• ফিচার

    কারাতে কন্যার( আয়শা হোসাইন মিম) কিছু কথা —– ফারজানা মৃদুলা

      প্রতিনিধি ২৫ অক্টোবর ২০২০ , ১:০২:১২ অনলাইন সংস্করণ

    ‘নারী তুমি সৃষ্টির শ্রেষ্ট’ নারী তুমি মহিয়ান, গোপনে নিরবে গড়েছো বিশ্ব, সে কি তুমি জানো না”।

    ছোট বেলায় বাবার কারাত খেলা দেখতে গিয়ে যখন দেখতো, প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভয়ে কাবু হয়ে পালাচ্ছে, তখন মনে ভেতর খুব বেশী আনন্দের অনুভুতি হতো।

    আর বাবাকে যখন কারাতের “আয়রন ম্যান” উপাধি তে সম্মোধন করা হতো তখন নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ হতো এবং হয়। আমি এমন একজন মানুষের সন্তান, যিনি কন্যা বলে কোনদিন আলাদা চোখে দেখেন নি, বরং দুই কন্যাকেই সুযোগ্য করে তুলতে সহযোগীতা করেছেন।
    বলছিলাম আয়রন ম্যান এর ১ম কন্যা আয়েশা হোসাইন মীম এর কথা।
    এখন যাকে কারাতে কন্যা বলা যায় অকপটে।
    বাবা মায়ের কোন পুত্র সন্তান নেই বলে,অনেকেই আফসোস করতো, সেই কথার ওপর জিদ চেপেই, কারাতের জগতে নাম লেখানো আর আজ এ অবদি সফলভাবেই পথ চলা।
    শৈশব, কিশোর বেলা কেটেছে ঢাকা মিরপুর -১১ তে ।
    বাবা মো: হোসেন আলী জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় ছিলেন ১৯৮৮-২০০৪ পর্যন্ত। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে কারাতে কন্যা মীম এর বাবাকে নিয়ে গঠিত হয় প্রথম বাংলাদেশ দল, যারা WORLD CHAMPIONSHIP খেলেন। এছাড়াও উনি SAF GAMES খেলেন।

    আয়শা হোসাইন মিম ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের দিকে ১ম খেলতে নামেন এবং ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট ফেডারেশন থেকে ব্লাকবেল্ট টেস্ট দিয়ে বেল্ট অর্জন করে আমাদের এই কারাতে কন্যা।শুরুর দিকে মেয়ে হিসেবে যে প্রতিবন্ধকতা পার করেনি তা কিন্তু নয়। মেয়ে হিসেবে অনেকেই ছোট করে দেখেছিলো তবে, সেই সূযোগ এখন আর নেই।আনসার দলের হয়ে কারাত খেলায় অংশ গ্রহণ করে সবসময়।পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইনস্ট্রিটিউটে কারাতের প্রশিক্ষণ ও দিয়ে থাকে।

    কারাতের প্র্যাকটিস করতে গিয়ে পরিচয় হয়,জাতীয় ভলিবল খেলোয়ার এর সাথে,১ম দেখা খেলার মাঠেই ০৯ এপ্রিল, ২০১৮সালে। সেই ১ম দেখার ক্ষণটি বেশ যত্নেই মনের খাতায় লিখে রেখেছেন আমাদের সাহসী কারাতের কন্যা। তখন দুজনই নিজ নিজ টিম-এর সাথে প্র্যাকটিস করতো মিরপুর -১০ শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে। প্রথম দেখায় ভালোলাগা এবং তারপরই পারিবারিক ভাবে শুভপরিনয় সম্পন্ন হয়। ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে। তারপর ২০২০ এর ০৮,ফেব্রুয়ারি কোলজুড়ে আসে এই সফল যুগলের ছেলে মুহতাসিম সাফওয়ান আর্য্য।

    দীর্ঘদিন যাবত দেখেছি আমাদের দেশে নারীরা অবহেলিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারীত হয়ে আসছে। আর এখন ধর্ষন যে হারে বেড়েছে,সেই বিষয়গুলো মীমের মনে বড্ড পীড়া দেয়, এই বিষয়ে মীম বলেন, নরপিচাষ নামক কলংক আড়াল করে দিতে চাচ্ছে আমাদের নারীদের অস্তিত্বটাকে।

    আমাদের সমাজের অনেক অনেকভাবে এর জন্য আন্দোলন -মিছিল করছেন। এ পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে, শুধু আন্দোলন নয় আমরা যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের তৈরি করবো। যেন আমরা নিজেদের আত্নরক্ষা নিজেরাই করতে পারি। অন্তত একজন হলেও বুঝিয়ে দিতে পারি যে, দেখ আমরা দূর্বল নেই আর। এই বিষয়ে মিম এর জীবনসঙ্গী মো: আব্দুল মুমিন সাদ্দাম প্রচন্ড ভাবে সহযোগিতা করেন, এবং বলেন আমি তো আছি তুমি শুরু করো নারীদের আত্নশক্তি /আত্নরক্ষা বৃদ্ধিতে উৎসাহী করো।
    যেমনি কথা তেমনি কাজ দুজনে মিলেই উদ্দ্যোগ নেয়, সারা দেশে নারীদের আত্মরক্ষা শিক্ষামূলক কর্মশালা পরিচালনা করতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে।ব্যাক্তিগত জীবনে স্বামী সন্তান ও শাশুড়ী মাকে নিয়ে গোছানো হাসিখুশি এক সংসার।শাশুড়ী সম্পর্কে মীম বলে “আল্লার এক আর্শিবাদ স্বরুপ“ যিনি আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেন।আমাকে অনেক বেশি আদর করেন।হবিগঞ্জের চুনারোঘাটে শশুর বাড়ীর সুবাধে নারীদের আত্নরক্ষা শিক্ষা মূলক কর্ম শালায় কাজ করে।তখন মায়ের কাছে(শাশুড়ী) ছেলেকে রেখে নিশ্চিন্তে আমি কাজ করতে পারি।শাশুড়ী মিমের ভালো বন্ধুও বটে।

    মিমের জীবনের স্মরণীয় সময়ের কথা জানতে চাইলে ,কারাতে কন্যা বলেন, ভালো স্মৃতি অনেক রয়েছে, যখন টিমের সাথে থেকে প্র্যাকটিস করি, প্রত্যেকটা দিনই একটা নতুন স্মৃতির যোগান দেয়। আর খারাপ স্মৃতি এটাই যে, সাফ গেমস ২০১৯ এর ক্যাম্প-এ থাকা সত্ত্বেও খেলতে যেতে পারেনি! এটা একটা স্বপ্ন ছিলো মিমের।কিন্তু তারপরও মনে করে কিছু হারিয়েই কিছু পেতে হয়, সেই সাফ গেমস হারিয়ে কারাতে কন্যা পেয়েছে গোল্ডেন বয়। যে কিনা মিমের নতুন অনুপ্রেরণা আর্য্য।

    এই কারাতে কন্যার সাথে দেখা হয়ে মনে আরো বেশি আত্ন বিশ্বাস জন্ম হলো আর মনে হলো প্রতিবাদের ভাষা যদি আত্ন রক্ষার কৌশল কারাতেও হয় তবে বেশ হয়।আমরা নারী পেরেছিলাম পারি, পারবো ইনশাআল্লাহ্।

    লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

    আরও খবর

    Sponsered content