প্রতিনিধি ৫ মার্চ ২০২০ , ৪:১৯:৫৬ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রের ওয়ার্ডবয় মোঃ শাহ আলমের নিকট সাংবাদিক নামদারী বাদল কৃষ্ণ দাস কর্তৃক চাদাঁ চাওয়ার সংবাদটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রচারিত হলে চনক নড়ে তার। বাদল কৃষ্ণ দাস দৈনিক সুনামকণ্ঠের রির্পোটার হিসেবে বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দিয়ে আসছিল। অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রের ওয়ার্ডবয় শাহ আলমের নিকট ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবীর বিষয়ে সাংবাদিক বাদল নিজের অপরাধ স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে উপস্থিত সালিশগনের সামনে ক্ষমা চাইলো সে। সন্ধ্যায় জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম জিলানী আফিন্দী রাজুর সভাপতিত্বে তার কক্ষে উপজেলার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডবয় শাহ আলমের কাছে সাংবাদিক পরিচয়ধারী বাদল কৃষ্ণ দাসের ১০ হাজার টাকা চাওয়ার অডিও রেকড শুনতে চান উপস্থিত নেতৃবৃন্দরা। এ নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটির পর বাদল কৃষ্ণ দাস নিশ্চুপ থেকে নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করেন। পরে ওয়ার্ডবয় শাহআলম এর কাছে এসে হাতেপায়ে ধরেন ও উপস্থিত সবার কাছে ক্ষমা চান তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক, বিএনপি নেতা মো: নাজিম উদ্দিন, আ’লীগ নেতা ও সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ সরকার, উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক অঞ্জন পুরকায়স্থ, সিনিয়র সাংবাদিক তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, আব্দুল আহাদ, জিয়াউর রহমান, শেরে আলম শেরুসহ স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য, গত ক’দিন পূর্বে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডবয় শাহ আলমের নিকট সাংবাদিক পরিচয়ে বাদল কৃষ্ণ দাস চাঁদাদাবীর অডিও রেকর্ড ফঁস হয়। চাঁদা দাবীর ফোন আলাপ ফাঁস হয়ে গেলে উপজেলা জুড়ে সমালোচনা ঝড় উঠে।
ে
ফান আলাপ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় শাহ আলমকে মুঠোফোনে কল করে দৈনিক সুনামকণ্ঠের ক্রাইম রিপোটার পরিচয়ে কথা বলেন বাদল কৃষ্ণ দাস। ফোন আলাপে বলা হয় ওয়ার্ডবয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হবে। বস্ খুব গরম তাই একটা বিহিত ব্যবস্থা করতে বলা হয়। কিছু একটা না করলে কলমের এক খোঁচায় খবর অইবো বলে ওয়ার্ডবয় শাহ আলমকে হুমকি প্রদান করা হয়। এ ভাবেই প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডবয় শাহ আলমকে কৌশলে দুর্বল করে সাংবাদিক পরিচয়ে ওই বাদল কৃষ্ণ দাস। পরদিন সংবাদ প্রকাশ হবেনা বলে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করা হয়। মুটোফোনে বেশ কিছুদিন দিন ওয়ার্ডবয়কে অব্যাহত হুমকি প্রদান করা হয়। শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা বিকাশ নম্বরে দিতে বলা হয়। এতে এক হাজার টাকা দিতে রাজিও হন ওয়ার্ডবয় শাহ আলম। কিন্ত ওই বাদল কৃষ্ণ পাঁচ হাজার টাকা খামে ভরে তার নামে জামালগঞ্জ ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে রেখে দিতে বলেন। বিষয়টি যেনো প্রকাশ না হয় ওয়ার্ডবয় শাহ আলমকে সাবধান করা হয় ফোন আলাপে। বিষয়টি প্রথমে ডা. এম.এ.কাসেমকে জানান ওই ওয়ার্ডবয়। পরে উপজেলার স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও কয়েক জন সাংবাদিককে চাঁদা দাবীর ঘটনার প্রমান হিসাবে ওয়ার্ডবয় শাহ আলম ও বাদল কৃষ্ণ দাসের মধ্যকার কথোপকথনের রেকর্ড উপস্থাপন করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে চাঁদা দাবীর বিষয়টি স্থানীয় বিভিন্ন মহলে প্র্রকাশ হলে অভিনব পন্থায় ওয়ার্ডবয় শাহ আলমের বিরুদ্ধে তড়িগড়ি করে বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে ঘটনাটি উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা করেন ওই বাদল কৃষ্ণ দাস ও তার অনুসারী। গত বছর বাদল কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামে-বেনামে কাউকে উপস্থিত না করে নিজেই ভিজিডি ও ভিজিএফ এর চাল নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। ইউপি সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্য মূলক আচরন করেন বাদল কৃষ্ণ দাস। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তার হাত-পা বেঁেধ রাখার উপক্রম হয়। স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী বিষয়টি মিমাংশার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদারকে অনুরোধ করেন। পরে ক্ষমা প্রার্থনা করে মুক্ত হন বাদল কৃষ্ণ দাস। সম্প্রতি সামাজিক যোযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীর ছবি ও অশালীন পোষ্ট করায় জামালগঞ্জ প্রেস ক্লাব থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়াও সুনামকণ্ঠ ও বিভিন্ন অনলাইনে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে, স্থানীয় ইউপি সদস্যদের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে কৌশলে উৎকোচ দাবী ও আদায় করার অভিযোগ উঠে বাদল কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে।
দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক বিজন সেন রায় বাদল কৃষ্ণ দাসকে তার পত্রিকার ক্রাইম রিপোটার স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি জানার পর তাকে (বাদল কৃষ্ণ দাস) ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ওয়ার্ডবয় শাহ আলম জানান, বাদলকৃষ্ণ দাস প্রায়-ই আমাকে টাকার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। আমি হার্টের রোগী। সে এমন এমন কথা বলে, যেকোন সময় আমার জীবন নাশ হতে পারে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় গত ২২ ফেব্রæয়ারী জামালগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আ’লীগ নেতা আবুল কালাম সরকার জানান, বাদল কৃষ্ণ দাসের চাঁদা চাওয়ার ফোন আলাপ শুনে হতভম্ব হয়েছি। তার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবীর এমন অনেক ঘটনা শুনেছি। এখন ফোন আলাপ শুনে বাকিটা বুঝে নিয়েছি।
জামালগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী জানান, বাদল কৃষ্ণ দাস সম্পর্কে বহু অভিযোগ শুনেছি। এবার নিজের কানে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ার ফোন-আলাপ শুনলাম।
জামালগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকায় বাদল কৃষ্ণ দাসকে প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইউপি সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্য মূলক আচরন ও ভিজিডি ও ভিজিএফ এর চাল আত্মসাতের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ফেনাবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার বলেন, বাদল কৃষ্ণ দাস ক্ষমা চাওয়ার পর বিষয়টি মিমাংসা হয়েছিল।