প্রতিনিধি ১৯ মার্চ ২০২০ , ৮:০০:৫২ অনলাইন সংস্করণ
ভাটি বাংলা ডেস্ক।। করোনা ভাইরাস আতঙ্কের ছাপ লেগেছে সিলেটের পর্যটনে। সারা বছর পর্যটকদের আনাগুনায় মুখর সিলেটের পর্যটন এলাকাগুলো এখন পর্যটক শূণ্য।
এ কয়দিনে পর্যটক কমেছে আশঙ্কা জনকহারে। আর এর রেশ পড়েছে হোটেল-মোটেল রেস্তোনায়। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে ব্যবসায়ীরা কর্মচারি ছাটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার সিলেটে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের দেখা মিলে। অন্যান্য দিনগুলোতেও পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে লক্ষণীয়। করোনা আতঙ্কে সিলেটের পর্যটন ব্যবসায় ধস নামিয়েছে। গত সপ্তাহ দিন ধরে সিলেট যেনো পর্যটক শূণ্য।
সিলেটের সব ক’টি পর্যটন এলাকা আক্ষরিক অর্থে এখন জনমানবহীন। হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরার ব্যবসায়ীরা কেবল দোকান খুলেই বসে আছেন, বলে জানিয়েছেন পর্যটন এলাকার ব্যবসায়ীরা।
সিলেটের জাফলং ক্ষুধা রেস্তোরার স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম বিক্রমপুরী বলেন, করোনা ভাইরাস আাতঙ্কে জাফলং এখন জনমানব শূণ্য। পর্যটকরা যেখানে রাত্রি যাপন করেন, সেখানে জাফলং জিরো পয়েন্ট পর্যটক শূণ্য। অন্যান্য সময় দুর দুরান্তের কিংবা বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকলেও এখন নিরব এলাকা জাফলং। আগে প্রতিদিন যেখানে অর্ধলক্ষাধিক বা লাখ টাকার মতো ব্যবসা হতো, সেখানে স্টাফদের খরচ পকেট থেকে দিতে হচ্ছে। তবে করুণা ভাইরাসের প্রভাবে পর্যটন ব্যবসা থমকে গেলেও মহামারী থেকে সবাই নিরাপদ থাকুক, এমন প্রত্যাশা তার।স্থানীয় বাসিন্দা সাবু মিয়া বলেন, গত বছর রাস্তা খারাপ থাকায় লোকসান দিয়েছি। আর গত কয়দিন ব্যবসার বেহাল অবস্থায় করোনা ভাইরাস আতঙ্কে। তাই রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা ছেড়ে এখন একটি টেবিল নিয়ে আচার ও চকলেটের দোকান দিয়েছি।চা পাতার দোকানী আবদুল আজিজ বলেন, পর্যকন না থাকায় ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের আতেঙ্কে লোকজন আসছে না। তাই চা পাতাও বিক্রি হয় না।
কসমেটিকস বিক্রেতা আবদুল কাদির বলেন, ‘ভাই ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। ভাইরাসের ভয়ে পর্যটকরা আসছে না।
তবে জাফলং বিটের ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ দাবি করেন, জাফলংয়ে পর্যটক সংখ্যা শতকরা ২৫ ভাগ কমেছে। আর জনাকীর্ণ এলাকা হওয়াতে ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকতে তারা মাইকিং অব্যাহত রেখেছেন।
বিছানাকান্দি মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা ডা. হারুনুর রশিদ বলেন, সিলেটে পর্যটন অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম বিছানাকান্দি। যেটাকে সিলেটের ভূস্বর্গ বলা হয়। পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলরাশিতে গা ভাসিয়ে দিতে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সেই সংখ্যা এখন একেবারেই কমে গেছে।
বিছানাকান্দি জলপরি ভাসমান রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, গত কিছুদিন আগেও লোক সামাল দেওয়া যেতো না রেস্তোরায়। কিন্তু এখন খা খা করছে। করোনা আতঙ্কে লোকজন আসছেন না। এদিকে, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে হোম কোয়ারেন্টাইনে ২৮৯ জনের তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় সিলেটে বাড়তি আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সিলেট হোটেল এন্ড গেস্টহাউজ ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং হোটেল ফরচুন গার্ডেনের স্বত্ত্বাধিকারী সুমাত নূরী জুয়েল বলেন, ‘সিলেটের সবগুলো হোটেল, মোটেলে এখন রুম খালি পড়ে আছে। নতুন কোনো বুকিং দুরে থাক, আগের বুকিংও বাতিল হয়ে গেছে। এক কথায় ব্যবসার শোচনীয় অবস্থা। যা কাটিয়ে ওঠা খুবই কঠিন হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং পরবর্তী দু’দিন শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকায় তিন দিনের ছুটিতে হোটেলের সব রুম বুকিং ছিল। এখন সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে।’
সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হোটেল গেস্ট অনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ত্হামিন আহমদ বলেন, পর্যটক নেই। তাই কর্মচারি ছাটাই করতে হচ্ছে।
আবার তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে পূণরায় ফেরত আনাও আতঙ্কের, যদি কেউ ভাইরাস আক্রান্ত হয়? কিন্তু পর্যটকশূণ্য থাকায় হোটেল-মোটেলের লালবাতি জ্বলছে। ট্যুর অপারেটরসহ বিভিন্ন কোম্পানীর মাধ্যমে আগের যেসব বুকিং ছিল তাও বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সিলেটের ১ থেকে ৩ তারকা মানের অন্তত ২শ’ হোটেল রয়েছে। এই মানের নীচের হোটেল মিলিয়ে হোটেলের সংখ্যা ৫শ’ হবে। সবার অবস্থা খারাপ। যারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন।তাদের অবস্থাতো আরো খারাপ। তাই সরকার থেকেও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও সহযোগীতা প্রয়োজন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, লালাখাল ছাড়াও সাদা পাথর, উৎমাছড়া, পাংথুমাই, লোভাছড়া, হাকালুকি পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের আনাগোনা একেবারেই কমে গেছে। পাশাপাশি সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজারেও লোক সমাগম কমেছে।