প্রতিনিধি ২৪ জানুয়ারি ২০২০ , ১:৫৯:০২ অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার: দোয়ারাবাজারে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা, মানা হচ্ছে না নীতিমালা। এছাড়া বেশ কয়েকটি প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। বাঁধের ৩০ মিটারের মধ্যে মাটি না কাটার নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) তা উপেক্ষা করছে। বাঁধের নিকট থেকে মাটি কাটার ফলে বেশির ভাগ বাঁধই রয়েছে হুমকির মুখে।
চলতি বছরে দোয়ারাবাজার উপজেলায় ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৩৪টি প্রকল্পে ৫ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত চলমান কাজে ৮২ লাখ টাকা প্রাথমিক বিল উত্তোলনও করেছে বিভিন্ন পিআইসি। গত বছর দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৩টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল আড়াই কোটি টাকা। এ বছর আরো ১১টি প্রকল্প বাড়ানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, নিজের ভাই-ভাতিজা ও আত্মীয়-স্বজনের নাম জড়িয়ে প্রকল্প তৈরি করে একই ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের কাজ করছেন। অপরদিকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বাঁধে কোনো বরাদ্দ হয়নি এ বছর। গত বছর কানলার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের নাইকো ভাঙায় বরাদ্দ হলেও এ বছর কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আর এ প্রকল্পের কাজ না হলে বাকি প্রকল্পগুলোতে ব্যয় করা লাখ লাখ টাকা কোনো কাজে আসবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এ প্রসঙ্গে পাউবো’র শাখা কর্মকর্তা সমশের আলী মন্টু জানিয়েছেন, এ প্রকল্পটি তৈরি করার সময় বাদ পড়েছে। তবে তা বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার নাইন্দার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ২, ৫, ১০, ১১, ১৫, ১৬, ১৭নং পিআইসি’র কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। তন্মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে ৫নং প্রকল্পটির কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান থাকলেও অধিকাংশ পিআইসিরা মানছেনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা। দায়সারাভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে তড়িঘড়ি করছে সংশ্লিষ্ট পিআইসি। এছাড়া বাঁধের ৩০ মিটার দূরবর্তী স্থান হতে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণের বরাদ্দ থাকলেও উল্লেখিত পিআইসিরা বাঁধের একেবারে কাছ থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটতে দেখা গেছে। এতে করে বৃষ্টি শুরু হলে খোদ ফসলরক্ষা বাঁধগুলোই হুমকির মুখে পড়বে। পাহাড়িঢলে পানি মিশ্রিত কাঁদা মাটিগুলো বাঁধের গর্তে সরে সহজেই বাঁধ ভেঙে যাবে বলে জানিয়েন এলাকার কৃষকরা।
এ দিকে পাউবো’র অপ্রয়োজনীয় বাঁধ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি দোয়ারাবাজার উপজেলায় বিভিন্ন হাওর পরিদর্শনে এসে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. এমরান হোসেন উপজেলার নাইন্দার হাওরের ৫নং প্রকল্পের ৩নং পোল্ডারের ৩২০ মিটার ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত কাজ অপ্রয়োজনীয় হিসেবে তা চিহ্নিত করলে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, নাইন্দার হাওরে ৩নং পোল্ডারে ৪নং পিআইসি চলাকালীন পাশাপাশি ৫নং পিআইসি গঠনের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। এ কারণেই এটি অপ্রয়োজনীয় বাঁধ হিসেবে চিহ্নিত করে তা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড শাখা কর্মকর্তা মো. সমশের আলী জানান, উপজেলার নাইন্দার হাওরের ৫নং প্রকল্পটি অপ্রয়োজনীয় বাঁধ হিসেবে চিহ্নিত করে তা বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইভাবে আরো কয়েকটি বাঁধ অপ্রয়োজনীয় কিনা তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।