প্রতিনিধি ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১০:৩৩:১৬ অনলাইন সংস্করণ
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ- গনতন্ত্রী পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক একের পর এক বিতর্ক তৈরি করে চলেছেন! ১৯৯৬ সালে প্রথম আঃলীগের টিকিটে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে ছাতক-দোয়ারায় মূলধারার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে বিবাদে জড়িয়েছেন। এমপি হওয়ার আগে তিনি থানার চিহ্নিত দালাল ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১৫ মার্চ আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা কালাম চৌধুরী ও শামীম চৌধুরীকে মারার জন্য তার বাসায় যে বোমা বানিয়েছিলেন সেই বোমা বিস্ফোরিত হয়ে তার কর্মী বাবুল ও বোমা এক্সপার্ট আরিফ হায়দারের মৃত্যু হয়।
গুরুতর আহত হন তার মামতো ভাই আবুল লেইছ চৌধুরী, এখনো তার ক্ষতচিহ্ন বিদ্যমান। এই কথা গুলো বলায় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুটের বিরুদ্ধে মানিক এমপি নিজে মুকুট পরিবার নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য মিডিয়ায় দিয়ে এবং তার অনুসারীদের দিয়ে প্রতিবাদ মিছিল মিটিং করে বিভেদ উস্কে দিয়ে সংঘাতের রাজনীতি আবার নিয়ে এসেছেন সুনামগঞ্জে। ইতিমধ্যে দোয়ারা ও ছাতকের জাউয়া বাজারে মুকুট ও মানিক অনুসারীদের মাঝে দুদফা সংঘর্ষে বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ‘বোমা মানিক’ খ্যাত মুহিবুর রহমান মানিক এমপি প্রয়াত জাতীয় নেতা সামাদ আজাদ সম্পর্কে শালীনতা বিবর্জিত উদ্ধতপূর্ণ ও মিথ্যে বক্তব্য দিয়ে আবারও এসেছেন আলোচনায়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম হয়েছে।
এমপি মানিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রয়াত জাতীয় নেতা, বারবার নির্বাচিত এমপি আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদকে নিয়ে বলেন-
সামাদ আজাদ জীবদ্দশায় সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে হত্যা করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন- গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার এলাকার জাউয়া গ্রামের আতাউর রহমানের বাড়িতে অনুষ্ঠিত এক কর্মী সমাবেশে মানিক এই মন্তব্য করেন।
মানিক বলেন- “সামাদ সাবের মতো নেতা, তাইন আইজ দুনিয়াত নাই। যেদিন মিটিং করছইন, করিয়া কইছইন আমারে মারাইলিবার (হত্যা করার) লাগি, ইটা রব্বানী ভাইর (জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি) বরদাসত অইছে না। একজন পুলিশ অফিসারও আছলা, এএসপি, রফিকুল ইসলাম- বেচারাও নাই, মারা গেছইন। তাইন একজন জাতীয় নেতা, কিন্তু স্থানীয় নেতার হিসাবে যে সম্মান, ইটাও আছিল না।”
মানিক দাবি করেন, “নেত্রী (শেখ হাসিনা) এই বিষয়টা জানতা, আমারে যে অন্যায়ভাবে অ্যারেস্ট করা অইছে। আমারে অ্যারেস্ট করার পরের দিন নেত্রী তাইনরে (সামাদ আজাদ) ডাকিয়া নিয়ে কইছইন, চাচা, মানিক এরেস্ট অইছে, আপনে খুব খুশি! এক কাজ করেন, আপনে তো বিয়া করছইন একটা লুকাইয়া, আমি জানি। যাইন ব্যান্ড পার্টি আনিয়া সারা রাইত ঢাকাত ব্যান্ড পার্টি বাজাইন।”
প্রায় এক মিনিটের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। সেটি শেয়ার করে সামাদ আজাদকে নিয়ে করা বিভ্রান্তি ও মানহানিকর মিথ্যে মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান অনেকে।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পাভেল আহমদ দৈনিক ভাটি বাংলা ডটকম’কে টেলিফোনে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন- প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে, নিজের বাসভবনে বোমা তৈরি করতে গিয়ে ২জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মানিক গ্রেফতার হয়েছিলেন,“মানিক পাবলিসিটির জন্য জাতীয় নেতা সামাদ আজাদের উপর মিথ্যাচার করছেন। আব্দুস সামাদ আজাদ যদি সত্যিই চাইতেন তাহলে মানিক আওয়ামী লীগে যোগই দিতে পারতেন না। কারণ তখন সিলেটে কে এমপি হবেন কে মন্ত্রী হবেন তা ইশারা করতেন সামাদ আজাদ, ফরিদ গাজী-সহ সিনিয়র নেতারা। মানিক এমপি মন্ত্রীত্ব ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার আশায় আবুল তাবুল বকছেন।
এছাড়াও এমপি মানিক সুনামগঞ্জের গণমানুষের নেতা বিপুল ভোটে নির্বাচিত তৃণমূল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, লক্ষ মানুষের হ্নদয়ের স্পন্দন ও কর্মীবান্ধব নেতা আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুটের বিরুদ্ধে মিথ্যার করছেন এবং শান্ত সুনামগঞ্জে সংঘাত ও সংঘর্ষ উস্কে দিচ্ছেন।
শেখ হাসিনা আর আব্দুস সামাদের তৈরি নেতাকর্মীরা যদি ঠেলা দেয় সামলাইতে পারবেন তো মানিক এমপি ?” যোগ করেন পাভেল আহমেদ।
বক্তব্যের বিষয়ে জানতে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ফোন রিসিভ না করার কারণে।
প্রসঙ্গতঃ সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুট সংবাদ পত্রে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন- সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে বিগত দিনগুলোয় মানিক কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। তিনি কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন।
তার ভাই মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে ১ কোটি ৭৮ হাজার ২৭৬ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেছে।
নিজের অপরাধ ঢাকতে ও আওয়ামী লীগে বিভেদ সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিলের জন্য এমপি মানিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন।