প্রতিনিধি ১ এপ্রিল ২০২০ , ৯:০৭:৩৫ অনলাইন সংস্করণ
মাহমুদ আহসান হাবিব,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি।। সারা বিশ্ব যখন প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, তখন এর করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও। দেশে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেবার পর থেকেই সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল যা পরবর্তীতে বর্ধিত করে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। এ ছুটিকালীন সময়ে সকলেই যাতে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান সেই লক্ষে কাজ করে চলেছে জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন ইউনিট।
এদিকে একটি বিচ্ছিন্ন হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশি আতঙ্কে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মধ্য পারপুগী শিববাড়ী গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের সদস্যরা এখন গৃহছাড়া। তারা আজ একজায়গায় তো কাল আরেক জায়গায় । এভাবে পুলিশি আতঙ্ক ও গ্রেফতারের ভয়ে ঝোপঝাড় ও বন বাদারে লুকিয়ে দিন যাপন করছে তারা। আর তাদের সাথে অবর্ণনীয় এ কষ্টের শিকার হচ্ছে কমলমতী শতাধিক শিশু। এ গ্রামের শিশুরা এতোটাই আতঙ্কিত যে গ্রামে যেকোন ধরনের গাড়ির শব্দ হলেই তারা লুকিয়ে পড়ছে যেখানে সেখানে। সংবাদ কর্মীদের দেখলেও তারা নিজেদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠছে।
জানাযায়,গত ১০ মার্চ ওই এলাকার সামসুল ওরফে কোপা সামশু ডাকাত ও মাদক ব্যাবসায়ী নামে একজনের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও একাধিক জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে নিহত কোপা সামশুর মা জুলেখা বেওয়া।
পুলিশি আতঙ্কে থাকা ঐ গ্রামের মাহমুদা, লতিফা, হোসনেয়ারাসহ আরো অনেকে জানান, সামসুল ডাকাত হত্যা মামলায় যে সাতজনের নাম উল্লেখ আছে তাদের আটক করে নিয়ে যাক পুলিশ। আমাদের তাতে কোন ধরনের আপত্তি নেই। কিন্তু মামলায় অজ্ঞাতদের ধরতে পুরো গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছে পুলিশের কাছে । দিন নেই, রাত নেই এ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।এতে হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো গ্রামের নারী-পুরুষেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি হাসেনআলী নামে এক ভ্যান চালককে ধরে নিয়ে যাওয়ায় এ আতঙ্ক আরও জোড়ালো হয়ে পড়ে। তারা আরও জানায়, এ এলাকার বেশিরভাগ লোকই দিনমজুর, হোটেল শ্রমিক, চাতাল শ্রমিক।
গাড়ির শব্দে ভয়ে পালিয়ে যাওয়া শিশু আকিব ও রুবেল জানায়, গাড়ির শব্দ আমরা ভয় পাই। মনে হয় যেনো পুলিশ আসছে । আব্বা পালিয়ে গেছে অনেক আগেই। আম্মাও খাবার দিতে পারছেনা। তাই কাল থেকে না খেয়েই আছি।
একদিকে সরকারের নির্দেশ সকলকে বাসায় থাকতে হবে, অন্যদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে একদিকে অমান্য করা হচ্ছে সরকারি নির্দেশ অপরদিকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এ এলাকার মহিলা পুরুষ সহ কমলমোতী শিশুরা। এছাড়াও মামলা হতে নাম বাদ দিয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে এলাবাসির কাছে ফোনে ২৫-৩০ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে বলেও জানান ভূক্তভোগিরা।
গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ ওই এলাকায় খাবার বিতরণ করতে গেলে গাড়ির শব্দে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় সবাই। ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, আমরা যখন ওই গ্রামে খাবার দিতে যাই তখন তারা সবাই পালিয়ে যায়। শিশুদেরও দেখেছি ঝোপে ঝাড়ে লুকাতে। এমনটা হওয়ার কথা ছিলোনা।
এ বিষয়ে জানতে ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানভীরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ কোন হয়রানি করছে না। ১৬৪ ধারার জবানবন্দি মোতাবেক যেসব আসামীদের নাম এসেছে শুধু তাদেরকেই গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে-এতে আতঙ্কিত বা হয়রানির কিছু নেই।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, আমরা ওই এলাকায় জরুরী খাবার দেওয়ার ব্যাবস্থা করছি এবং ওই গ্রামের কোননিরিহ মানুষ যেনো এতে হয়রানীর শিকার না হয় সেজন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।