প্রতিনিধি ৩১ জানুয়ারি ২০২০ , ৭:৩৩:২২ অনলাইন সংস্করণ
“আমি ঠকিনি বন্ধু”
ইসলামে ধনী-গরিব, দাস-মালিকের কোন ভেদাভেদ নেই। এখানে তাক্বওয়ার ভিত্তিতে সকলের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত।
=============
মক্কার ধনী ব্যক্তি উমাইয়া। প্রাচুর্যের যেমন তার শেষ নেই, তেমনি ইসলাম বিদ্বেষেও তার জুড়ি নেই। এই উমাইয়ারই একজন ক্রীতদাস ইসলাম কবুল করেছে। জানতে পেরে শুরু করলো ক্রীতদাসের উপর অকথ্য নির্যাতন। প্রহারে জর্জরিত সংজ্ঞাহীন দাসকে সে নির্দেশ দেয়, “এখনো বলি মুহাম্মদের ধর্ম ত্যাগ কর। নতুবা রক্ষে নেই।”
কিন্তু তার দাস বিশ্বাসে অটল। ফলে ক্রোধে উম্মাদ হয়ে শাস্তির আরো কঠোর পথ অনুসরন করলো উমাইয়া।
একদিনের ঘটনা। তখন দুপুরবেলা। আগুনের মত রোদ নামতেছে আকাশ থেকে। মরুভূমির বালু যেন টগবগিয়ে ফুটছে। উমাইয়া তার দাসকে নির্দয়ভাবে প্রহার শুরু করলো। তারপর তার বুকে পাথরচাপা দিয়ে তাকে সুর্যমুখী করে শুইয়ে দেয়া হল। তবু ক্রীতদাসের মনে নেই কোন শংকা। চোখে অশ্রু নেই, মুখে কোন আর্তনাদও নেই। আকাশমুখী তার প্রসন্ন মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে আল্লাহর প্রশংসা ধ্বনি- ‘আহাদ’, ‘আহাদ’।
ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন হযরত আবু বকর। আহাদ আহাদ শব্দ শুনে তিনি ক্রীতদাসের কাছে গেলেন। উমাইয়াকে দেখে তিনি সবই বুঝে গেলেন। বললেন, “উমাইয়া! আপনাকে আমি ধনী ও বিবেচক লোক হিসেবেই জানতাম। কিন্তু আজ বুঝলাম, আমার ধারনা ভুল। দাসটি যদি এতই অপছন্দ হয় তাহলে তাকে বিক্রি করে দিলেই তো পারেন। এমন নির্দয় আচরন কি মানুষের কাজ?”
আবু বকরের ঔষধে কাজ হল। উমাইয়া বলল, “দাস আমার। এর উপর সদাচার- কদাচার করার অধিকার আমারই। তা এতই যদি আপনার দয়া লাগে, তবে একে কিনে নিলেই পারেন।”
আবু বকর এই সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিলেন। তিনি চট করে রাজি হয়ে গেলেন। একজন সাদা দাস ও দশটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে কিনে নিলেন কালো এই দাসটিকে।
লেনদেনের পর উমাইয়া বিদ্রুপের হাসি হেসে বলল-
“কেমন বোকা তুমি? এই অকর্মন্য দাসটিকে মাত্র একটি মুদ্রার বিনিময়েই বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলাম। এখন আমার লাভ আর তোমার ক্ষতি দেখে হাসি চেপে রাখতে পারছি না।”
হযরত আবু বকর হেসে বললেন- “আমি ঠকিনি বন্ধু! এই দাসটিকে কিনার জন্য যদি আমার সমস্ত সম্পদ দিয়ে দিতে হত তাও আমি দিয়ে দিতাম। কিন্তু একে তো আমি অনেক সস্তা মুল্যেই ক্রয় করে ফেললাম।”
এই দাসটিই ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত বেলাল (রা:)। ইসলামের প্রথম মুয়াযযিন। এই বেলালের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল বলেছেন, “আমি যখন মেরাজে গেলাম তখন জিবরাঈল আমাকে উর্ধ্ব আসমানের এvমন এক জায়গায় রেখে এসেছিলেন তখন আমি নিজেকে খুব একা অনুভব করলাম। এমতাবস্থায় আমি সেখানে আমার বেলালের হাটার শব্দ শুনতে পেয়েছি।” (নাসায়ী)
তাই বুঝা গেল, ইসলামে ধনী-গরিব, দাস-মালিকের কোন ভেদাভেদ নেই। এখানে তাক্বওয়ার ভিত্তিতে সকলের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাক্বওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন। #
(হযরত বেলালের এই করুণ জীবনী আপনার বন্ধুদের জানাতে পোস্টটি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুণ।)