প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ৬:২১:৩৭ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের ৯০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মহিলা প্রতারনার শিকার হয়ে কয়েক লক্ষ টাকার জমি খুইয়েছেন।
এবিষয়ে পরস্পর বিরোধী অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতারণার শিকার রাজনগর গ্রামের মৃত মনফর উল্লার স্ত্রী ছালেছা বিবি ও তার ছেলেদের অভিযোগ- লন্ডন প্রবাসী রুবেল মিয়া- ছালেছা বিবি’র পৈত্রিক ভূমির কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার কথা বলে সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের প্রতারক ও দালালচক্রের সহযোগীতায়
প্রতারণার মাধ্যমে রুবেল তার নিজের নামে কয়েক লাখ টাকার ভূমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন।
প্রতারণায় অভিযুক্ত রুবেল মিয়া
প্রতারণার শিকার বৃদ্ধ মহিলার ভাইপো ও তার পিতার নাম মৃতঃ মাহমদ আলীর।
এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা যায়- রুবেল বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যে থাকেন এবং মাঝে মধ্যে দেশে আসে যাওয়া করে, প্রবাসী রুবেলের বিরুদ্ধে নিজ গ্রামে কোন্দল সৃষ্টি ও মামলা মোকদ্দমা দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানিসহ একাধিক প্রতারনা ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। প্রতারক রুবেল মিয়া ও দালাল চক্রের সদস্য উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লিখক আজাদ মিয়াসহ মোট ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন প্রতারিত বৃদ্ধ ছালেছা বেগম। তবে দলিল লিখক আজাদ মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দাতা গ্রহীতার সম্মতিতে যথাযথ নিয়মে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। এখানে দালালির কোন প্রশ্নই ওঠে না।
মামলার বাদী প্রতারণার শিকার ছালেছা বেগমের সূত্রে জানা যায়, পিতা আইয়ুব আলীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীসূত্রে কয়েক লাখ টাকা মুল্যের চারা, ডোবা ও বাড়ি রকম ভূমি ওয়ারিশান সূত্রে প্রাপ্ত হন এবং ভাগ বাটোয়ারা নামা সম্পাদন পূর্বক উক্ত ভূমি ভোগদখল করে আসছেন তিনি। ছালেছার ৫ ছেলের মধ্যে ২ ছেলে যুক্তরাজ্যে প্রবাসে ও ৩ ছেলে বাড়িতেই থাকেন। ভাইপো রুবেলকে অত্যান্ত বিশ্বাস করতেন তিনি, রুবেলও তাকে খুবই আদরযত্ন করতো। বিগত প্রায় বছরখানেক পুর্বে রুবেল মিয়া রিভিশন্যাল জরিপে মাঠপর্চা ও অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক করার কথা বললে ছালেছা বেগম সরল বিশ্বাসে তাতে রাজি হন। প্রতারক রুবেল তাকে নিয়ে দিরাই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যায়, সেখানে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতায় গ্রহীতা, সাক্ষী, সনাক্তকারী ও লিখক নিযুক্ত হয়ে বৃদ্ধ মহিলাকে ভুল বুঝিয়ে দলিলে স্বাক্ষর নেয় এবং রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৃদ্ধ মহিলার অজান্তে ভূমি নিজের নামে করে নেয় প্রতারক রুবেল।
অভিযোগ অস্বীকার রুবেলেরঃ এবিষয়ে অভিযুক্ত রুবেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলছেন, প্রতারনা করার প্রশ্নই ওঠে না, ফুফুর নিজের ইচ্ছায় দলিল সম্পাদন হয়েছে।
আমি দেশে আসার পর উনার সম্মতিতে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
একাধিক গ্রামবাসী জানান ছালেছা বেগম সহজ সরল প্রকৃতির বয়োবৃদ্ধ মানুষ।
ছালেছা বেগমের দুইপুত্র লন্ডনে থাকে, উনারতো জায়গা বিক্রি করার কোন প্রয়োজন নেই।
জায়গা বিক্রি হলেতো আমাদের জানার কথা, আমরা এবিষয়ে কিছুই জানিনা।
এছাড়াও রুবেলের ফুফুর সাথে জায়গা নিয়ে ঝামেলা ছিলো ।
গত প্রায় ছয় মাস আগে এই জায়গা নিয়ে সালিশ হয়েছিল, সেসময়ে রুবেল এই জায়গা ক্রয়ের কথা একবারও বলেনি।
গত কিছুদিন আগে ছালেছা বেগম আমাদের ডেকে জানিয়েছেন, রুবেল কাগজ ঠিক করে দেয়ার কথা বলে তাকে দিরাই সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে তার জায়গা বৈঈমানী করে নিজের নামে করে নিয়েছে।
রুবেলের প্রতারণার আরেক শিকার গ্রামের মৃত সজিদ উল্লার পুৃত্র আকলুছ মিয়া বলেন, আমি মুর্খ মানুষ। সমস্যায় পড়ে রুবেলের কাছে বাড়ি বিক্রয় করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আমার বাড়ি জমি-জমা সবকিছু বিক্রি মর্মে দলিল তৈরী করে রেজিস্ট্রি করার কৌশল করে। আমার ভাই তখন ঢাকা ছিল। দলিল না পড়ে আমাকে স্বাক্ষর দিতে নিষেধ করে। এরপর আমার ভাই ঢাকা থেকে এলে রুবেলের প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়।
ছালেছা বেগমের ছেলে ছালিক মিয়া বলেন, বাড়িতে বসবাসরত আমরা তিন ভাই ও আমার মা কেইউ পড়ালেখা জানিনা। রুবেল আমার আপন মামাতো ভাই, ভূমির কাগজ ঠিক করার বললে, আমিও আমার মাকে বলি রুবেলের মাধ্যমে কাগজ ঠিক করে নিতে। বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে সে এমনটা করেছে। বিক্রিই যদি করবেন তবে দলিলে সাক্ষী হিসেবে আমাদের কারো নাম নেই কেন। তিনি নিজের বাড়ি দেখিয়ে বলেন, প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে আমরা বাড়ি নির্মাণ করেছি, বর্ষা মৌসুমে আমার মায়ের যাতায়তের জন্য ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করে নৌকা তৈরী করেছি। আমাদের পরিবার এলাকার অনেককেই সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি। তাহলে আমার মা কেন জায়গা বিক্রি করবেন।
উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার আবদুল বাতেন বলেন, এখনো এ ধরনে কোন অভিযোগ বা তদন্ত আমার হাতে আসেনি, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।