প্রতিনিধি ২৩ অক্টোবর ২০২০ , ৪:৫৮:৫১ অনলাইন সংস্করণ
তারেক হাবিব।। ১ বছর আগেও যিনি হবিগঞ্জ শহরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন মাত্র কয়েকটি দিনের ব্যবধানে আজ সে সাংবাদিক। কখনো মানবাধিকার কর্মী, কখনো পুলিশের সোর্স পরিচয়ে অফিসপাড়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অফিসপাড়া। নানা অভিযোগে একাধিকবার কারাভোগ করেও থেমে নেই তার দৌড়াত্ব। অনুসন্ধধানে জানা যায়, কখনো পুলিশের সোর্স পরিচয়ে আবার কখনো টেস্পু চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও ভুয়া পত্রিকার লোগো আর মানবাধিকার কর্মীর পরিচয়ে ঘুছে যায় তার রিক্সা চালানো। হঠাৎ করে সরিষার তৈল মেখে পুলহাতা শার্ট পড়ে বুকে ঢাকার নাম না জানা পত্রিকার কার্ড ঝুলিয়ে আজ এ অফিস তো কাল অন্য অফিস। জমির আলী শহরতলীর পশ্চিম ভাদৈ গ্রামের হাফিজ ভিলার বাসিন্দা মৃত মকবুল হোসেনের পুত্র। সাংবাদিক পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। জমির আলীর অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি কেউ; বিআরটি অফিস, হবিগঞ্জ ভুমি অফিস ও হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল কিংবা আদালত পাড়ায় বসে থাকা অসহায় বেদে সম্প্রদায়ের লোকও। তথ্য আছে প্রতিটি অফিসে চাঁদা নিতে ওৎ পেতে বসে থাকে জমির আলী। জমির আলীর বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও চুরির মামলাও। হবিগঞ্জ শহরতলীর বহুলা গ্রামের জনৈক যুবতীকে চাকুরীর প্রলোভনে ঢাকায় একটি আবাসিক হোটেলে আটকে রেখে ধর্ষণ করে জমির আলী। পরে ওই যুবতি হবিগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করলে বেশ কিছুদিন জেলও কাটতে হয় তাকে। সংসার জিবনে একাদিক বিয়ে করলেও চতুর জমির আলী এক বউকে নিয়ে সংসার করেন হবিগঞ্জে অন্য বউকে রেখেছেন ঢাকায়। ২০১৭ সালে ৩১ মার্চ তৎকালীন সদর থানার ওসি মোঃ ইয়াসিনুল হক চাঁদাবাজি ও চুরির অভিযোগে জমিরকে গ্রেফতার করেন হাতে-নাতে। এরপর থেকেই বেড়িয়ে আসে তার অজানা কাহিনী। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ৮ বছর আগে শায়েস্তাগঞ্জের একটি চুরির ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানার পুলিশের নজরে আসে জমির আলী। এরপর থেকে তিনি শুরু করে পুলিশের সোর্সের কাজ। পরে তিনি যুক্ত হয় আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনের হবিগঞ্জ জোনাল কার্যনির্বাহী কমিটিতে। নিজেকে ওই কমিটির সভাপতি বলেও দাবী করে জমির আলী। শুধু তাই নয়, জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশনের সভাপতি দাবী করে ‘মুদি দোকান থেকে অফিস পাড়া’ দাপিয়ে বেড়ায় সর্বত্র। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী এ দুটো পরিচয়ে ঘুরে গেছে তার ভাগ্যের চাকা। বিভ্রান্তি আর ধাধায় ফেলে ‘আচ্ছা-আচ্ছা’ লোকদেরও কাবু করছে সে। যদিও এসব বিষয় অস্বীকার করে জমির আলী। মানুষকে সাহায্যের নামে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আসকের প্যাডে নোটিশ করে অফিসে তলব করে আদায় করে কাড়ি-কাড়ি টাকা। সর্বদাই তার বুক পকেটে বিভিন্ন সংস্থার ঝুলেয়ি সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। তার এসব অপকর্মের সংবাদ স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ হলে সে কিছুদিন গা-ডাকা দিলেও পুনরায় যেই সেই। স¤প্রতি তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে আসকের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মনোয়ার আলী জানান, জমির আলী মানবাধিকারের কেউ নয়, সে কথিত সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী। তার বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।