• অনিয়ম / দুর্নীতি

    ছাতকের হাঁদা টিলায় পাথর খেকোদের আগ্রাসন থামছেনা ধবংস স্তুপে পরিনণত হয়েছে

      প্রতিনিধি ৪ মার্চ ২০২০ , ১২:৩২:৫০ অনলাইন সংস্করণ

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের ছাতকে ইসলামপুর ইউনিয়নের হাঁদা টিলা পাথর খেকোদের আগ্রাসনে ধবংস স্তুপে পরিনণত হয়েছে। স্থানীয় একটি পাথর খেকো ও বৃক্ষ নিধনকারী চক্র এবং কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা মিলে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন ও বাগানের গাছ কেঁটে উজার করে ফেলছে। গত ২৮ জানুয়ারী জাতীয় দৈনিক ‘ঢাকা প্রতিদিন’ এ লÐভÐ হাঁদা টিলা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে কতৃপক্ষের নজরে আসে। অবশেষে নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। দিবা-রাত্রী পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্র্যাম্যমান আদালত। অবৈধ ভাবে উত্তোলনকৃত পাথর পরিবহনের দায়ে পিকাপ ভ্যান আটক ও পাথর জব্দ করাসহ পরিবহনে চালককে অর্থদন্ড এবং কারাদন্ড প্রদান করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে পিকাপ ভ্যান আটকসহ চালককে কারদন্ড প্রদান করা হলেও মূলহোতা পাথর খেকোরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এতে বন্ধ হচ্ছেনা পাথর খেকো ও বৃক্ষ নিধনকারী চক্রের আগ্রাসন। ফলে সরকারি বনায়ন প্রকল্প, টিলা ও পরিবেশ ধবংস হচ্ছে।

    গতকাল সোমবার বিকেলে কুমারদানি ও হাঁদাটিলায় অবৈধভাবে টিলা কাটে পাথর উত্তোলন, মজুতকরণ ও বিক্রয়ে জড়িত থাকায় আব্দুল মিয়া (৪০) নামে একজনকে বন আইন ১৯২৭ ধারায় ২০ দিনের কারাদন্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত। দন্ডপ্রাপ্ত হলো উপজেলার হাঁদা টিলা গ্রামের মৃত. তছই মিয়ার ছেলে। এ সময় মৃত. হরমুজ আলীর ছেলে আকবর আলীর মজুতকৃত প্রায় ৪ লাখ টাকা, মৃত. তুরাব উল্লাহর ছেলে দিলোয়ার হোসেনের ১ লাখ টাকা ও নেছার আলীর ছেলে দিলাল হোসেন এর ১ লাখ টাকা মুল্যের পাথরসহ মোট ৬ লাখ টাকার পাথর জব্দ করা হয়। এর আগে গত শনিবার দিবাগত রাত ২টার সময় হাঁদাটিলায় অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু পাথর পরিবহনের দায়ে পরিবেশ আইন ৬ এর খ ধারায় জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার রাজনপুর গ্রামের সাবাজ আলীর ছেলে ভ্যান চালক মো. সালেহ আহমদকে ১৫ দিনের কারাদন্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত। এ সময় ঢাকা মেট্রো ন- ১৮-৭৭৩৫ ও সিলেট ন-১১-১৫৮৬ নাম্বারে দুটি পিকাপ ভ্যান জব্দ করা হয়। পিকাপ ভ্যান দুটি থানা পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ পৃথক দুটি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন ছাতক উপজেলা সহকারি কমশিনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপস শীল।

    উল্লেখ্য, ৭৬০ একর ভূমি নিয়ে বিশাল এই হাঁদা টিলায় পুরো টিলা জুড়েই রয়েছে সরকারী বনায়ন। ইউক্লিপটার্স, বেলজিয়াম, আকাশীসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩৩ হাজার বৃক্ষ রোপন করা হয়। কিন্ত কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, বৃক্ষ নিধনকারী ও পাথর খেকো চক্র মিলে সৃজিত বাগানের গাছ কেঁটে উজাড় করে ফেলেছে। যার ফলে এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পাথর খেকো চক্র টিলা কেটে পাথর উত্তোল করছে। সরকারী কয়েক হাজার মুল্যবান গাছ প্রতিনিয়ত চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। শতাধিক শ্রমিক টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করে বারকি নৌকা, বাল্কহেড ও ট্রলিগাড়ি পরিমাপে প্রতিদিনই বিক্রি করছে। দিন ও রাতের অন্ধকারে পাথর উত্তোল করা হচ্ছে।

    অভিযোগ রয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এসব জরিমানা শ্রমিকরদের নিকট থেকে আদায় করা হলেও পাথর খেকো মুলহোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। হাঁদা টিলায় এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে কাচা আধাপাক প্রায় ৬৭টি অবৈধ স্থাপনা। এসব বসত বাড়ি থেকে পাথর খেকো চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
    এদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন টিলা ক্রয় করে বৃক্ষ নিধন ও টিলা কেটে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে পরিবশে ধবংস করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে কুমারদানী গ্রামের কুটি মিয়ার ছেলে রোপন মিয়া ও কুফিয়া গ্রামের কাছা মিয়ার ছেলে রজব আলীর নেতৃত্বে চলছে ব্যক্তি মালিকানাধিন টিলা ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে পরিবেশ ধবংমের মহোৎসব। মাসখানেক আগে রোপন মিয়াকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত।
    এ বিষয়ে বন-প্রহরী আবুল কাশেম জানান, আমার দুজন এখানে আছি। সমস্যাগুলো কতৃপক্ষকে অবগত করেছি। এত বিশাল এলাকা আমরা দুজন মাত্র প্রহরী অসহায়। তিনি আরো বলেন, হাঁদা টিলা গ্রামের নেছার আলীর ছেলে জয়নাল, মৃত. তোরাব উল্লাহর ছেলে দেলোয়ার হোসেন, কুমারদানী গ্রামের মৃত. হরমুজ আলীর ছেলে আকবর ও মাহমুদের নেতৃত্বে চলে আসছে অবৈধ ভাবে বৃক্ষ নিধন ও পাথর উত্তোলন কার্যক্রম।
    ছাতক উপজেলা বন-বিট কর্মকর্তা নিতেশ চক্রবর্তী বলেন, ২০০৬-২০০৭ সালে পরিবেশ ও দরিদ্র কৃষকদের আতœকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রীডল্যান্ড সমন্নিত সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের কার্যক্রম এখন নেই। জয়নাল, দেলোয়ার হোসেন, আকবর ও মাহমুদের বিরুদ্ধে ছাতক থানা ও সুনামগঞ্জ বন-আদালতে মামলা রয়েছে নিশ্চিত করে তিনি আরো বলেন, বন-বিট অফিসে জনবল সংকট রয়েছে। অবৈধ ভাবে স্থাপনা নির্মান করা ৬৭ টি পরিবারের তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উর্ধতম কতৃপক্ষকে দেওয়া আছে।
    রোপন মিয়া ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে জরিমানার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা ম্যানেজ করেই সব কিছু করছি। রজব আলী তার ওপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
    ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপস সীল ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে পাথর জব্দ, জরিমানা ও কারাদন্ড প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
    ছাতক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমশিনার (ভূমি) বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করছেন।

     

    আরও খবর

    Sponsered content