প্রতিনিধি ৪ অক্টোবর ২০২০ , ২:২৩:০৭ অনলাইন সংস্করণ
কানাইঘাট প্রতিনিধি: সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির নারাইনপুর গ্রামে জোরপূর্বক বসত ভিটা দখল করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মৃত ময়না মিয়ার স্ত্রী সিতারা বেগম (৫০) হত্যা মামলার আসামীরা আদালত থেকে জামিনে এসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মামলার বাদী নিরীহ দিনমজুর মো: জায়নুল এবং তার পরিবারের লোকজনকে নানা ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি-দমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৬টায় প্রতিপক্ষ নারাইনপুর গ্রামের মৃত ওয়াব উল্লার পুত্র সুরুজ আলী, সুরুজ আলীর পুত্র ছমির উদ্দিন, জমির উদ্দিন, জহির উদ্দিন, সুরুজ আলীর মেয়ে হোসনা বেগম, রেসমা বেগম, সুরুজ আলীর স্ত্রী মেরাজুন বেগম সহ আরো কয়েকজন পরিকল্পিত ভাবে একই গ্রামের দরিদ্র নিরীহ ও দিনমজুর মো: জায়নুল আহমদের নিজ বসত বাড়িতে এসে জায়নুল ও তার পরিবারের লোকজনকে বসত বাড়ীর জায়গা জমি হইতে উচ্ছেদের লক্ষ্যে লোহার রড, সাবল সহ মারাত্মক অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একই গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার পুত্র মো: জায়নুল, আইনুল ও ময়না মিয়ার স্ত্রী সিতারা বেগমের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে। এসময় স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে এলে ডাক্তাররা তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সিওমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় সিতারা বেগমের অবনতি হলে তাকে চিকিৎসার জন্য ২৯ মার্চ ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে লালা বাজার নামক স্থানে যাওয়ার পর সিতারা বেগম মারা যান।
এঘটনায় সিতারা বেগমের পুত্র মো: জায়নুল কানাইঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানার মামলা নং- ২৩, তারিখ ২৯/০৩/২০২০ইং। উক্ত মামলার উল্লিখিত আসামীদের মধ্যে সুরুজ আলী ও তার মেয়ে হোসনা বেগমকে কানাইঘাট থানা পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে এবং মামলার অন্যান্য আসামীরা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিজ্ঞ আদালত আসামীদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এতে আসামীরা সম্প্রতি জামিনে এসে সংঘবদ্ধ হয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমান ১১টায় মামলার বাদী নিরীহ জায়নুলের বাড়ীতে গিয়ে তার পরিবারের লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ সহ নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এতে নিরীহ জায়নুল ও তার পরিবারের লোকজন বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এতে জায়নুল ও তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেছেন। কানাইঘাট থানার জিডি নং- ১৬৭৪, তারিখ- ২৬/০৯/২০২০ইং।
এঘটনায় সিতারা বেগম হত্যা মামলার বাদী মো: জায়নুল বলেন, আমি অত্যন্ত দরিদ্র ও অসহায় লোক। আমার বসত বাড়ি দখলের জন্য সন্ত্রাসী সুরুজ আলী ও তার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিত ভাবে হামলা করে আমার মা সিতারা বেগমকে হত্যা করেছে। এখন তারা জামিনে এসে আমাকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানা ভাবে হুমকি-দমকি দিচ্ছে। আমি মামলা তুলে না আনলে তারা আমাকে বিভিন্ন মামলায় জড়াবে বলে হুমকি দিচ্ছে। তারা সন্ত্রাসী ও মাস্তান প্রকৃতির লোকজন হওয়ায় বেপরোয়া ভাবে আমার পরিবারের লোকজনকে গালিগালাজ করছে। তাই নিরোপায় হয়ে আমি ও আমার পরিবারের জানমালের নিরাপত্তার জন্য কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেছি।
এদিকে সিতারা বেগম হত্যা মামলার প্রধান আসামী বর্তমানে জামিনে থাকা সুরুজ আলী বলেন, উক্ত জায়গা-জমি সবই আমার। সিতারা বেগম হত্যা মামলার বাদী মো: জায়নুল মামলার তারিখে আদালতে যায়না। সে আমাদের উপর নানা ভাবে অপপ্রচার চালায়। আমি গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার কিছু লোকজন নিয়ে নারাইনপুর গ্রামের মুরব্বিয়ান সহ আমার জায়গা জমি ও বাড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। এতে সে আমাদের বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় জিডি করেছে। তিনি বলেন, সে যতই জিডি আর মামলা করেনা কেন? আমাদের মামলায় সে জেল কাটবেই। এছাড়া আমার জায়গা-জমি আমি যেভাবে হউক তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করবো বলে জানান তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মুজির উদ্দিন বলেন, সিতারা হত্যা মামলার বাদী মো: জায়নুল একজন দরিদ্র ও অসহায় নিরীহ লোক। সে দিন মজুরের কাজ করে। সম্প্রতি সিতারা হত্যা মামলার আসামীরা মামলার বাদী জায়নুলের বাড়িতে এসে মামলা প্রত্যাহার সহ বসত বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি-দমকি দিয়ে গেছে বলে মামলার বাদি জায়নুল আমাকে অবগত করেছে। তিনি বলেন, হত্যা মামলার আসামীরা জামিনে এসে বাদীকে হুমকি-দমকি দেবে এটা বেআইনী।
এদিকে কানাইঘাট থানার এসআই স্বপন চন্দ্র সরকার বলেন, সিতারা হত্যা মামলার বাদী মো: জায়নুল কানাইঘাট থানায় সে ও তার পরিবারের জানমালের নিরাপত্তার জন্য একটি সাধারণ ডায়রী করেছে। আমি বাদীর অভিযোগটি বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছি। আদালতের অনুমতি পেলে বাদীর অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এছাড়া আসামীরা জামিনে এসে বাদী ও তার পরিবারের উপর মামলা প্রত্যাহারের চাপ প্রয়োগ করার বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো বলে জানান তিনি।