প্রতিনিধি ৬ নভেম্বর ২০১৯ , ৬:২৫:৪১ অনলাইন সংস্করণ
মোঃ ওয়াসিম আলী, হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ
স্কুলটিতে সব আছে। জেলার অন্য সরকারী বা নব্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় ব্যতিক্রম শিক্ষার পরিবেশ রয়েছে। রয়েছে আধুনিক শিশু পার্ক, সাতার শেখার পুকুর । বিদ্যালয় ঘিরে রাখা হয়েছে প্রাচী দিয়ে নিরাপত্তা ব্যষ্টনীর মধ্যে দিয়ে। প্রাচীতে লেখা রয়েছে বিখ্যাত মনিষীদের উক্তি আকা রয়েছে জাতীয় ফুল ফলের ও শিশু শিক্ষার্থীদের আর্কষনীয় মিনা রাজু’র বিদ্যালয়ে যাওয়ার টিয়া পাখি সম্বলিত ছবি। নেই শুধু শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ভবন বা পাকা ঘর। আর এ বিদ্যালয়টির অবস্থান ঠাকুরগায়ের হরিপুর উপজেলা সীমান্ত ঘেষা ৩নং বকুয়া ইউনিয়নে চড় ভিটা গ্রামে। গ্রামের নামনুসারে নামকরন করা হয়েছে চড় ভিটা নব্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যার পরে এ প্রতিনিধি বিদ্যালয়ের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন এ সময় রাতের আধারে পুকুর পারে বিভিন্ন প্রকারের আলোকসজ্যা বাতির ঝলমলানি ও বিদ্যালয়ের বাহ্যিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হলেও ভাঙ্গাচড়া ঘরে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেখে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে কথা বলেন প্রধান শিক্ষক এরফান আলীর সাথে তিনি বলেন, এ বিদ্যালয়টি বে-সরকারী ছিলো বর্তমানে সরকারী হয়েছে।
আর এ পরিবেশ আমিসহ এলাকার মানুষের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রাচী এর পাশেই লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বসার জন্য কুটির চালা, খেলার জন্য শিশু র্পাক ভাল পরিবেশের জন্য ফুলের বাগান এছাড়াও পুকুরে নৌকা রয়েছে শিশুরা ইচ্ছে করলে আমাদের লোক দিয়ে নৌকাই করে পুকুরের চার পাশ ঘুরে বিনোদন করতে পারে। এ পুকুরে চাষ করা হয় হাঁস ও মাছ।
২০১৪ সাল থেকে চলে মিড-ডে মিল। গ্রামের সকল মানুষের নিকট মুষ্টি মুষ্টি চাল হাঁস ও মাছের আবাদ করে বেশিরভাগ অর্থ দেওয়া হয় এই মিড-ডে মিলের ব্যবস্থায়।
স্কুলের একটু ভিতরে গিয়ে কথা হয় প্রধান শিক্ষক এরফান আলীর সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে চাটাই বেড়া দিয়ে বানানো ভাঙ্গাচড়া অবস্থারত পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের রুমে গেলে এ প্রতিনিধিকে দেখে সালাম জানিয়ে সন্মান প্রর্দশন করে বলেন, আমাদের স্যার আমাদের জন্য খুব পরিশ্রম করেন, রাতে দিনে আমাদের কাছে পরে থাকেন, নিজের সন্তানের বেশি ভালোবাসেন আমাদের, আমরা স্যারের স্বপ্ন পুরন করতে চেষ্টা করছি, আমরা ভাঙ্গাচুড়া বেঞ্চ- টেবিল ছাড়াও মাঝে মাঝে মাটিতে বস্তা বসিয়ে ক্লাশ করছি, শ্রেণী কক্ষের অভাব দুর হলে ভবনে বসার ব্যবস্থা হবেনা ভাবতেই খুব কষ্ট লাগে । মা জননী ভবন দিলেন কিন্তু আমরা বসবো কথায় দয়া করে আমাদের বসার ব্যবস্থা করে দিন। বেঞ্চ-টেবিলের জন্য সকল শিক্ষার্থীরা এক সাথে ক্লাশ করতে পারছি না। এক বেঞ্চ-টেবিলে এক সাথে পাচ-ছয়জন করে বসি এতে খুব কষ্ট হয় আমাদের। আমরা এক ক্লাশে পড়লেও বসার ব্যবস্থা নেই বলে আলাদা ভাবে ক্লাশ করতে হচ্ছে । আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবী জানাই আমাদের বিদ্যালয়ে ভবন দিলেন দয়া করে বসার ব্যবস্থা করে দিন। এ কথাগুলো বলছিলো ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুর জাহান, তুষার আলী, মনির, সাবরিন, সহ অনেকে তারা কথাগুলো একযোগে বড় কষ্ট নিয়ে বলছিলেন।
বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, মনোমুগ্ধ কর পরিবেশ যা ঠাকুরগাও জেলায় অন্য কথাও আর এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। ৫টি শ্রেণীর বিপরীতে ৩২০ জন শিক্ষার্থী। শ্রেনী কক্ষ আধা পাকা ২টি ২টি বাশ চাটাই দিয়ে ছোট ছোট ঘর। পাশেই চলতেছে ৪ কক্ষের একটি ভবনে কাজ, এক পুরুষ শিক্ষক ও তিন নারী শিক্ষিকাসহ মোট ৪ জন শিক্ষক মন্ডলী দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি প্রায় প্রায় ৩বিঘা। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক এরফান আলী বলেন, গ্রাম পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াতে চাই না। তাই আমি নিজ উদ্যোগে স্কুলের সময় ছাড়াও সকাল- সন্ধ্যায় সকলের সহযোগিতায় শিক্ষার আধুনিক পরিবেশ নিয়ে ছেলে মেয়েদের প্রাথমিকে সু-শিক্ষা দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এমন পরিবেশ করেছি। ভবন পেয়েছি কিন্তু ভবনে সাথে বসার বেঞ্চ-টেবিল পাচ্ছি না এগুলো তৈরি করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন । তেমন অর্থ যোগাড় হলে আমরা চেষ্টা করতাম শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা চিন্তা করে বেঞ্চ-টেবিল তৈরি করে নেওয়ার। তারপরও সরকারী কিছু বিধান রয়েছে ইচ্ছে করলেই তো বড় ধরনের কাজ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ সুলতান আল রাজী বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ও পরিবেশের প্রশংসা করে বলেন, শিক্ষকদের নিজ উদ্যোগে এমন পরিবেশ সম্বনিত বিদ্যালয় আমার উপজেলায় তেমন নেই। আমরা ইতিমধ্যে ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেছি । বেঞ্চ-টেবিলের বিষয়ে আমার সঠিক জানা নেই বেঞ্চ-টেবিলের বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের কাছে আমিও শুনেছি যদি না থাকে আমরা অতিশীঘ্রই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবগত করবো কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টিতে যখন ভবন বরাদ্দ দিয়েছে আশা করি শিশু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে বসার ব্যবস্থাও করবেন ।