প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১০:৪৪:৪৬ অনলাইন সংস্করণ
ছবি প্রতীকী
ঠাকুরগাঁও থেকে মাহমুদ আহসান হাবিব :
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানায় সরকারি অনুমােদন ছাড়া ও কোন নিয়ম – নীতি না মেনেই যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠেছে ইট ভাটা । কৃষি জমি , বসতবাড়ি , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , বনাঞ্চল ও পাকা সড়ক ঘেষেই গড়ে তােলা হয়েছে এসব ইটভাটা । ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য কেটে নেয়া হচ্ছে কৃষি জমির টপ সয়েল । ইট ভাটা নির্মাণ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন নিয়ম – নীতিও মানা হচ্ছে না । অধিকাংশ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স নেই । ফলে ইটভাটা এলাকায় কৃষি জমি এখন চরম বিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছে । ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী রুহিয়া থানায় কয়েকটি ইটভাটা থাকলেও বৈধ কাগজপত্র নেই কোনটির। যদিও রুহিয়া থানায় ৮ টি ইট ভাটা রয়েছে, এদের ১টিরও কোন পরিবেশ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স নেই । সরকারি অনুমোদন ছাড়াই গত ৫ / ১০ বছর যাবৎ মন্ডলাদাম গ্রামের মুন্সী ব্রিকস, সেনিহাড়ী গ্রামের থ্রি ব্রাদার্স ব্রিকস , ব্রদেশ্বরী গ্রামের কর্নফুলী ব্রিকস , ইটভাটা অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । কোন নিয়ম – নীতি না মেনেই কৃষি জমিতেই গড়ে তােলা হয়েছে এসব ইটভাটা । লােকালয়ের আশে – পাশে গড়ে ওঠা পরিবেশ বান্ধব এসব ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় চরমভাবে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ । ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে ভাটায় আগুন দেয়ার সময় পােড়ানাে হচ্ছে টায়ার ও জ্বালানি কাঠ । এছাড়া ইটের ভাটায় কাঁচামাল হিসেবে কৃষি জমির টপসয়েল ব্যবহারের কারণে উর্বরতা হারাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি । এসব ইটভাটায় মাটি বহনকারী যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা সড়ক । এছাড়া ট্রাক্টরের কারণে সৃষ্ট ধূলিঝড়ে চরম বিব্রতিকর ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন পথচারী ও এলাকাবাসী । তাছাড়া যানবাহন ও চালকের লাইসেন্স না থাকায় সড়ক দুঘটনাও বাড়ছে । সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ইটভাটা স্থাপনের আগে পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন করবেন সংশ্লিষ্ট মালিক । এরপর সরেজমিনে তদন্ত করে পরিবেশ অধিদফতর প্রতিবেদন দিলে জেলা প্রশাসক ইট পুড়ানাে লাইসেন্স দেবেন । কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন করেই কার্যক্রম শুরু করেছেন অধিকাংশ ইটভাটা মালিক । এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসনের কোনাে তদারকি নেই । যে কারণে দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ইটভাটার কার্যক্রম । সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে । ভূমি ব্যবহার প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের চুক্তিপত্র , কৃষি অধিদফতরের নীতিমালার কোনাে তােয়াক্কাই করা হচ্ছে না রুহিয়া থানার এসব ইটভাটায় । এতে চরম হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ , কৃষি জমি , রাস্তা – ঘাট ও বনাঞ্চল । ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ( নিয়ন্ত্রণ ) ২০১৩ – এ বলা হয়েছে – লাইসেন্স ছাড়া ইট ভাটা নির্মাণ করা যাবে না । কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুতে কৃষি জমি কেটে মাটি ব্যবহার করতে পারবে না । অনুমতি ছাড়া খাল , পুকুর , নদীর পাড় কিংবা চরাঞ্চল কেটে মাটি সংগ্রহ করতে পারবে না । এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত কোন সড়ক ইট ও মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না । কোন ধরনের কাঠ পােড়ানাে যাবে না । এমনকি মান সম্পন্ন কয়লা পােড়াতে হবে । স্থানীয় এলাকাবাসী জানান , কৃষি জমি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং হাট – বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই গড়ে তােলা হয়েছে ইটভাটা । এসব ইটভাটার কালাে ধোঁয়ায় কৃষি জমিতে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে এতে কৃষক সহ সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । রুহিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন , এই উপজেলায় অধিকাংশ ইটভাটা নিয়ম – নীতি মেনে নির্মাণ করা হয়নি । এ কারণে তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য কৃষি অধিদফতর থেকে কোন প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি । ইটভাটার কারণে কৃষি জমির অনেক ক্ষতি হচ্ছে । মন্ডলাদাম গ্রামের মুন্সী ব্রিকস ইটভাটার মালিক মোঃ মনসুর জানান , পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন করা হয়েছে । কিন্তু কেউই ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পায়নি । তবে অবৈধ ভাবে এসব ইটভাটা কিভাবে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন , প্রতিটি ইটভাটা মালিক প্রতি বছর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির মাধ্যমে প্রশাসন-সহ সবকিছু ম্যানেজ করেন ।
অবৈধ ইটভাটা গুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে কিনা প্রশ্নে, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, সারাদেশে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযান চলছে, ঠাকুরগাঁওয়ে তেমনি অভিযান চালানো হবে।