• অনিয়ম / দুর্নীতি

    দিরাই’য়ে শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ, ৭ স্কুলে ১৪ জন প্রধান শিক্ষক!

      প্রতিনিধি ৮ জুলাই ২০২০ , ৮:৪৭:০৫ অনলাইন সংস্করণ

    স্টাফ রিপোর্টার।।  সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সাতটি নতুনজাতীয়করণকৃত  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রয়েছেন প্রতিটিতে ২জন করে! প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) নিয়োগ ও বিদ্যালয় পরিচালনা ব্যয় নিয়ে দিরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আবদুল হালিমের এর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
    ৭ টি বিদ্যালয়ে দুজন করে প্রধান শিক্ষক!
    অভিযোগে জানা যায়- পূর্ব চন্ডিপুর, পশ্চিম শরীফপুর, রাধানগর, ভাটিধল, পিতাম্বরপুর,ধাপকাই ও নতুন কর্ণগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও গত ২৬/৬/২০১৮ ইং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন বালা ও দিরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুল হালিমের যোগসাজশে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা হাসিলের জন্য প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) নিয়োগ দেয়া হয় এসব বিদ্যালয়ে, কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি পূর্ব থেকে দায়িত্ব পালনকারী বিদ্যালয় সমূহের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকগণ।
    একই বিদ্যালয়ের চলতি ও ভারপ্রাপ্ত  দুইজন করে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন!
    একদিকে চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষকরা পাঠদান না করেও বসেবসে বেতন ভাতা তুলছে দুই বছর ধরে, অপর দিকে অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।
    অনুসন্ধানে জানা যায় দিরাই উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য ছিল ৬৩ টি এরমধ্যে পদায়ন করা  হয়েছিল ৩৭ টি পদে এ হিসাবে ২৬ টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য ছিল।
    সেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদায়ন না করে বিচারাধীন থাকা বিরোধপূর্ণ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে জটিলতা তৈরি করা হয়েছে।
    পূর্ব চন্ডিপুর, শরীফপুর ও রাধানগর সহ ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক পদায়নের উপর হাইকোর্ট এর স্থগিতাদেশ (যদিও পরে রিট খারিজ হয়) ও পরবর্তীতে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে রাজনৈতিক প্রভাবে ও অর্থনৈতিক অবৈধ সুবিধা লাভের নিমিত্তে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকবৃন্দ।
    অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগঃ
    সহজ যাতায়াত ও পৌরসভার ভিতরে থাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার স্ত্রী’দের রাধানগর ও পূর্ব চন্ডিপুর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
    উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট অবিরাম তালুকদারের স্ত্রী আভা রাণী সরকার রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও আওয়ামী লীগ নেতা ধনির রঞ্জন এর স্ত্রী শিউলী রাণী সাহা’কে পূর্ব চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও পশ্চিম শরীফপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রায়হানা সিদ্দিকা’কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
    বাকি ৪ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২টি থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের রেখে চলতি দায়িত্বে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে টাকার বিনিময়ে অভিযোগ এক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের।
    রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামিমা আক্তার, পূর্ব চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ওয়াকিবুর রহমান ও পশ্চিম শরীফপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার এর অভিযোগ শিক্ষা অফিসারের প্রস্তাব মতো টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষকদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় স্ট্রে অর্ডার থাকা সত্ত্বেও আমাদের ৩ বিদ্যালয়ে জঞ্জাল রেখে দেওয়া হয়েছে।
    উচ্চ আদালতের নির্দেশনা,  যুগ্ম-সচিব এবং বিভাগীয় উপ-পরিচালকের নির্দেশনা অমান্য করে দিরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুল হালিম অনিয়ম, দুর্নীতি ও চরম স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়েছেন।
    বিদ্যালয়ের সংস্কার সহ আনুসাঙ্গিক কাজের পরে ব্যয় ভাউচার সাপেক্ষে
    ব্যাংক চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধের সরকারি নিয়ম থাকলেও
    এস এম আব্দুল হালিম সম্পূর্ণ অনৈতিক ভাবে যেসব চলতি দায়িত্বের পদায়নকৃত প্রধান শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ের খরচ করাতো দূরের কথা যাহারা পাঠদান করেন না এবং বিদ্যালয়ে আসেন না তাদের কে জনপ্রতি লক্ষাধিক টাকার চেক ও নগদ টাকা হস্তান্তর করেছেন অথচ বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ খরচপত্র ও সার্বিক পরিচালনা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক’রাই করে আসছেন!
    এমতাবস্থায় উপরোক্ত টাকা আত্মসাৎ করার আশংকা করা হচ্ছে।
    এ বিষয়ে পূর্ব চন্ডিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ওয়াকিবুর রহমান বলেন- বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি,পিটিএ এবং অন্য কোন কমিটিকে তোয়াক্কা না করে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগসাজশে চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষকগণ অর্থ আত্মসাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়েও এবং কোনো রুপ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করে ও মিথ্যে খরচ দেখিয়ে টাকা গ্রহণ করেছে, এতে একদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের বিদ্যালয় পরিচালনার অবমূল্যায়ন এবং অন্যদিকে তাদের খরচের টাকা প্রাপ্তি নিয়েও ধোয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
    ওয়াকিবুর রহমান বলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আবদুল হালিম স্যার আমার কাছে গত দুই বছরের ক্ষুদ্র মেরামত, রুটিন মেইনটেন্স এবং স্লিপের টাকার ভাগ দাবি করেন- আমি বলেছিলাম মেরামতের টাকা ঘাটতি থাকায় আমরা মেয়র মহোদয়ের কাছ থেকে টিন সহায়তা এনেছি এবং এমপি মহোদয় আমাদেরকে টিন সহায়তা করেছেন। তাছাড়া কমিটির সহায়তায় কাজ করা হচ্ছে আমি কোন ভাগ দিতে পারব না, তখন শিক্ষা অফিসার বলেছিলেন মেয়র টেয়রের দোহাই দিয়া লাভ নাই টাকা ছাড়া এদেশে কোন কাজ হয়না। কমিটি ছাড়া কিভাবে টাকা ব্যবহার হয় আপনি দেখবেন আর টাকা পাবেন না। আজ তিনি ও চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকদের যোগসাজশে (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে অবহিত না করেই) অর্থ প্রধান করে তার সেই ক্ষমতা দেখালেন।
    শিক্ষা অফিসারের বক্তব্যঃ উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দিরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুল হালিম দৈনিক ভাটি বাংলা-কে বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন বালা এতে আমার কিছু করার নেই!

    হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিষয়ে উনি বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের রিট খারিজ হয়েছে তাই চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে!
    বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত চলতি দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের অনূকূলে খরচের টাকা কেন দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে এস এম আব্দুল হালিম বলেন ওয়াকিবুর সহ গত জুন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পাওয়া টাকা পরিশোধ করা হয়েছে আর এখন উপজেলা শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের টাকা দেওয়া হয়েছে।
    উনারা স্কুল কমিটিকে সাথে নিয়ে টাকা ব্যবহার করবেন!
    অনুপস্থিতির বিষয়ে শিক্ষা অফিসার বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অংশগ্রহণে বাধা প্রদান করছেন।

    আরও খবর

    Sponsered content