প্রতিনিধি ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ , ২:০৭:১৮ অনলাইন সংস্করণ
বিপ্লব রায়, শাল্লা: সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলা থেকে প্রত্যন্ত ও দুর্গম উপজেলা শাল্লা। এই উপজেলায় প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। স্বাধীনতার পর থেকে নেই কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া। বর্ষায় নৌকা আর হেমন্তে হাঁটা এটাই হচ্ছে যোগাযোগের একমাত্র ব্যবস্থা। বর্ষাকালে উপজেলার ছোট ছোট গ্রামগুলো একেকটি দ্বীপে পরিণত হয়। আর হেমন্তকালে চারিদিকে সবুজ ঘেরা মাঠে সোনালী ফসল। দেখলে মনে হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এই উপজেলায় অনেক কর্মকর্তার রদবদল হয়। কিন্তু কেউ শাল্লার উন্নয়ন কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে তেমন তৎপর ছিলেন না। ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর যোগদান করেন এক ব্যাতিক্রমী কর্মকর্তা। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মোক্তাদির হোসেন। উনার যোগদানের পর থেকেই রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বাজার উন্নয়নেও নিজস্ব ভূমিকা রাখছেন।
জানা গেছে, জেলা সদর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দুরে শাল্লা। দীর্ঘ ১২ বছর পূর্বে কাজ শুরু হয়েছিল দিরাই শাল্লা আঞ্চলিক সড়কের কাজ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আটকে যায় রাস্তার কাজ। মাঝমধ্যে সওজ বিভাগের এই রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার ভোগান্তিতে পড়েন শাল্লাবাসী। দিরাই শাল্লা সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে উঁচু ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। আর এসব ব্রীজের সংযোগ সড়ক না থাকায় যোগাযোগের বিগ্ন ঘটে।
শাল্লাবাসীর এই দুরাবস্থা দেখে নিজ উদ্যোগেই ইউএনও আল মোক্তাদির হোসেন গড়ে তুলেন কানেকটিং শাল্লা। এই ‘কানেকটিং শাল্লার’ উদ্যোগে শাল্লা ব্রিজের উভয় পাশের অ্যপ্রোচের মাটি ভরাটসহ ব্রিজের পূর্বপাশের সওজের ৪০০ মিটার রাস্তা মূল সড়কের সাথে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেন। তিনি উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ও স্বেচ্ছায় অনুদানের সাহায্যে শ্রমিক নিয়োগ করে রাস্তাটি নির্মাণ করেন। এছাড়াও মূল সড়কের সুখলাইন ব্রীজ ও আঙ্গারুয়া-নওয়াগঁাও ব্রিজের অ্যাপ্রোচ না থাকায় ব্রিজ ২টির পূর্ব পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কতর্ৃক রাস্তা প্রশস্তকরণের মাধ্যমে শাল্লা-মিলনবাজার ও দিরাই হয়ে বিকল্প রাস্তা সৃষ্টি করে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের পথ সুগম করেন। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর শাল্লায় জেলা প্রশাসকের চার চাকার গাড়ি আসার মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন করেন এই ইউএনও। ব্যাতিক্রমী ইউএনও আল মোক্তাদির হোসেনের প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল শাল্লা উপজেলা সদরে সরকারি গাড়ী নিয়ে আসেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। জেলা সদরের সাথে শুধু সড়ক যোগাযোগই নয় স্থানীয়ভাবে এলাকার উন্নয়নে ও জনগণের উন্নয়নে অনেক কাজ করছেন তিনি।
প্রত্যন্ত উপজেলা হওয়ায় অনেক কর্মকর্তাই এখানে যোগদান করতে চান না। অনেকেই কিছুদিন থেকে বদলী হয়ে যান। সেজন্য হয়তো সাধারণ মানুষের সাথে কিছু দুরত্ব থেকে যায় কর্মকর্তাদের। কিন্তু ইউএনও আল মোক্তাদির হোসেন প্রমোশনে শাল্লা এসেই নিজের ব্যাক্তিত্ব ফুটিয়ে তুললেন। তিনি প্রমান করে দিলেন সরকারি এক কর্মকর্তা ইচ্ছে করলেই দেশের উন্নয়ন কিংবা এলাকার স্বার্থে অনেক কিছু করতে পারেন। এ বিষয়ে কথা হয় ইউএনও আল মোক্তাদির হোসেনের সাথে। তিনি একাত্তরের কথাকে জানান, আমার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দেশের প্রতি ভালবাসা রেখেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন। তাই আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দেশের প্রতি আমার ভালবাসা রয়েছে। চাকুরী জীবনের শুভ সুচনা থেকেই আমার একটা স্বপ্ন ছিল আমি যে এলাকায় চাকুরী করবো সেই এলাকায় কিছু করার চেষ্টা করবো। যেন সাধারণ মানুষগুলো আমাকে সারাজীবন ভালবাসায় সিক্ত করেন।
উল্লেখ্য, মো. আল মোক্তাদির হোসেন ২০১৩ সালে বরিশাল জেলায় সহকারি কমিশনার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলায়। ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর থেকে শাল্লা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।