• সুনামগঞ্জ

    সুনামগঞ্জের ৫ টি আসন; নিরব ভোটাররাই ‘টেনশন’

      প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ , ১০:৫১:৩৮ অনলাইন সংস্করণ

    ???????????????????????

    বিশেষ প্রতিনিধি
    সুনামগঞ্জের ৫ টি নির্বাচনী আসনের ভোটের হালচাল নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন পেশাজীবীরাও। সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন ভোটারদের মতে জেলার ১ টি আসন ছাড়া অন্য আসনগুলোয় ভোটের ফলাফল কী হবে, তা ভোটের আগে বলা কঠিন। পেশাজীবীদের মতে এবার অন্য যেকোন সময়ের নির্বাচনের চেয়ে নিরব ভোটার বেশি। নিরব ভোটাররাই জয়ের পাল্লা ভারী করবেন। অর্থাৎ নিরব ভোটারাই এবার ‘টেনশন’ এর কারণ। অবশ্য. ৫ টি আসনেই প্রচারণায় আওয়ামী লীগ বা মহাজোট প্রার্থীরাই এগিয়ে।
    সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুর) আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫৯। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ প্রার্থী। এরমধ্যে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণাই চোখে পড়ার মতো। অন্যদের নিয়ে আলোচনা নেই ভোটারদের মধ্যে।
    এই আসনের তাহিরপুরের শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোদাচ্ছের আলম সুবল মনে করেন- তাহিরপুরের বালিজুরি, বাদাঘাট ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন ছাড়া নির্বাচনী এলাকার সকল ইউনিয়নেই বেশি ভোট পাবেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।
    জামালগঞ্জের আলাউদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌফিকুল ইসলাম বলেন,‘বিএনপি প্রার্থী নজির হোসেন যেখানে যান মানুষের উপস্থিতি বেশি হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রচারণা বেশি। এজন্য কে কোথায় কত ভোট পাবেন, তা আগে বলা কঠিন।’ ধর্মপাশার গাছতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফুর রহমান বলেন,‘প্রচার প্রচারণায় সাধারণেরা নেই। দলীয় সক্রিয়রাই প্রচারণায় রয়েছেন। এজন্যই অগ্রিম কিছু বলা কঠিন।’
    সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৫০ হাজার ৭২১। এই আসনে ৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর বাইরে সিপিবি’র প্রার্থী দিরাই কলেজের সাবেক ভিপি নিরঞ্জন দাস খোকনের পোস্টার রয়েছে কোন কোন এলাকায়।
    এই আসনের ভোটার দিরাই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মিহির কান্তি দাস বলেন,‘দিরাই-শাল্লার ৭ বারের এমপি প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে ছিলেন, সকল সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তাও সে পথেই হাঁটছেন। এবার তাঁর বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণাও কম। কোন ইজমও এবার আমলে নিচ্ছে না মানুষ। এজন্যই বলা যায়, নির্বাচনে তাঁর অবস্থা খারাপ নয়।’
    দিরাই কলেজের প্রভাষক সন্দিপন দাস বলেন,‘আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. জয়া সেন গুপ্তা সৎ, ভদ্র, বিনয়ী, কিন্তু দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না তিনি। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী নাছির উদ্দিন চৌধুরী যে কোন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সাধারণ জনগণের জন্য ২৪ ঘণ্টা তাঁর (নাছির উদ্দিন চৌধুরী’র) দরজা খোলা থাকে।’ এই আসনে কে বেশি ভোট পাবেন তা ভোটের আগে এবার বলা যাবে না।’
    সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৯২ হাজার ৪৭১। এখানে নির্বাচনে লড়ছেন ৬ প্রার্থী। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়ত ওলামায়ের ইসলামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শাহিনুর পাশার প্রচারণা আছে সকল এলাকায়ই। এই আসনে আগে থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী। বিগত জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল ছিল। বিদ্রোহী প্রার্থীও ছিলেন প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ সামাদ আজাদ’এর ছেলে আজিজুস সামাদ ডন। এবার দলীয় প্রার্থী এমএ মান্নানের পক্ষে একাট্টা আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে শাহীনুর পাশা নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলাতেই বিএনপিকে সক্রিয় করতে পারেননি।
    দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আতাউর রহমান বলেন,‘সৎ, ভদ্র, বিনয়ী উন্নয়নপ্রেমী আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমএ মান্নানের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা সম্ভব হবে না শাহিনুর পাশা’র। এই আসনের সকল দল মতের ভোটাররা এমএ মান্নান’এর উন্নয়ন কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। তাঁর সময়কালে যত উন্নয়ন হয়েছে, এর আগে কখনোই তা হয়নি।’
    সুনামগঞ্জ-৪ (সদর উত্তর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৮৯ হাজার ৩০। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৭ প্রার্থীর মধ্যে গণসংযোগ ও প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা জাপার আহ্বায়ক পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ফজলুল হক আছপিয়া।
    এই আসনের বিশ্বম্ভরপুরের পদ্মনগরের ব্যবসায়ী বদরুদ্দোজা বলেন,‘বিশ্বম্ভরপুরে লাঙ্গলের আওয়াজ বেশি। মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই থাকবে।’
    দুর্গাপুরের ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন,‘ কেউ মুখ খুলছেন না, মানুষ নীরব, এজন্য ভোটের আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
    সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক- দোয়ারা) আসনে মোট ভোটার চার লাখ ১৫ হাজার ৯৫৪ জন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ৭ জন থাকলেও আলোচনা আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক এবং বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে নিয়েই।
    ছাতক প্রেসক্লাবের সভাপতি হরুন অর রশিদ বলেন,‘ছাতক-দোয়ারায় সার্বিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী’র অবস্থাই ভালো। মুহিবুর রহমান মানিক’এর এখানে আছে ‘মানিক লীগ’ যারা তাঁর অন্ধভক্ত। আওয়ামী লীগকেও শক্তিশালী করেছেন তিনি। ১৯৯১’এর নির্বাচনে ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হয়েছিলেন মানিক, আওয়ামী লীগের অনেকে বিরোধিতা করার পরেও তিনি ৮৩ হাজার ৫০০ ভোট পেয়েছিলেন। এবার মানিকের নিজস্ব ইমেজ’র সঙ্গে ছাতক-দোয়ারার ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের ভোট তাঁর বিজয় নিশ্চিত করবে। এছাড়া ছাতক-দোয়ারার ৯৫ ভাগ পরিবারের ঘরে তাঁর প্রচেষ্টায় পল্লী বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। অন্যান্য উন্নয়ন কর্মযজ্ঞও চোখে পড়ার মতো।’
    ছাতক ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ শামছুল ইসলাম তালুকদার বলেন,‘মুহিবুর রহমান মানিক দীর্ঘদিন ধরে এমপি, তাঁর পরিবর্তন চায় মানুষ। পরিবর্তনের জন্যই এবার মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ধানের শীষে ভোট দেবে মানুষ।’

    আরও খবর

    Sponsered content