• অনিয়ম / দুর্নীতি

    শাল্লায় বাঁধের টাকা উড়ে হাওরে

      প্রতিনিধি ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ , ২:১০:৫৬ অনলাইন সংস্করণ

    জেষ্ঠ প্রতিবেদক: প্রতিবছরই সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় হাওর রক্ষা বাঁধ। এই বাঁধের নামে ফায়দা লুটে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী থেকে শুরু করে সকল শ্রেনীর লোকেরা। গড়ে তোলা হয় শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জমিহীন ব্যাক্তিদের দিয়ে গঠন করা হয় পিআইসি(প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি)। নিজেদের ব্যাক্তিদের পিআইসি দিয়ে হাওর রক্ষা বাঁধের কোটি কোটি টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিচ্ছেন এসব লোকেরা।
    শুধু তাই নয়, কলেজের প্রভাষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের চাকুরীজীবিরাও পিআইসি কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছে।
    হাওর রক্ষা বাঁধ নিয়ে এধরনের পিআইসি ও অপ্রয়োজনীয় বাঁধ গুলোতে বেশি বেশি বরাদ্দ দেয়ায় নানা বিতর্কের সম্মুখীন হচ্ছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কাবিটা স্কীম প্রনয়ন কমিটি। সরজমিনে দেখা গেছে ছায়ার হাওরের বাঁধগুলোতে দায়সাড়াভাবে কাজ করে ফসলকে রাখছে হুমকির মুখে। অথচ উপজেলার প্রতিটি বাঁধে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ১৭ লাখ টাকার উপরেও বরাদ্দ রয়েছে। প্রতি বছরের এসব বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে সঠিক ভাবে বাঁধের কাজ করা হলে এতদিনে হাওরের স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধান হয়ে যেত বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। এতো টাকা হাওরে বরাদ্দ আসলেও সঠিকভাবে কাজ না করে পিআইসি লোকেরা নিজেদের পকেট ভারী করছেন। বাঁধের টাকা বাঁধে কাজ না করে নিজেদের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন পিআইসি লোকেরা।
    শাল্লার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, নীতিমালা অনুসরণ না করে প্রথম বিলের টাকা দিয়েই বাঁধের কাজ তড়িগড়ি করে শেষ করার ধান্দা করছেন।
    অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের বেশির ভাগ বাঁধই অক্ষত ছিল। আবার কিছু কিছু স্থানে ক্লোজারও সৃষ্টি হয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে প্রকল্পের সংখ্যা এবং বরাদ্দের পরিমানও বেড়েছে অনেক। যে জায়গায় বাঁধ অক্ষত ছিল সেই জায়গায় বরাদ্দ ও প্রকল্পের সংখ্যা বাড়িয়ে উপজেলায় নানা বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। জানা গেছে, গত বছর উপজেলায় ১১৫টি প্রকল্প ছিল ৯২ কিলোমিটারে। এর বরাদ্দের পরিমান ছিল ১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এবছর ১৩৭টি প্রকল্প। বরাদ্দের পরিমান ২৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা ৯৬ কিলোমিটারে। ২২টি প্রকল্প বেশি অনুমোদন দিয়ে গত বছরের চেয়ে ৬ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ বেড়েছে ৪ কিলেমিটারে। তবে এবছর অপ্রয়োজনীয় বাঁধের সংখ্যা রয়েছে বেশি। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে বলে দাবী সচেতন মহলের। সরজমিনে দেখা গেছে, ভান্ডারবিল উপপ্রকল্পে ২৩ নং পিআইসিতে নীতিমালা না মেনেই কাজ করে যাচ্ছেন। যেখানে ৩ ফুট পর পর দুরমুজ করার কথা উল্লেখ রয়েছে সেখানে কোনো দুরমুজ না করেই বাঁধের কাজ করছেন প্রকল্পের সভাপতি অভিনয় দাস। এছাড়া বাঁধের স্লোপও সঠিক ভাবে করেননি। তিনি এলাকায় একটিু প্রভাশালী হওয়ায় নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই বাঁধের কাজ করে যাচ্ছেন।
    স্থানীয় কৃষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, এবছর হাওর রক্ষা বাঁধের নামে হরিরলুট চলছে। জমিহীন ব্যক্তিদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। অথচ নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে কৃষকদের দিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা। কিন্তু এসব নীতিমালা না মেনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পিআইসি গঠন করেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। শাল্লা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও স্কীম প্রনয়ন কমিটির সভাপতি ইউএনও আল মোক্তাদির হোসেন বলেন, সার্ভে টিমের ম্যাজারমেন্ট অনুযায়ী প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আর যে সব বাঁধে সঠিক ভাবে কাজ হচ্ছে না সেগুলো মনিটরিং টিমে প্রতিবেদন দিবেন। তাদের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
    এবিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-২) শফিকুল ইসলাম বলেন, পিআইসিগুলো মুলত উপজেলা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। তবে যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর বাঁধের কাজ সুষ্টু করার জন্য তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে।
    নিউজ টি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন।

    আরও খবর

    Sponsered content