প্রতিনিধি ১৩ এপ্রিল ২০২০ , ১২:০০:৪৫ অনলাইন সংস্করণ
মোঃ হুমায়ূন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতায় জগন্নাথপুরের কর্মহীন হত-দরিদ্র দিনমজুর, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের গৃহবন্দী জনসাধারণ সামান্য কিছু ত্রান সামগ্রী পেলেও এই সংকটয় সময়ে ত্রাণহীন ভিক্ষুক “গেদা ভাই”।
দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ করার ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর হত-দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনসাধারণ । সরকারি নির্দেশনা মেনে কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর হত-দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার লক্ষে সরকারি ভাবে ত্রান সামগ্রী বিতরণ এর পাশা-পাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সহ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে জগন্নাথপুর উপজেলার সর্বত্র প্রায় প্রতিদিন ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হলেও এই সংটময় মুহূর্তে ত্রাণ পাওয়াতো দুরে থাক বিগত প্রায় ত্রিশ বছরের মধ্যে এ পর্যন্ত সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন মাধ্যম থেকেই একবারও ত্রাণ পাননি রোগাক্রান্ত ভিক্ষুক গেদা ভাই । চলমান মরনব্যাধী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে গৃহবন্দী জনসাধারণ। কোথাও নেই জনসমাগম। রাস্তা -ঘাট ফাঁকা, তাতে কি হয়েছে।পেটের ক্ষুধা নিবারনের তাগিদে দু’মটো অন্য জোগাড়ে প্রায় ফাঁকা রাস্তায় হাত মেলে প্রখর রৌদ্রকে উপেক্ষা করে জগন্নাথপুর উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন হাট-বাজারে অবিরাম পথ চলছেন গেদা ভাই।
অন্যান্য দিনের মতো ১৩ ই এপ্রিল ২০২০ ইংরেজি রোজ সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদর বাজারে সহায় সম্বলহীন অসুস্থ গেদা ভাই এর সাথে দেখা হলে একান্ত আলাপকালে জড়তা কন্ঠে বলেন, আগে টেকা দেও বাদে মাথ। খরোনা-টরোনা বুঝিনা।পেট ভাত দিতাম পারিনা বাইচা থাকার দরকার কিথা। মরলে বাচিঁ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে অসুস্থ অবস্থায় ভিক্ষা করে দিনাতিপাত করছি। ভোট দিয়েছি, চেয়ারম্যান – মেম্বারদের পাশে গিয়েছি কেউ কখনো সহযোগিতা করেনি। আজ- অবদি কোন রকম সাহায্য পাইনি।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এর ৬ নং ওয়ার্ড নিবাসী মৃত মোঃ হবিব উল্লাহর ৬ ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ ছেলে মোঃ গেদা মিয়া ওরফে গেদা ভাই (৫৫) বিগত প্রায় ৩০ বছর আগে ছানাছুর বিক্রি করে মা- বোন সহ তিন জনের সংসার চালাতেন।এক সময় দুরারোগ্য ব্যাধীতে তিনি আক্রান্ত হলে ভিক্ষা করে ছোট মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অসুস্থ গেদা ভাই এর ভরনপোষণ করে আসছিলেন হতভাগা মা।কিছুদিন পর মায়ের মৃত্যুর পর অসহায় গেদা ভাইকে ভরভরনপোষণ করতে শুরু করেন তার বড় বোন নিঃসন্তান ফজর বিবি(৬০)।যিনি নিজেও অসুস্থ স্বামীকে সাথে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অর্ধাহারে -অনাহারে দিনাতিপাত করার পাশাপাশি অসুস্থ ভাই কে দু মুটো ভাত দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ফজর বিবি আক্ষেপ এর সুরে বলেন,নিজে ভিক্ষা করে স্মামীকে নিয়ে চলছি। যতটুকু পারি ভাইকে সহায়তা করি আমার মতো খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা সরকারি কিংবা বেসরকারি ভাবে করা হয়না এমনকি এখনো সে ত্রান সামগ্রী পায়নি।
পাড়া-পড়শীর সহ গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি এ ব্যাপার বলেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে গেদা ভাই ভিক্ষা করে পেট চালাচ্ছেন। তাঁর খবর কেউ নেয়না। বিদায় চলমান সংকটময় মুহূর্তে পাড়া-পড়শী তথা গ্রামবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার লক্ষে গেদা ভাই সহ অন্যান্য ভিক্ষুকদের পর্যাপ্ত ত্রাণ দিয়ে সহায়তা করার জন্য সরকার ও সামাজিক সংগঠন সমূহের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।