প্রতিনিধি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ , ৭:৪৪:৫৯ অনলাইন সংস্করণ
মোঃ নাইম তালুকদার: দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে অবশেষে ন্যায়বিচার পেলেন স্পিকার হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর ভাতিজা ও সাবেক ডিপলোম্যাট মরহুম কায়সার রশিদ চৌধুরীর ছেলে ইমরান রশিদ চৌধুরী। অন্যায়ভাবে আর্থিক ফায়দা হাসিলের লিপ্সায় আবুল কাহের শাহিন নামে এক জমি বিক্রয়ে মধ্যস্থতাকারী (দালাল) এই অভিজাত পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করে আসছিল। উচ্চ আদালতের এক যুগান্তকারী রায়ে ন্যায়বিচার পেল সংক্ষুব্ধ এই পরিবার।
দেশ স্বাধীনের পর সর্বোচ্চ আদালতে এ জাতীয় মামলায় এটাই প্রথম রায়, যা নজির হিসেবে ডিএলআর এ স্থান পাবে।
উল্লেখ্য যে, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার প্রয়াত হুমায়ূন রশিদ চৗধুরীর ছোট ভাই, সাবেক ডিপলোম্যাট কায়সার রশিদ চৗধুরীর মরহুমা স্ত্রী সামছি খানমের মালিকানাধীন নর্থ গুলশানস্থ ৩০ কাটা জমি বিগত ০৫/৯/৭৯ সালে সম্পাদিত ইজারা চুক্তি মূলে আমেরিকান দূতাবাসকে ১১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়। যেহেতু উক্ত ইজারা চুক্তিটি রেজিস্ট্রীকৃত ছিল না এবং বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষিতে মরহুমা সামছি খানমের ওয়ারিশান (ইমরান রশিদ চৌধুরি,পারভেজ রশিদ চৌধুরী ও জিনাত রশিদ চৌধুরী) এই জমিটি বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
বিষয়টি জানতে পেরে জনৈক আবুল কাহের শাহিন ইমরান রশিদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে বলেন যে, উক্ত জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য তথা ১৫০ কোটি টাকায় কিনতে আগ্রহী ক্রেতা রয়েছে এবং তিনি তা বিক্রি করে দিতে পারবেন। ইমরান রশিদ চৌধুরী উক্ত আশ্বাসের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে ১৩/০৩/২০১২ তারিখে তার সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। এই চুক্তির শর্তানুযায়ী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বর্তমান বাজারমূল্যে জমিটি বিক্রি করন দেবেন এবং তার জন্য শাহিন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ১৩% টাকা (দালালি) পাবেন। তখন ইমরান রশিদ চৌধুরী পোস্ট ডেইটেড ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার চারটি চেক আবুল কাহের শাহিনের নামে ইস্যু করেন। কিন্তু ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও শাহিন বর্তমান বাজার মূল্যে কোনো ক্রেতা যোগাড় করতে ব্যর্থ হন। ফলে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে ১৬/০৮/২০১২ সালে জমিটির ইজারা গ্রহীতা আমেরিকান দূতাবাসের সাথে জমিটির মালিকগণ একটি বায়না চুক্তি সম্পাদন করেন এবং শেষ পর্যন্ত ০৩/০৭/২০১৩ সালে বিক্রয় পূর্বক দলিল সম্পাদন করেন। এরপর শাহিনকে চেকগুলো ফেরত দিতে বলেন।
এদিকে আবুল কাহের শাহিন উক্ত পোস্ট ডেইটেড চেক চারটি ফেরত না দিয়ে নিজে অধৈভাবে লাভবান হওয়ার ফন্দি করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি চেক চারটি নগদায়নের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করেন। ইতোমধ্যে ইমরান রশিদ চৗধুরী শাহিনকে দেয়া চেকগুলো সম্পর্কে ব্যাংকে ‘স্টপ পেমেন্ট ইন্সস্ট্রাকশন’ দিয়ে রাখলে সেগুলো যথারীতি ডিজ-অনার হয়। তারপর শাহীন সিলেটে চেক ডিজ-অনারের মামলা করে নিম্ন আদালত থেকে তার পক্ষে রায় পান।
ইমরান রশিদ চৗধুরী উক্ত রায়ে বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে ফৌজদারি আপিল দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে ৩১/৮/২০১৬ ইং তারিখে রায় প্রধানের মাধ্যমে ইমরান রশিদ চৌধুরীকে মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দেন।
এতে আবুল কাহের শাহিন উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপিল দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ১নং আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে মঙ্গলবার (১৮ফেব্রুয়ারি) উক্ত আপিল (আপিল নং ৬৩/৬৪/৬৫/৬৬/২০১৭) খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। ইমরান রশিদ চৌধুরী দেরিতে হলেও ন্যায়বিচার পান।
বাংলাদেশের ইতিহাসে চেক ডিজ-অনারের মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে এটিই প্রথম রায়, যাতে চেক ইস্যুর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য প্রমাণ করে আদেশ দেয়া হল।
আপিল বিভাগে ইমরান রশিদ চৌধুরীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতিঅ্যিাডভোকেট আমিন উদ্দিন।মামলা পরিচালনায় সহায়তা করেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (মাসুদ), অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন (পুতুল)। মামলাটির পুরোভাগ পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন ইমরান রশিদ চৌধুরীর বন্ধু রাজনীতিজ্ঞ নূরুল ইসলাম সাজু