প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ৭:৫৪:৩১ অনলাইন সংস্করণ
কুলেন্দু শেখর দাস,জৈষ্ঠ্য প্রতিবেদকঃ- সুনামগঞ্জের ছাতকের দক্ষিন খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান ও এক সদস্যের দ্বন্ধের কারনে প্রায় পনেরটি হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবার উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর যাতায়াতের একমাত্র গ্রামীন রাস্তা প্রভাবশালী কয়েকটি পরিবার কর্তৃক মৎস খামার ও সীমের চাষ করে দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় ও ইউনিয়ন পরিষদ সুত্রে জানা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের জাতুয়া-পালপুর সড়কের মযার্দ গ্রামের পশ্চিম মযার্দ মসজিদ হইতে গ্রামের শেষ প্রান্ত নির্মল সুত্রধরের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১৫শত ফুট রাস্তার মাটি বরাট কাজ দেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির। তার পর ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় একই রাস্থায় আবারও মাটি ভরাট কাজ দেন তিনি। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের অর্থ হতে একই রাস্তায় মযার্দ গ্রামের পশ্চিম মযার্দ মসজিদ হইতে গ্রামের সোহেলের বাড়ী পর্যন্ত ২শত ফুট রাস্তার পাকাকরন কাজ দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম। কিন্ত পাকাকরণ কাজে ৫ ইঞ্চি ঢালাইয়ের স্থলে দায়সারা ভাবে ১-২ ইঞ্চি করা হয়েছে অভিযোগ তুলেন গ্রামবাসী।
গত ২৭ নভেম্ভর ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর গ্রামের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের নাম সোহেলের বাড়ী পর্যন্ত উল্লেখ থাকলেও মুলত তার বাড়ী পর্যন্ত যেতে আরও প্রায় ১শত ফুট পাকাকরন করতে হবে। সুহেলের বাড়ি পর্যন্ত প্রকল্পের নাম করন করা নিয়ে গ্রামবাসী অভিযোগ তুলেন।
পূর্ণরায় এই রাস্তায় পিজিবি প্রকল্পের আওতায় খলিল মিয়ার বাড়ির সামন হতে নির্মল সুত্রধরের পিতা নিরঞ্জন সুত্রধরের বাড়ি পর্যন্ত ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৮শত ২৪ টাকার কাজ দেন ইউপি চেয়ারম্যান।
হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবারের নামে একাধিকবার প্রকল্পের নামকরন করায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের ক্ষোভের শিকার হন ইউপি চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় টান-টান উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। এক পযার্য়ে ওই প্রকল্পটি অন্যত্র সরিয়ে নেন ইউপি চেয়াম্যান আব্দুল মছব্বির।
জানা যায়, মযার্দগ্রামে প্রায় পনেরটি হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবার বসবাস করে আসছে। নির্মল সুত্রধরের বাড়ির পশ্চিম-উত্তর দিকে পাশা-পাশি রয়েছে পঞ্চায়েতি কবর স্থান ও গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের শীতল পুজার স্থান এবং শশ্মান ঘাট। প্রতি বছর চৈত্র মাসে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার অনুষ্টিত হয় শীতল পূজা। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দু ধমার্লম্বীরা এতে অংশ নিয়ে থাকেন।
অভিযোগ উঠেছে গ্রামের মৃত. তৈমুছ আলী ছেলে মজম্মিল আলী রাস্তার পাশে মৎস খামার ও মধ্যখানে সীমের চাষ করে বাঁশের বেড়া দিয়ে রাস্তা সরো করেন ও সাধারন মানুষের চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে আসছেন। রাস্তার পাশে মৎস খামার করায় সামান্য বৃষ্টিতে বা বন্যার পানিতে কাছা রাস্তাটি ভেঙ্গে পুকুরে ধেবে যেতে পারে এ আশষ্কা করছেন গ্রামবাসী।
এ বিষযে মযার্দ গ্রামের নিরঞ্জন সুত্রধর, নির্মল সুত্রধর, রাজিন্দ্র বিশ্বাস, সমি রঞ্জন সুত্রধর, কৃঞ্চ রঞ্জন সুত্রধর, রুবেল সুত্রধর বলেন, গ্রামের মজম্মিল আলী আমাদের একমাত্র চলাচলের রাস্তার পাশে মৎস খামার ও রাস্তার উপরে সীমের চাষ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। শুধু প্রতিবন্ধকতাই নয় রাস্তার মধ্যখানে বাঁশের বেড়া দিয়েছেন। প্রতিবাদ করলে আমাদের অকাট্য ভাষায় গালি-গালাজ করেন। গ্রামের প্রভাবশালী দুটি পরিবারের লোকজন দিয়ে আমাদের হুমকি ধমকি দেওয়া হয়।
আজিজুর রহমান আজিজ, মুহিবুর রহমান মুইবুল, মুহিবুর রহমান, জয়নুল ইসলাম কামাল বলেন, ২শত ফুট পাকাকরন রাস্তায় অনিয়মের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন গ্রামবাসী। একটি প্রভাবশালী মহলের কাছে হিন্দু সংখ্যালঘু ১৫টি পরিবার প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না।
এ বিষয়ে সফিক মিয়া বলেন, নিরঞ্জন সুত্রধর গংদের সাথে আমাদের কোন সমস্যা নেই। তারা এক জ্ঞাতির আমরা আরেক জ্ঞাতির। রাস্তা চলাচলে যদি আমরা বাঁধা দিতাম তাহলে তারা চলাচল করতে পারতোনা। সামছুল ইসলাম বলেন, তাদের সাথে ব্যাক্তিগত কোন সমস্যা নেই। রাস্তা নিয়ে একটি সমস্যা হয়েছিল। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম ২ শত ফুট রাস্তার কাজ দিয়েছিলেন। তার পর ইউপি চেয়ারম্যান আরও ৪ শত ফুট কাজ দেন। ওই ৪ শত ফুট কাজ রইছ আলী নামে একজনের বাড়ির সামনে গিয়ে শেষ হবে। নিরঞ্জনের বাড়ি আরও ৯ শত ফুট দুরে থাকে। আমরা বলেছি ৪ শত ফুট কাজ যেখানে গিয়ে শেষ হয় সেখানকার নামে প্রকল্পের নামকরন হোক। মৎস খামারের মালিক ও সীম চাষী মজম্মিল আলীর মোঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম রাস্তার পাকাকরন কাজে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
দক্ষিন খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির বলেন, পাকাকরন কাজে অনিয়মের ঘটনায় গ্রামবাসী আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। আমি সরজমিন পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তিনি আরও বলেন প্রকল্পের নাম করন নিয়ে মযার্দ গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে প্রকল্পটি অন্যত্র সরিয়ে নেই।