প্রতিনিধি ৫ নভেম্বর ২০১৯ , ৮:৩৩:৫৯ অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার॥
ময়মনসিংহে আবাদি কৃষি জমি বিনষ্ট করে চলছে সোলার পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্প স্থাপনের কাজ। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের জমি নিতে চাঁদাবাজিসহ কৃষকদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। ফলে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না নিরীহ কৃষক। এমতাবস্থায় ইচ্ছেমতো কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মাটি ফেলে জমি জবরদখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালী সোলার পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষের ভাড়া করা স্থানীয় গুন্ডা-মাস্তান বাহিনী।
বিএনপিপন্থী স্থানীয় আমিরুল ইসলাম লিটন ও তার সহযোগী বাহিনী এই জুলুম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জমি দখল বাণিজ্যে ইতোমধ্যে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছেন এই আমিরুল। এক সময়কার নিঃস্ব আমিরুল এখন চলাফেরা করেন দামী গাড়িতে। গড়েছেন অগাধ সম্পদের পাহাড়। স্থানীয় প্রশাসনও নাকি আমিরুলের কথায় চলে! ফলে এসব জুলুম অবিচারের প্রতিকার চেয়ে আবেদনের পরও স্থানীয় প্রশাসনের কোন সহায়তা মিলছে না। সবকিছু দেখে শুনে চুপ প্রশাসন! এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ এলাকার নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, স্থানীয় প্রশাসনের মদদে সোলার পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষের নিয়োগ করা একটি প্রভাবশালী গুন্ডা-মাস্তান সিন্ডিকেট এলাকার নিরীহ কৃষকদের ফসলি জমিতে মাটি ফেলে জবরদখল করে নিচ্ছে।
এই ক্ষেত্রে কোন ক্ষতিপূরণ কিংবা জমির মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে না। এত বড় একটি প্রকল্পে এই ধরনের জুলুম ও অবিচার গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন এই সংসদ সদস্য।
স্থানীয় ভাংনামারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুন নূর খোকা জানান, প্রকল্পের জন্য জমি জবর দখলের পর টাকা পরিশোধ করা হয়নি এরকম ২৩ একর জমির মালিকের আবেদন তার পরিষদে জমা পড়েছে। বিষয়টি প্রকল্পের চেয়ারম্যানকে একাধিকবার অবহিত করার পরও কোন সাড়া না মেলায় হতাশ এই ইউপি চেয়ারম্যান।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারি মৌজায় পুরনো ব্রহ্মপুত্র পাড়ে সরকারের খাস খতিয়ানের ১৫ একরসহ ১৭৪ একর জমিতে চলছে এইচডিএফসি সিন পাওয়ার লিমিটেড নামে ‘সুতিয়াখালি ৫০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট’ স্থাপনের কাজ।
মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের ব্যক্তি মালিকানার যৌথ বিনিয়োগে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গত ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই কাজ চলতি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এই সোলার পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদিত বিদ্যুত যোগ হবে জাতীয় গ্রীডে-এমনটাই জানিয়েছেন প্রকল্পের চেয়ারম্যান।
চায়না ফুজিয়ান ইয়োংফা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পের কাজ তদারকিসহ প্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জমিতে মাটি ভরাটের কাজ, রাস্তার উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীরের জন্য কাঁটা তারের বেড়া তৈরি, ভৌত অবকাঠামোসহ সোলার প্যানেল বসানোর বেসমেন্ট তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
আগামী বছরের গোড়াতে উৎপাদনে যেতে এখন কাজ চলছে ঝড়োগতিতে। যদিও স্থানীয়দের সাঙ্গ জমি নিয়ে বিরোধের এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি। উল্টো স্থানীয়দের সঙ্গে পাওনা নিয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের মতবিরোধ চরমে উঠেছে। উদ্ভব ঘটেছে একাধিক মামলা মোকাদ্দমার। জমির মালিকানার মামলা নিয়ে প্রকল্প স্থাপনের কাজ যে কোন সময় ঝুলে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও প্রকল্পের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্থানীয়দের সঙ্গে বসে জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু প্রকল্পের চেয়ারম্যানের এই ধরনের কথায় আস্থা নেই স্থানীয়দের। ফলে ন্যায্য পাওনাসহ মালিকানা থেকে বঞ্চিত অর্ধশত কৃষক ইতোমধ্যে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন কর্মসূচীর কথা ভাবছেন।
সূত্রঃ- জনকণ্ঠ