প্রতিনিধি ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১০:২২:০৯ অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় কাউন্সিলের মাধমে কারা হাল ধরছেন বৃহৎ রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের। এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা রকম আলোচনা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনাই থাকছেন এটা অনেকটা নিশ্চিত দলের নেতা কর্মীরা। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন সে দিকে নজর বেশী তাদের। অন্যন্যা পদের কোন কোনটিতে পরিবর্তন আসন্ন এমনটা মনে করেন তারা। তবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে (সম্মেলনে) চমক থাকছে। একধিক পদে আসছে পরিবর্তন। এছাড়া তৃনমূল থেকে নেতা নিয়ে আসা হবে কেন্দ্রে। নারীদের আগের চাইতে দেয়া হবে বেশী পদ।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজীবন আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন; দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের এই প্রত্যাশা সর্বজন স্বীকৃত। ক্ষমতাসীন দলের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে সবার আগ্রহ সাধারণ সম্পাদক পদটি ঘিরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, এবার সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনায় আছেন আরও দুইজন; যাদের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, অপরজন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। ‘কে হচ্ছেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক’- তা আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলেই নির্ধারণ হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করছেন, এ পদে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বহাল থাকবেন। তাদের মতে, নেত্রীর ওবায়দুল কাদেরের প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশের ধারণা, এই পদে নতুন মুখ হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় থাকা সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও এবার চমক হিসেবে আসতে পারেন। যাদের একজনের রাজনৈতিক ঝুলি অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। অপেক্ষাকৃত নবীন অপরজনের রয়েছে পারিবারিক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও সাহসী রাজনীতিক’ হিসেবে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বাদ দিয়ে তৎকালীন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০তম কাউন্সিলের ৩ দিন আগে ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পদে তার বিষয়ে নেত্রী শেখ হাসিনার ‘সবুজ সংকেতের’ কথা জানিয়েছিলেন। ২১তম কাউন্সিলের আর আর ১০ দিন বাকী। তবে এখন পর্যন্ত কোন নেতা এ ধরনের ‘কোন সংকেত’ পাওয়ার কথা জানাতে পারেননি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা এবারের কাউন্সিলে একটি পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব উপহার দিতে সর্বোচ্চ সচেষ্ট। যেখানে চমক থাকবে যে নেতৃত্ব আগামী দিনে তরুণ প্রজন্মকে অসাম্প্রদায়িক ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির পথ দেখাবে। কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, এবার কাউন্সিলে কার্যনির্বাহী সংসদে ব্যাপক পরিবর্তন হবে এটা নিশ্চিত। পদোন্নতির জন্য কয়েজন চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন, তবে বেশিরভাগ নেতা নিজের পদ বহাল রাখার বিষয়ে তৎপর।
তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হওয়া, না হওয়া, সেটা আমাদের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এখতিয়ার। এ বিষয়ে একমাত্র তিনিই জানেন। সাধারণ সম্পাদক পদে তিনি পরিবর্তন নাও করতে পারেন। আবার আলোচিতদের মধ্য থেকে কিংবা বাইরে থেকেও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করে তিনি সবাইকে চমক দেখাতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আসন্ন কাউন্সিলে শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সভাপতি পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। নেত্রী শেখ হাসিনা বার বার বিদায় নিতে চান। তিনি যেতে চাইলেও ‘যেতে নাহি দেবো’, এটা কাউন্সিলরদের সর্বসম্মত চিন্তাভাবনা। অন্য যেকোন পদে পরিবর্তন হতে পারে, নেত্রী দলের স্বার্থে করতে পারেন। তিনি যা করবেন, এক বাক্যে সবাই মেনে নেবেন। এ ক্ষেত্রে কোন ক্ষোভ, দুঃখ কিংবা বেদনা নেই। সাধারণ সম্পাদক পদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নেত্রী পদে রাখবেন কিনা সেটা নেত্রীর ইচ্ছা। আমার দায়িত্ব পালনে অনীহা নেই।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে দলের কার্যনির্বাহী সংসদে অর্ধেকের বেশি পদে পরিবর্তন ও রদবদল হতে পারে। মোট ৮১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিতে সভাপতি পদটি অপরিবর্তিত থাকবে। সভাপতিমন্ডলীর ১৭টি পদ, সম্পাদকমন্ডলীর ৩৪টি পদ, কোষাধ্যক্ষের ১টি পদ এবং ২৮টি সদস্য পদ; মোট ৮০টি পদের মধ্যে ৪০টির বেশি পদে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। বাড়বে নারী প্রতিনিধিত্ব। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশপাশি রাজনীতি সচেতন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রত্যাশা, ২১তম কাউন্সিলে নতুনদের প্রাধান্য দিয়ে কার্যনির্বাহী সংসদ ঢেলে সাজানো হবে।
এবারের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে নতুন মুখের প্রাধান্য থাকার বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেন, সম্প্রতি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোতে নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। নেতৃত্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে যে শুদ্ধি অভিযান চলছে, মূল দলের সম্মেলনেও এর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া আগামী দিনে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে নতুনদের জায়গা করে দেয়ার সংস্কৃতি বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন এবং পরবর্তীতে মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। একাদশ সংসদে সরাসরি ও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে প্রায় ৯০ জন এবং ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভায়ও ৩২ জন নতুন মুখ এসেছেন। এবারের সম্মেলনেও এই ধারা বজায় থাকবে।
এবার সাধারণ সম্পাদক পদটিতে একটি নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত হতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। গত তিন দশক আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালীন দলের সাধারণ সম্পাদককে কখনও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়, কখনও বাণিজ্য, জনপ্রশাসন, যোগাযোগ কিংবা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রাখা হয়েছে। একদিকে মন্ত্রণালয়, অন্যদিকে সংগঠন; দুটোই ভালোভাবে সামলাতে ব্যাপক চাপ নিতে হয়েছে নেতাদের। এতে কখনও দল, আবার কখনও মন্ত্রণালয়ের কাজ ব্যাহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, নতুন-পুরাতন যিনিই এবার সাধারণ সম্পাদক পদে আসবেন, সংগঠনের উন্নয়ন, অগ্রগতির স্বার্থে তার মন্ত্রিত্বের চাপ লাঘব করা হবে। এবার সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় থাকা তিনজনই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। সূত্র বলছে, যিনি দলের দায়িত্ব পাবেন, তাকে মন্ত্রণালয়ের কাজ থেকে অব্যহতি দেয়া হবে, তবে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে রাখা হবে। যাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদের সুবিধাদি পায়।