয়।