প্রতিনিধি ১৩ জুন ২০২০ , ২:৪২:০৩ অনলাইন সংস্করণ
ফারজানা মৃদুলাঃ
জনজীবনে এখন ও করোনার কালোছায়া অদৃশ্য জালের মত চারিদিকে ছেয়ে আছে।
এই অপশক্তি যেন কোন ভাবেই ধ্বংস হতে চাইছে না।এর প্রভাব আমাদের জীবনের স্বাভাবিকতা কেড়ে নিয়েছে। সাধারন পরিবারগুলো বড় অসহায় আজ । শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৭ অনুযায়ী, শহরাঞ্চলে প্রায় ৪৪ শতাংশ আবাসিক বাড়ি, ভাড়া দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বাড়ি ভাড়া বাবদ মোট মাসিক ব্যয়ের ১৭.২৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ হয়। অর্থাৎ একটি পরিবারের মোট মাসিক ব্যয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশই বাড়ি ভাড়ার বাবদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এতে কোন অভিযোগ কারোরই ছিলো না ,কারন জীবনধারা অব্যহত রাখতে যা যা প্রয়োজন তা জোগানোর জন্যই মানুষ নিজেকে কর্মজীবনে জড়ায় আর এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে লকডাউনের সময় কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায়, যেমন- রিকশা চালক, পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর, হকার, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বিভিন্ন দোকান, মার্কেটের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এদিকে ভাড়া নিয়ে তাড়া করে জীবন দূর্ভিসহ করে তুলছে বাড়ীরমালিক,গাড়ীর মালিক,দোকান মালিক।অবশ্য কোথাও কোথও উদার মনের মালিক পক্ষও পাওয়া গেছে।তবে তা নিতান্তই স্বল্প।
এই মহামারীর সময় আর্থিকভাবে এতটাই অসচ্ছল হয়ে পড়েছে সাধারন মানুষগুলো যা বলা বাহুল্য। নিম্নবিত্ত / মধ্যবিত্ত সাধারান পরিবার গুলো তাদের সঞ্চয় গুলো ও ইতোমধ্যে অধিকাংশরই ভেঙ্গে ফেলে প্রায় নিঃস্ব এখন।যদি ও ব্যবসায়ীরা বা চাকুরীজীবী রা তাদের কর্মস্থল এ যোগদান করেছেন সাধারন ছুটি প্রত্যাহার হওয়ার পর। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারী পরিসরে যারা ব্যবসা পরিচালনা করেন তাদের প্রতিষ্ঠান এখন বেশীরভাগই ক্রেতাশূন্য বললেই চলে, যা আয় হয় তা হয়ত একেবারেই নূন্যতম।আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেকেরই তো বেতন আটকে আছে! আবার কেউ কেউ চাকরি হতে ছাঁটাইয়ের তালিকায় পড়েছেন কারন একটাই ভয়ানক করোনাভাইরাস এর ছোবল । কিন্তু ঐ চাকুরীচূত্য মানুষগুলোর পরিনতির কথা কে বা জানে বলুন?তাদের নিরব কান্না কেবল তাদের পরিবারগুলোই উপলব্ধি করতে পারছে।
এই শ্রেনীর মানুষ গুলোর দিকে এই সময় কতৃপক্ষের সুনজর পড়া অতিআবশ্যক। কেননা বাসা ভাড়া/ দোকান ভাড়া ইত্যাদি দিতেই হিমশিম খাচ্ছে তারা।
এদিকে পরিবহন খাতেও বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। কারন, বাসে সিটের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেয়া যাবে না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচল করানো হবে। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া যাবে না, ভাড়ার চার্ট দেখিয়ে ভাড়া নিতে হবে। যাত্রীদের মাঝে একটি করে সিট খালি রাখতে হবে ইত্যাদি শর্তাবলী দেয়া হয়েছে।
করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে কম যাত্রী তুলতে হবে বলে মালিকদের ক্ষতি পোষাতে ভাড়া ৬০% বেশী নির্ধারণ করলো সরকার। কিন্তু স্বাহ্যবিধি কিংবা যাত্রী বহন এর বিষয়ে কি আদৌ মানা হচ্ছে সরকারী নীতিমালা?
তবে না মেনে থাকলেও ভাড়া দ্বিগুন। এর বিষয়ে তারা মোটেও কার্পন্যতা করছেন না।
বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী লকডাউনের পর আর্থিক ক্ষতি কেউ পারছেন না কাটিয়ে উঠতে। কিন্তু এই বাসা ভাড়া / দোকান ভাড়া আরো যারা রিকসা কিংবা সি .এন.জি ,ইত্যাদি মাসিক ভাড়ায় চালায় তারাও এখন মালিকদের নির্ধারিত ভাড়া দিতে পারছেন না। মোট কথায় জনজীবনে মারাত্নক ছন্দপতন ঘটেছে এই করোনাকালে। এরপরও ভাড়া না দিলে বাসা/দোকান ছাড়ার হুমকিও দিচ্ছে মালিকরা।ভাড়াটেরা যেন আজ অসহায়,বাকরুদ্ধ ।
রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।করোনার নির্মমতার শিকার যে শ্রমিকরা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করে তারা ও আজ কর্মহীন অধিকাংশই।
তবে এই করোনার সময় আমরা দেখেছি মানবতার উজ্জল দৃষ্টান্তও । মানবতার জয় কারে কয় তা অনেকটা দেখতে পেয়েছি আমাদের পূর্নভূমি সিলেটে। বেশ কিছু সংগঠন ছাড়াও সিলেট জেলা পুলিশ অসহায় নিন্মবিত্ত পরিবার সহ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা করেছে এবং সাহস দিয়েছে ।এখন ও ক্রান্তিকাল চলছে সকল বাড়ীর মালিক এবং দোকান মালিক, গাড়ীর মালিকদের প্রতি আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করছি আপনারা ভাড়াটিয়াদের প্রতি একটু মানবিক হোন পুরোটা না পারেন অর্ধেক ভাড়া মওকুফ করে পরিবারগুলোর প্রতি সদয় হোন।যদিও এ ব্যপারে সরকারী কোন সিদ্বান্ত হয়নি তারপর ও এই মহামারী কালে আপনাদের এই সহযোগিতা সাধারন পরিবারগুলো একটু হলেও স্বস্তি পাবে।
ভূপেন হাজারীকার সেই কালজয়ী গান,
“মানুষ মানুষের জন্যে
জীবন জীবনের জন্যেে
একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা” ।
এই গানের কথাগুলো তখনি স্বার্থকতা পাবে যখন মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভুতি
জাগ্রত হবে।
লেখক: কলামিস্ট।