প্রতিনিধি ২ ডিসেম্বর ২০১৯ , ৫:২১:৩১ অনলাইন সংস্করণ
মো. ওবায়দুর রহমান কুবাদ
ছোট বেলায় শুনতাম মুরুব্বিরা প্রায়ই বলতেন, ‘উছিৎ খতায় খুঁছিৎ আত’ (উচিৎ কথায় খুঁচিতে হাত)। তখন এই কথার মর্মার্থ বোঝার বোধবুদ্ধি হয়ে উঠেনি। এখন যখন রাজনীতির মাঠে ময়দানে গরমনরম নানা রকমের কথাবার্ত শুনি এবং তার প্রতিক্রিয়ায় কারও কারও গায়েগতরে বিভিন্ন রকমের ও মাত্রার জ্বলনপোড়নের শুরু হয় দেখি, তখন ছোট বেলায় না-বোঝা-কথার অর্থ বোঝতে আর তেমন কোনও কষ্ট হয় না। রাজনীতির মর্মার্থ সব জলবৎতলরং হয়ে পড়ে। এই জলবৎতরলং সহজ হয়ে পড়ার ব্যাপারটা কেবল আমার বেলায় নয়, বরং আমার মতো আমজনতার একেবারে নির্বোধ ভিন্ন অধিকাংশ জনের বেলায় সম্ভব হয়ে উঠে। রাজনীতি যাঁরা করেন তাঁরা যতি মনে করেন যাঁদেরকে নিয়ে সাধারণত রাজনীতি করা হয় সেই জনসাধারণ রাজনীতির পেঁচ একেবারেই বুঝে না তা কিন্তু আদৌ ঠিক নয়। সত্যটা কী মানুষ ঠিকই জানে। একজন আইনের উর্ধে চলে যাওয়া বা অবস্থানকারী অপরাধী কর্তৃক যখন প্রকাশ্য দিবালোকে শত মানুষের চোখর সামনে কাউকে খুন হতে দেখে এবং যথারীতি পুলিশের জিজ্ঞাসার মুখে তারা বলে, কে খুন করছে তারা দেখেনি। বাংলা মারদাঙ্গা সিনেমায় সাধারণত এমন করে গল্প সাজানো হয়ে থাকে। মানুষ সত্য জানার পরেও মুখ খোলে না। আমাদের দেশের সমাজবাস্তবতা এবং সিনেমায় চিত্রিত গল্পের বাস্তবতা বর্তমানে ভিন্ন কীছু নয়, বলতে গেলে এক রকমই। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রক রাজনীতির ক্ষেত্রটিও উক্ত সমাজবাস্তবতার থেকে ভিন্ন বা ব্যতিক্রমী কীছু নয়। বালাদেশের রাজনীতিকে লোকে মারদাঙ্গা সিনেমাার খুন ও খুনের তথ্য প্রকাশ না করার ঘটনার মতো হজম করে নিয়েছে। তারা রাজনীতির সত্যটা জানে কিন্তু সত্য প্রকাশ করে না। সুতরাং বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এই কথা অবশ্যই জেনে রাখা দরকার যে, এখানে শক্তিধর কোনও রাজনীতিক যা কীছুই করেন না কেন, সাধারণ মানুষ সেটা মুখে বলে না বেড়ালেও আসল সত্যটা কিন্তু তাঁরা জানে, কানার মনে মনে জানার মতো। এই পরিস্থিতিকেই লোকে বলে ‘সত্য কথা বলতে বারণ’।
আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। সেই ছোট বেলা থেকেই করি। গোষ্ঠী শুদ্ধা মিলে করি। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মানুষ। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং যত দিন এই নশ্বর ধরে প্রাণ আছে ততো দিন থাকবো। কোনও শক্তি নেই এই রাস্তা থেকে আমাকে সরাতে পারে। কোনও দিন বঙ্গবন্ধুুর রাজনীতি থেকে সরে যাবো না, সরে যাবো না বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতি থেকে। দুর্দিনে ছাড়িনি আজও ছাড়বো না। এই আওয়ামী লীগের রাজনীতির লাগাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরাধীদের হাতে নাই বা গেলো কিন্তু আদর্শবিরোধীদের স্বার্থ হাসিল করতে যদি কাজে লাগে এবং প্রকারান্তরে আওয়ামী রাজনীতির প্রতি একান্ত অন্তপ্রাণ কর্মীরা উপেক্ষিত ও বঞ্চিত হয় কিংবা তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ক্ষতি করে চলে অনবরত, তা হলে বিষয়টা কেমন দঁড়ায়? মুক্তিযুদ্ধোত্তর এই দেশে যদি জামাতশিবিরের লোকেরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়ে, আওয়ামী লীগের এমপিদেরকে ম্যানেজ করে, ক্ষমতার দাপট দেখায়, তা হলে যাঁরা আওয়ামী লীগ করে তাঁরা যাবে কোথায়? এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যে ভালোবাসে, অনুসরণ করে তার তো কষ্ট হবেই। কষ্ট পেলে লোকে তো একটু কুকানিগুঙ্গানি দিতেই পারে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি যদি এমন হয়ে পড়ে যে, আওয়ামী লীগ চলবে এমন রাজনীতিক আদর্শকে অনুসরণ করে যে-রাজনীতিক নীতি আওয়ামী লীগেরই ক্ষতি করে চলবে কেবল, তা হলে একজন প্রকৃত আওয়ামী লীগারের অন্তরে তো আঘাত লাগতেই পারে। তাই বলে সে ‘আঁ উঁ’ও করতে পারবে না? না কি ‘আঁ উঁ’ করাও নিষিদ্ধ ? কিন্তু এই নিষেধ কার স্বার্থে ? আওয়ামী লীগের, না আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের, না তৃণমূলের যে-জনসাধারণ অগণিত কৃষক-শ্রমিক তাঁদের স্বার্থে? বর্তমান আওয়ামী রাজনীতির ক্ষেতে এটি একটি প্রশ্ন বটে। উত্তর অবশ্যই অওয়ামী জনতার কাছে নেতাদেরকে দিতে হবে। না দিয়ে উপায় নেই। আওয়ামী লীগ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। দলটিকে যাচ্ছেতাইভাবে চালাবেন, আর পার পেয়ে যাবেন। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।
লেখক:-
ওবায়দুর রহমান কুবাদ
রাজনীতিক
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।