প্রতিনিধি ৩ জানুয়ারি ২০২০ , ১১:১৫:৫০ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় এক সাংবাদিকে অশ্রাব্য ভাষায় সরকারী অফিসে বিভিন্নধরনের কটুক্তি করায় জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন। গতকাল (১লা জানুয়ারি) বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার সাংবাদিকবৃন্দ।
অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছর জামালগঞ্জ উপজেলার কাবিটা বাস্তবায়ন প্রকল্প কমিটিতে দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক সবুজ সিলেট পত্রিকার জামালগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি এবং জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিবকে ইউনিয়নের হাওর রক্ষা বাঁধের কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করায়, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েই সরকারি বেসরকারী কর্মকর্তা ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সম্মুখে ওই সাংবাদিককে নানারকম অশ্রাব্য নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করেন। তিনি অশ্লীল ভাষায় বলেন, ‘এই ফকিন্নির পুত সাংবাদিককে কমিটিতে কে দিয়েছে ? ভাত খাইতে পায় না আবার তারে কমিটি দিছে। এরকম কত সাংবাদিক আমি পয়দা করি…।’ বিষয়টি প্রকাশ হলে এতে উপজেলার বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা নোংরা ভাষা ও আক্রমনাত্মক উক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ৯ জন সাংবাদিক স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, তিনি (আওয়ামীলীগ উপজেলা সভাপতি) একজন মুরুব্বী ও দায়ীত্বশীল ব্যাক্তি হয়ে কিভাবে সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে সভা-সমক্ষে অপমান করায় উপজেলার সহযোগি সাংবাদকর্মীরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দাম্ভিক সভাপতির পয়দাকৃত পুত্র আকবর হোসেন এর অনৈতিকতার জন্য বিগত ২০১৩ সালে ১৬ ডিসেম্বর (জামালগঞ্জে বির্তকিত রাজাকারের তালিকা নিয়ে) মাসে ফেইসবুকে একটা অপপ্রচারের কারণে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বর্তমান স্থানয়ি সংসদ সদস্য, তৎকালীন ইউএনও ও ওসিসহ শতশত লোকের সামনে (আকবর হোসেন) করজোর অবস্থায় হাটুগাড়া দিয়ে হাতজোর করে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। আ’লীগ সভাপতির গুণধর পুত্র আকবর হোসেনকে সেই অবস্থায় দেখে তখন তিনি মনের কষ্টে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেছিলেন সে (আকবর হোসেন) আমার পুত্র নয়, সে পানিতে নয়তো আগুনে পুরে মরবে এলাকার মানুষের মান মারছে বির্তকিত তালিকা দিয়ে। বিগত দিনে তারই পয়দা করা পুত্র আকবরকে জামালগঞ্জ পিআইও অফিস থেকে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ছেলেরা প্রকাশ্যে পিটিয়ে অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় ফেলে রেখেছিল। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসেম সরকারি পুকুর থেকে মাছ চুরির অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩ মাসের সাজা দিয়েছিলেন। কিছু দিন জেলখাটার পর অকবর হোসেন কে জামিনে বের করায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। হাজী মোহাম্মদ আলী তার গুণধর অসৎ পুত্রের মত সবাইকে এককাতারে সামিল করায়, অন্যান্য সাংবাদিকরা নিজেদের সাংবাদিকতা পেশাকে অপমানিত করা হয়েছে বলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জামালগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন মিডিয়ার কর্মরত স্থানীয় সংবাদকর্মীরা আরো জানান, বর্তমান আ”লীগ সভাপতি অতীতে এক সময় মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। পরে ক্রমান্বয়ে অবস্থার উন্নতি ঘটান। উপজেলা পরিষদের জায়গায় সরকারী ভূমি জবরদখলকারী হাজী মোহাম্মদ আলী ও তার পুত্র কথিত সাংবাদিক আকবর হোসেন দলীয় দাপট খাটিয়ে এলাকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। উল্লেখ্য যে, বিগত বছরের মতো এবছরও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নিজেও হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের পিআইসি নিয়েছেন এবং তার পুত্র আকবর হোসেনকে দিয়ে হাওরবাঁধের আরো ১৯টি পিআইসির প্রকল্পে এসকোভেটর দিয়ে মাটি ভরাট করার চুক্তি মোতাবেক কব্জা করে রেখেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সাথে মোবাই ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক কে গালাগালের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি ইউএনওকে প্রশ্ন করি, তারে এই কমিটিতে কে রাখছে? ইউএনও ভুল শিকার করে তা পাল্টে দিয়েছেন।’ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অজুহাত তুলা হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াঙ্কা পাল বলেন, ‘অভিযোগটি পাইনি, তবে পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।